ফাঁকা চেক দিয়ে প্রতারণা করাই ছিলো তার পেশা
প্রকাশিত:
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২১:৩০
আপডেট:
১৪ মার্চ ২০২৫ ১৮:৩৫

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: প্রথমে ব্যবসার ভাব জমাতেন। তারপর পণ্য নিয়ে কিছু টাকাও দিতেন। এরপর একের পর এক পণ্য নিয়ে সেগুলো বিক্রি করতেন। বকেয়া টাকা চাইলে বুঝিয়ে দিতেন একটি ফাঁকা চেক। পরে দেখা যেত সেই চেক ডিজওনার। এভাবেই তিনি বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে ধোঁকা দিয়ে ২৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতারক মশিউর রহমান।
তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায়। থাকেন রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায়। শুধু চেক দিয়ে প্রতারণাই নয়, এই মশিউর জাল টাকা ও ডলার ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত। মশিউরের মাধ্যমে চাল, আলু, ইলেক্ট্রনিক্স ও হার্ডওয়ার ব্যবসায়ীরা প্রতারিত হয়েছেন। সবুজবাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (পূর্ব) একটি টিম। এ সময় তার কাছ থেকে ৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকার জাল নোট এবং ছয় হাজার মার্কিন ডলার জব্দ করা হয়। এই মশিউরের নামে ঢাকার বিভিন্ন থানায় ১২টি প্রতারণা ও চেক জালিয়াতি মামলা রয়েছে। তবে তাকে গ্রেফতারের খবর পেয়ে অনেকে ভিড় জমান ডিবির মিন্টোর রোডের কার্যালয়ে। তাকে দুদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ডিবি জানায়, মশিউর এতটাই পাকা প্রতারক যে তিনি প্রতারণার জন্য আলিশান অফিস ও হোটেল ভাড়া নেন। দামি গাড়িতেও চড়েন। এরপর ভাব জমিয়ে চুক্তিও করেন। সেই চুক্তি অনুযায়ী কেউ পণ্য সরবরাহ করলেই তার পণ্য তিনি গায়েব করে লাপাত্তা হয়ে যান। গত ২৫ বছর ধরেই মশিউর এভাবে প্রতারণা করে আসছে।
ডিবি জানায়, মশিউর একজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৪২টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র নেন। কিন্তু পণ্যগুলো নেওয়ার পর থেকেই ব্যবসায়ীকে পণ্যের দাম না দিয়ে ঘোরাতে থাকেন। এক পর্যায় তিনি একটি ফাঁকা চেকও দেন। পরে দেখা যায় ওই চেকে তার অ্যাকাউন্টে কোনো টাকাই নেই।
অন্যদিকে বেঙ্গল লিনেক্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ৫৩ লাখ টাকার জিনিসপত্র কেনেন মশিউর। এরপর টাকা দিতে টালবাহানা শুরু করেন। বাধ্য হয়ে ওই কোম্পানি তার গোডাউন থেকে বাকি মালামাল নিয়ে আসে। কিন্তু ততক্ষণে তিনি ২৩ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, মশিউর একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে ৬৫ লাখ টাকার চালও কিনেছিলেন। এর জন্য তিনি অন্যজনের কাছে ৫০ লাখ টাকা ধারও নেন। এই ব্যক্তিরা টাকা চাইলে মশিউর তাদের চেক ধরিয়ে দেন। কিন্তু তারা ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারেন তার হিসেবে কোনো টাকা নেই।
খিলগাঁও অঞ্চলের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহিদুর রহমান জানান, মশিউর দীর্ঘদিন ধরেই এই ব্যবসা করে আসছিল। তিনি প্রতারণার জন্য তার নামে উত্তরা, বনানী, নিকুঞ্জ, শান্তিনগর ও পল্টনে বিভিন্ন সময়ে কার্যালয় খুলেছিলেন। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন জড়িত। তাদেরও ধরার চেষ্টা চলছে।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: