কবিতার বই, চিঠি এবং একটি লাল গোলাপ : শাহানারা পারভীন শিখা
প্রকাশিত:
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০২:৩০
আপডেট:
১৪ মার্চ ২০২৫ ২২:৪২

বইয়ের আলমারির নীচের তাকে
পুরোনো হয়ে যাওয়া বইগুলো
বড্ড চোখে পড়ে।
নতুন বইয়ের সাথে একটু বেমানানই লাগে।
বইগুলো সরিয়ে দিতে, বের করে রাখি পাশে।
পূর্ণেন্দু পত্রীর বেশ পুরনো হয়ে যাওয়া
একখানা কবিতার বইয়ে চোখটা যেয়ে পড়ে।
বেশ পুরনো।
মলাট টাও কেমন হলদেটে হয়ে গেছে।
সরিয়ে রাখতে যেয়ে, টুপ করে একটা কাগজ মেঝেতে পড়ে।
বহুদিন আগেরই হবে।
কৌতূহলে কাগজটা খুলতেই ঝুপঝুপ করে কখানা ফুলের পাপড়ি নীচে পড়ে।
হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকি সেদিকে।
একসময় সেগুলো আর পুরনো থাকেনা আমার কাছে।
একদম ঝকঝকে নতুনের মতো লাগে।
বইয়ের মাঝে একটা চিঠি আর টকটকে লাল গোলাপ আছে।
চিঠিটা পড়া শেষে,
গোলাপ সহ হয়তো রেখেছি প্রিয় বইটার ভাঁজে।
কবিতার প্রেমিক আমি।
মাঝে মাঝে তাই খুলে পড়তাম কবিতার বইখানি ।
সাথে সেই ভালোবাসার আবেগে লেখা চিঠিটা
আর ছুঁয়ে দেখতাম রক্ত গোলাপ ফুলটা।
একসময় ফুলটা শুকিয়ে কাগজের সাথে লেপ্টে থাকে।
সময়ের সাথে সাথে অনেক নতুন বইয়ের ভীড়ে
সেই বইয়ের ঠাঁই হয় নতুন বইগুলোর পিছে।
মোবাইলটা বের করে ঝটপট কখানা ছবি নিই তুলে,
বই, চিঠি আর কালচে হয়ে যাওয়া
গোলাপ পাপড়ির।
পাঠিয়ে দিই ওর হোয়াটসঅ্যাপে।
একটু পরেই টুং করে একটা শব্দ কানে আসে।
বই গোছানোর কাজ রেখে সেলফোনটায় চোখ রাখি।
"এতো বছরেও আগলে রেখেছো দেখি।
রঙ একটু বদলে গেছে সময়ের সাথে সাথে।"'
"ঠিক আমাদের মতো "!
একটু অভিমান নিয়েই লিখি।
অফিস থেকে ফিরে আমার হাতে
একটা টকটকে লাল গোলাপ ধরিয়ে দিয়ে বলে,
"এটা আবার রেখে দাও ঐ পুরনো চিঠির ভাঁজে।
নতুন করে সুবাস দেবে।
আমাদের ভালোবাসা এখনো হয়নি ফিঁকে।
সময়ের সাথে সাথে রঙটা হয়তো বদলে গেছে।
কিন্তু আজও প্রাণ আছে এতে।"
আমি সযত্নে হলদে হওয়া চিঠির ভাঁজে
রেখে দিই সতেজ গোলাপ টাকে।
বইটাকে নতুন বইয়ের পাশে দিই রেখে
পরম মমতায় জড়িয়ে।
শাহানারা পারভীন শিখা
কবি ও লেখক
বিষয়: শাহানারা পারভীন শিখা
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: