পবিত্র মাহে রমজান মাসের বিশেষ ইবাদত ও তাৎপর্য্য : শাহান আরা জাকির পারুল 


প্রকাশিত:
৪ এপ্রিল ২০২২ ০১:৫৪

আপডেট:
১৩ মার্চ ২০২৫ ০৭:৫৫

 

পবিত্র রমজান মাস এর এবাদত সম্পর্কে ধর্মীয় বিভিন্ন গ্রন্থ ও পত্র পত্রিকা থেকে বিশেষ কিছু বিষয় আমরা জানতে পারি !আল্লাহ তাআলা রমজান মাসকে তিনভাগে ভাগ করেছেন।
রমজানের প্রথম দশদিন- রহমত। দ্বিতীয় দশদিন- মাগফিরাত। তৃতীয় দশদিন- জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি।
বলা হয় প্রত্যেক ভাগের জন্য আলাদা আলাদা দু’আ রয়েছে।
প্রথমভাগে আমাদেরকে বলতে হবে, ‘আল্লাহুম্মারহামনি ইয়া আরহামার রাহিমীন’ (অর্থ- হে সর্বাধিক দয়াবান, আমাকে দয়া করুন)। দ্বিতীয়ভাগে বলতে হবে, ‘আল্লাহুম্মাগ ফিরলি যুনুবি, ইয়া রাব্বাল আলামীন’ (অর্থ- হে জগতসমূহের প্রতিপালক, আমার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিন।”
তৃতীয়ভাগে বলতে হবে, আল্লাহুম্মা আ’তিকনি মিনান নার; ওয়া আদখিলনিল জান্নাহ’ (অর্থ- হে আল্লাহ আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত রাখুন এবং জান্নাতে প্রবেশ করান)।

বিষয়গুলি আলোচনার পর স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে ۔۔۔۔এর পক্ষে কি কোন দলিল আছে?
কিংবা রমজানের অন্য রাত্রিগুলোতে পড়ার জন্য বিশেষ কোন দু’আ আছে কিনা?

এর প্রেক্ষিতে, ইবনে খুযাইমা তাঁর সহিহ গ্রন্থে সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসের শেষদিন আমাদের উদ্দেশ্য খোতবা দিলেন। তিনি বললেন: “হে লোক সকল! এক মহান মাস, এক মুবারকময় মাস তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করেছে...”। [আল-হাদিস] সে হাদিসে রয়েছে “এ মাসের প্রথমভাগ হচ্ছে- রহমত। দ্বিতীয় ভাগ হচ্ছে- মাগফিরাত। আর তৃতীয় ভাগ হচ্ছে- জাহান্নাম থেকে নাজাত”

গোটা রমজান মাস আল্লাহর পক্ষ থেকে এক রহমত। গোটা মাসেই মাগফিরাত ও জাহান্নাম থেকে নাজাত হয়। রমজান মাসের বিশেষ কোন অংশ এ মর্যাদাগুলোর কোন একটির জন্য খাস নয়। এটি আল্লাহর বিপুল রহমতের নিদর্শন।

ইমাম মুসলিম (১০৭৯) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, “যখন রমজান মাস আসে তখন রহমতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানগুলোকে শিকলাবদ্ধ করা হয়।”

তিরমিযি (৬৮২) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, “রমজানের প্রথম রাত্রিতে শয়তান ও অবাধ্য জ্বিনগুলোকে বন্দি করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয়। জাহান্নামের কোন দরজা খোলা রাখা হয় না। জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। জান্নাতের কোন দরজা বন্ধ রাখা হয় না। একজন আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকে, হে কল্যাণ অন্বেষী আগোয়ান হও। ওহে, মন্দ অন্বেষী তফাৎ যাও। আল্লাহ প্রতি রাত্রিতে কিছু মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করে দেন।”[আলবানী সহিহ তিরমিযি গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

উপরোল্লিখিত আলোচনার
ভিত্তিতে বলা যায়: রমজানের প্রথম দশদিনে রহমতের দু’আ করা, মাঝের দশদিনে মাগফিরাতের দু’আ করা, শেষের দশদিনে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির জন্য দু’আ করা- বিদআত। শরিয়তে এর কোন ভিত্তি নেই। এ ধরনের বিশেষ দু’আর কোন অবকাশ নেই; যেহেতু এক্ষেত্রে রমজানের সকল দিন সমান। বরং একজন মুসলিম গোটা রমজান মাসব্যাপী দুনিয়া-
আখেরাতের কল্যাণ
প্রার্থনা করে আল্লাহর দরবারে দু’আ করবে। এ প্রার্থনার মধ্যে রহমত, মাগফিরাত, জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের দু’আও থাকবে।

এ ছাড়াও
একজন মুসলিমের উচিত কল্যাণ ও বরকতের মৌসুমকে কাজে লাগিয়ে এ মাসে কল্যাণ ও রহমতের দু’আ করা। আল্লাহর রহমত ও তাঁর ক্ষমা প্রাপ্তির উদ্দেশ্য নিয়ে। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুতঃ আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি ঈমান আনা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬]

সিয়ামের হুকুম আহকাম বর্ণনার মাঝখানে দু’আ করার প্রতি উদ্বুদ্ধকারী এ আয়াতে কারীমাটি উল্লেখ করার মধ্যে মাস পূর্ণ হওয়ার সময়; বরঞ্চ প্রতিদিন ইফতারের সময় অধিকহারে দু’আ করার দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। [তাফসিরে ইবনে কাছির (১/৫০৯) থেকে সমাপ্ত]

প্রকৃতপক্ষে ---
আল্লাহর কাছে দু’আকারীর আবেদনটা সুন্দর হওয়া বাঞ্ছনীয়। দু’আকারী হাদিসে বর্ণিত দু’আগুলো বেশি বেশি পড়বে। দু’আর ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করবে না। দু’আর শিষ্টাচারগুলো বজায় রাখবে।
এ ছাড়াও রমজান মাসে যে দু’আগুলো বেশি বেশি পড়া উচিত,
তা হলো ...
‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফউন' ও 'তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি’!
এই দু’আগুলি রমজানের শেষ দশদিনে লাইলাতুল ক্বদর সন্ধানকালে বেশি বেশি পড়া উচিত।

সূত্র : বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ ও ইন্টারনেট !

 

শাহান আরা জাকির পারুল 
নাট্যকার, লেখক ও গবেষক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top