সিডনী শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন ১৪৩১


নতুন আইন; সীমানা নির্ধারণ ছাড়াই সংসদ নির্বাচন


প্রকাশিত:
৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২০:৪৫

আপডেট:
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:২১

 

প্রভাত ফেরী: ‘জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ বিল-২০২১’ সংসদে পাশ হয়েছে। এতে নির্বাচন কমিশনকে আইনের অধীনে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

গত ৩ জুলাই আইনমন্ত্রী বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন। পরে তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

শনিবার আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বিলটি জাতীয় সংসদে পাশের প্রস্তাব করলে এটি কণ্ঠভোটে পাশ হয়। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বিলের উপর সংসদ সদস্যদের দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করেন।

সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিলে রায় অনুযায়ী সামরিক সরকারের অধীনে জারি করা আইনের বৈধতা দিতে এবং বাংলায় আইন করতেই মূলত বিলটি পাশ হয়েছে। তবে সামরিক সরকারের আমলে জারি হওয়া ‘দ্য ডিলিমিটেশন অব কন্সটিটিউয়েন্সিস অর্ডিনেন্সের’ সংশোধন করতে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবগুলো আমলে নেওয়া হয়নি। এই আইন কার্যকর হলে ১৯৭৬ সালের ওই ‘অর্ডিনেন্স’ রহিত হবে।

বিদ্যমান আইনের আটটি ধারার স্থলে নতুন আইনে নয়টি ধারা থাকছে। নতুন ধারাটিতে নির্বাচন কমিশনকে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা বিদ্যমান আইনে নেই। আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে নতুন আইনে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদে উল্লিখিত সংখ্যক সংসদ সদস্য নির্বাচিত করতে পুরো দেশকে উক্ত সংখ্যক একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকায় ভাগ করা হবে। এ ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অখণ্ডতা

বজায় রাখা এবং আদমশুমারির ভিত্তিতে যতদূর সম্ভব বাস্তবভিত্তিক বণ্টনের কথা বলা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘এটি আইনে পরিণত হলে জাতীয় সংসদের একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ কাজ সুচারুরূপে সম্পাদন করা সম্ভব হবে।’

বিলে বিদ্যমান আইনের ৮ নম্বর ধারায় একটি উপধারা যুক্ত করা হয়। সেখানে বলা আছে, দৈব-দুর্বিপাকে বা অন্য কোনো কারণে আঞ্চলিক সীমানা নির্ধারণ করা না গেলে বিদ্যমান সীমানার আলোকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বে বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নিয়ে বিদ্যমান আইনগুলোর সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। একাদশ জাতীয় সংসদের আগে নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইনটিও সংস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু সেটা না হওয়ায় বিদ্যমান আইনেই সীমানা পুনর্বিন্যাস করে ওই নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়। পরে ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর আইনটির খসড়া চূড়ান্ত করে সরকারের কাছে পাঠায় ইসি। তারা জনসংখ্যা কোটার ভিত্তিতে আসন বণ্টনের সঙ্গে ভোটার সংখ্যা ?যুক্ত করার প্রস্তাব করেছিল। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন, বড় বড় শহরের ও পল্লি এলাকার ভারসাম্য রক্ষার কথাও বলা হয়েছিল ইসির প্রস্তাবে।

সংবিধান ও সীমানা নির্ধারণ আইন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সংবিধানের ১১৯(গ) অনুচ্ছেদে ইসিকে সংসদে নির্বাচনের জন্য নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে। ১২৪ অনুচ্ছেদে ইসিকে আইনের দ্বারা নির্বাচনি এলাকার সীমা নির্ধারণ করতে বলা হয়। সেই আইন ছিল না বলে ‘সংসদ নির্বাচন এলাকা সীমানা নির্ধারণ বিধান অধ্যাদেশ-১৯৭৬’ জারি করা হয়। এর পর থেকেই এই অধ্যাদেশের বলে সংসদ নির্বাচনের সীমানা পুনর্বিন্যাস হয়ে আসছে। নতুন আইন হলে এর বিধান মেনে এসব কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

বিলের ৭ ধারায় বলা হয়েছে, ইসির সীমানা নির্ধারণের বিষয় নিয়ে দেশের কোনো আদালত বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন তোলা যাবে না।

বিল নিয়ে আলোচনা: বিলটি জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাবের সময় বিএনপির হারুনুর রশীদ বিলটির উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে আইনমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। সামরিক আমলের জারি করা আইনগুলোর নতুন করে প্রণয়নের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরায় আপত্তি জানান তিনি।

পরে জবাব দিতে গিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, তারা একশটা খারাপ কাজ করবে, আমরা বলতে পারব না। এখান থেকে ৫০০ বছর পর কোনো সংসদ সদস্য যেন আইনটি কেন করা হয়েছে, সেটা জানতে পারে, সেজন্য এখানে ইতিহাসটা রাখা আছে।

জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, মানুষ এখন ভোট দিতে যাচ্ছে না। মানুষ যদি ভোট কেন্দ্রে না যায় তাহলে ইলেকশন কমিশন বা এই আইন দিয়ে কী হবে? ইলেকশন কমিশনের এত ক্ষমতা কিন্তু মানুষ ভোট কেন্দ্রে যেতে আগ্রহী নয় কেন? দেশে ‘গণতন্ত্রবিহীন’ অবস্থা চলছে দাবি করে তিনি বলেন, সরকারি দল ক্ষমতাশালী হচ্ছে। বিরোধী দল দুর্বল হচ্ছে। সংবিধানে ভালো ভালো কথা আনলে হয় না, চর্চা করতে হয়।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top