শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ


প্রকাশিত:
১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ২১:৪০

আপডেট:
১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:০৩

ফাইল ছবি

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ। এই দিনটি বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি বেদনাদায়ক দিন। ১৪ ডিসেম্বরের হত্যাকান্ড ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম এক বর্বর ঘটনা। এ ঘটনা বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষকে স্তম্ভিত করেছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় যখন নিশ্চিত, ঠিক তখনই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের রাতের আঁধারে নির্মমভাবে হত্যা করে। উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতা লাভ করতে যাওয়া বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করে ফেলা। বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ঠিক দু’দিন পর ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। এই সব শহীদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ রেখে ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয়।

পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের পর হত্যাকারীরা ঢাকার রায়েরবাজার ও মিরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের মরদেহ ফেলে রেখে যায়। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পরপরই কারও কারও নিকট আত্মীয় বধ্যভূমিতে স্বজনদের মরদেহ খুঁজে পান। পরে ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সরকার এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার স্থানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়।

দিবসটি যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালনের জন্য সরকার ইতোমধ্যে বেশ কিছু কর্মসূচি নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অপর্ণ। গার্ড অব অনার প্রদান, দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরতে জেলা থেকে উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের জন্য ইতোমধ্যে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আগত ব্যক্তি বা সংগঠন যেন নিয়মতান্ত্রিকভাবে শ্রদ্ধা জানাতে পারে সে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী প্রদান করেছেন।

দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি এক বাণীতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘জাতির বিবেক হিসেবে খ্যাত আমাদের বুদ্ধিজীবীরা ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি, যুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারকে পরামর্শ প্রদানসহ বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনা দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিতে বিপুল অবদান রাখেন। কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য, বিজয়ের প্রাক্কালে হানাদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে এ দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে। জাতির জন্য এ এক অপূরণীয় ক্ষতি।

দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৪ ডিসেম্বর দেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কময় দিন। মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ও তাদের দোসররা পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে নামে। তারা বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। স্বাধীনতাবিরোধীরা এই পরিকল্পিত নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়। বাংলাদেশ যাতে আর কখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, সেটাই ছিল এ হত্যাযজ্ঞের মূল লক্ষ্য।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল ৬টা ৫৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুরস্থ শীহদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি সকাল ৭টায় পুষ্পস্তবক অপর্ণ করবেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনী গার্ড অব অনার প্রদান করবেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী শহিদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সকাল ৭টা ২২ মিনিটে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সকাল সাড়ে ৮টায় স্মৃতিসৌধ সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

এদিকে, মিরপুরস্থ শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের পুকুর ও দুইজন বীর শ্রেষ্ঠের সমাধি সংস্কারসহ অন্যান্য শহিদ বুদ্ধিজীবীদের নাম ফলক স্থাপন ও কবর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। দিবসটি পালনের জন্য মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ও রায়ের বাজার বধ্যভূমির নিরাপত্তার বিষয়টি সবোর্চ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

দিবসটি যথাযথ ভাব গাম্ভীর্যের সঙ্গে পালনের জন্য অনুষ্ঠান স্থানে লাউড স্পিকার বা শব্দ যন্ত্র ব্যবহার না করার ব্যাপারে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top