দেশের সুনাম ও মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য কাজ করুন: নৌবাহিনীর প্রতি প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিত:
২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ২১:৫৭
আপডেট:
২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৮:৫০

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌবাহিনীর কর্মকর্তাদের দেশের সুনাম ও মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য সততা, নিষ্ঠা এবং একাগ্রতার সঙ্গে ত্যাগের মনোভাব নিয়ে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আপনারা যারা কঠোর প্রশিক্ষণের পর কাজে যোগ দেবেন তাদের সব সময় মনে রাখতে হবে, আত্মত্যাগের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে সততা, নিষ্ঠা এবং একাগ্রতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আপনারা দেশের মান-সম্মান আরও উজ্জ্বল করবেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সকালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী একাডেমিতে ‘মিডশিপম্যান-২০১৭ আলফা’ এবং ‘ডিরেক্ট এন্ট্রি অফিসার-২০১৯ ব্রাভো’ ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী উপলক্ষে বিদায়ি ক্যাডেটদের রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ, ২০১৯ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন।
আমাদের সমুদ্রসীমায় থাকা সম্পদের প্রসঙ্গ টেনে একে কাজে লাগানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের সমুদ্রসীমায় রয়েছে অপার সম্ভাবনা। এই সমুদ্র সম্পদকে দেশের অর্থনীতিতে আমাদের কাজে লাগাতে হবে।’ এর আগে প্রধানমন্ত্রী কোর্স সম্পন্ন করে কমিশন লাভকারী ৭২ জন নবীন কর্মকর্তার মধ্য থেকে কৃতিত্বের অধিকারী কর্মকর্তাদের মাঝে বিভিন্ন পুরস্কার বিতরণ করেন। পাসিং আউট কর্মকর্তাদের মধ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২০১৭/এ ব্যাচের ৬১ জন মিডশিপম্যান এবং ২০১৯/বি ব্যাচের ১১ জন ডিরেক্ট এন্ট্রি অফিসার রয়েছেন। যার মধ্যে ৭ জন মহিলা এবং ২ জন মালদ্বীপের কর্মকর্তা রয়েছেন।
মিডশিপম্যান ২০১৭/এ ব্যাচের রাইয়ান রহমান সব বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জন করে সেরা চৌকস মিডশিপম্যান হিসেবে ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করেন।
এ ছাড়া মিডশিপম্যান মো. সাইদিস সাকলাইন মিরান প্রশিক্ষণে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মান অর্জনকারী হিসেবে ‘নৌ স্বর্ণপদক’ এবং ডিরেক্ট এন্ট্রি অফিসার ২০১৯/বি ব্যাচ থেকে অ্যাক্টিং সাব-লেফটেন্যান্ট মো. কামরুজ্জামান শ্রেষ্ঠ ফলাফল অর্জনকারী হিসেবে ‘বীরশ্রেষ্ঠ রহুল আমিন স্বর্ণপদক’ লাভ করেন।
প্রধানমন্ত্রী নবীন কর্মকর্তাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘দেশমাতৃকার নিরাপত্তা রক্ষার্থে আপনারাই হবেন এই নৌবাহিনীর ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশক।’
তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, ভ‚মিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মাদ সুবিদ আলী ভূইয়া এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল অন্যদের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, পিএমও সচিব সাজ্জাদুল হাসান, প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তারাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই নৌবাহিনীকে একটি যুগোপযোগী ও অত্যাধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সে সময় তার সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহ এবং বিদ্যমান জাহাজসমূহের অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে করে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘সে সময় জাতির পিতার প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করে এর বাস্তবায়ন শুরু করি।’ সেই থেকে একটানা তিনবার সরকার গঠনের ফলে তার সরকারের উদ্যোগে এখন পর্যন্ত নৌবাহিনীতে মোট ২৭টি যুদ্ধজাহাজ, দক্ষ কমান্ডো ও উদ্ধারকারী দল তথা ‘স্পেশাল ওয়ারফেয়ার ডাইভিং অ্যান্ড স্যালভেজ কমান্ড’ এবং নৌবাহিনীর বৈমানিক দল বা অ্যাভিয়েশন উইং সৃষ্টি করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ২০১৭ সালে নৌবহরে ২টি অত্যাধুনিক সাবমেরিন সংযোজন করার ফলে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি পূর্ণ ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীতে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়, আঞ্চলিক ভ‚-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায়, নৌবাহিনীতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে আমাদের সরকার এ বাহিনীর উত্তরোত্তর উন্নতি সাধন করে যাচ্ছে।’ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দক্ষ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড ৫টি প্যাট্রোল ক্রাফট ও ২টি লার্জ প্যাট্রোল ক্রাফট নির্মাণের মাধ্যমে দেশে যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে। সেখানে আরও ৫টি প্যাট্রোল ক্রাফট নির্মাণকাজ চলমান আছে।
তিনি বলেন, নৌবাহিনীর বৃহৎ দুটি ঘাঁটি বানৌজা শেরেবাংলা এবং সাব-মেরিন ঘাঁটি বানৌজা শেখ হাসিনার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে এবং নৌ সেনা ও নাবিকদের প্রশিক্ষণ ও জীবনমানের উন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা নৌ অঞ্চলে মোট ২২টি বহুতল ভবন ও সাভারে নৌবাহিনীর টাউনশিপ প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে।
পরে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ নেভাল একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি গাছের চারা রোপণ করেন। তিনি ক্যাডেটদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষা সমাপনী কেক কাটেন এবং নব্য কমিশন লাভকারী ক্যাডেটদের ‘অ্যাপলেট’ পরিধান অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তাদের সঙ্গে ফটোসেশনে ও অংশগ্রহণ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী পরে দূরবীণ দিয়ে নেভাল একাডেমির পাশে বঙ্গোপসাগরে নোঙর করে রাখা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ প্রত্যক্ষ করেন। এ সময় এ জাহাজ সম্পর্কে তাকে অবহিত করা হয়।
সূত্র: বাসস
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: