জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
প্রকাশিত:
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৬:৪৮
আপডেট:
১৪ মার্চ ২০২৫ ১৮:৫৬

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ফটক ঘেষে গড়ে ওঠে বিভিন্ন ধরনের অবৈধ স্থাপনা নামেমাত্র উচ্ছেদ হলেও ৪০ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে এবার তা সম্পূর্নরুপে উচ্ছেদ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের দাবীর মুখে মঙ্গলবার পুলিশ লালবাগ ডিভিশন, ট্রাফিক দক্ষিণ ও কোতয়ালি থানার সহযোগিতায় এসব অবৈধ স্থাপনা সম্পূর্নরুপে উচ্ছেদ করা হয়। এ অভিযান পরিচালনা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল।
এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় ফটকে অবৈধ লেগুনা স্ট্যান্ড উচ্ছেদের মাধ্যমে এই অভিযান কার্যক্রম শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, গত রোববার মালিকদের অবৈধ স্থাপনা উঠিয়ে নিতে মৌখিক ও লিখিতভাবে বলা হয়। মঙ্গলবার ওই সব দোকান ও অবৈধ স্থাপনা সম্পূর্নভাবে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এর আগে পুলিশ লালবাগ ডিভিশন, ট্রাফিক দক্ষিণ ও কোতয়ালি থানায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে আমরা চিঠি দেই এবং তাদের সাথে আমাদের বৈঠক হয়।
প্রক্টর আরো বলেন, উচ্ছেদ স্থানে এখন সৌন্দর্য্যবর্ধন করা হবে।চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা এ কাজ করবেন বলেও জানান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যত ধরনের সহযোগিতা লাগবে তা আমরা করবো। শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে চলাফেরা নিশ্চিত করতে যা যা করা দরকার আমরা তা করবো। ভবিষ্যতেও যাতে এসকল জায়গায় আর কোন অবৈধ স্থাপনা গড়ে না উঠে সে ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিস্ট বিভাগে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৮ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ) দ্বিতীয় ফটক বন্ধ করে টেম্পু স্টেশন গড়ে ওঠে।
এরপর ২০০২ সালে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের নেতাদের প্রত্যক্ষ মদদে ফটক বন্ধ করে ‘বাহাদুর শাহ পরিবহণ’ নাম দিয়ে লেগুনা স্ট্যান্ড হিসেবে দখল করে। এর পাশাপাশি ফটকের পাশ ঘেষে গড়ে উঠে সেলুন, ভাতের হোটেল, ঘড়ির দোকান, চা দোকান ও ঘোড়ার গাড়ির স্ট্যান্ডসহ প্রায় অর্ধশতাধিক স্থাপনা। যা থেকে স্থানীয় ছাত্রনেতা ও পুলিশ প্রশাসন প্রতিমাসে বড় অঙ্কের চাঁদা নিতো বলে অভিযোগ আছে।
২০০৫ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় রুপান্তরিত হওয়ার আগে ও পরে বেশ কয়েকবার এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পরিকল্পনা করা হলেও ক্ষমতার দাপট ও বিভিন্ন দিক ম্যানেজ করে মালিক সমিতির লোকজন টিকিয়ে রাখে। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী তিথি সরকার বলেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর আমরা শিক্ষার্থীরা এক হয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে এই ফটকটি উন্মুক্ত করে দেই। ফটকটির সামনে কোন স্থাপনা না থাকায় এখন শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে, বাইরে থেকে আমাদের ফটকটি স্পষ্ট দেখা যায় বলে ভালো লাগে। এখন আমরা পরিশ্রম করে শিক্ষার্থীদের থেকে টাকা তুলে নিজেদের অর্থায়নে দেয়ালে আল্পনা অঙ্কণসহ সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ হতে এখানে বসার জন্য কিছু সিটের ব্যবস্থা করে দিলে পরিবেশটা আরও সুন্দর হতো। এবিষয়ে কোতয়ালি থানার ওসি শাহিদুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার সকালে ডিসি ট্রাফিক দক্ষিণ, ডিসি লালবাগ ও কোতয়ালি থানার সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ব্যাপারে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আমরা এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করি। এখন থেকে নিয়মিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালানো হবে।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: