টাইগারদের লড়াকু হার
প্রকাশিত:
৬ জুন ২০১৯ ১৮:৪২
আপডেট:
১৩ মার্চ ২০২৫ ১৪:৫৯

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ছোট ছোট ভুলের মাশুল দিল লাল সবুজ জার্সিধারীরা। মুশফিকুর রহিমের রানআউট, সাকিব আল হাসান রয়েসয়ে খেললে কিংবা মাহমুদউল্লাহ ফিনিশ করতে পারলে বাংলাদেশের স্কোর তিনশ’র কাছাকাছি চলে যেত অনায়াসেই চলে যেত। সেটা হলো না নিজেদের ভুলে। ৪৯.২ ওভারে সবকয়টি উইকেট হারিয়ে টাইগাররা স্কোর বোর্ডে জমা করতে পারল ২৪৪ রান।
এই সামান্য পুঁজি নিয়ে বাংলাদেশের বোলাররা যে লড়াই করল তা মনে রাখার মতো। ম্যাচের শেষ পর্যন্ত ২ উইকেটে হার মানল বাংলাদেশ। এদিন রান তাড়া করতে নামা নিউজিল্যান্ড ৩৫ রানে প্রথম উইকেট হারায়। মার্টিন গাপটিলকে (২৫) তামিমের ক্যাচ বানিয়ে আউট করেন সাকিব। ৫৫ রানের মাথায় আরেক ওপেনার কুলিন মুনরোকেও (২৪) ফিরিয়েছেন সাকিব। তার ক্যাচটি লুফে নিয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। এরপর দারুন প্রতিরোধ গড়ে তোলেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন এবং রস টেইলর। ১০৫ রানের জুটি গড়ে ৩২তম ওভারে মেহেদী মিরাজকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে উইলিয়ামসন ধরা পড়েন মিডউইকেটে দাঁড়ানো মোসাদ্দেক সৈকতের হাতে । আউট হওয়ার আগে ৭২ বলে ৪০ রান করেন উইলিয়ামসন।
একই ওভারের শেষ বলে বাঁহাতি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান লাথামও চেষ্টা করেন একই অঞ্চলে বড় শট খেলার। কিন্তু তিনি ধরা পড়ে যান মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের হাতে। রানের খাতাই খুলতে ব্যর্থ হন লাথাম। মিরাজের এ জোড়া আঘাতে ফিরে আসে ম্যাচের প্রাণ। তবে ব্যাট হাতে ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন টেইলর। অবশেষে এই কিউই ব্যাটসম্যানকে ফেরান মোসাদ্দেক হোসেন। ফেরার আগে নিউজিল্যান্ডের স্কোর বোর্ডে ৮২টি রান যোগ করেন রস টেইলর।
শেষ দিকে স্যান্টার আর ফার্গুসন নিউজিল্যান্ডকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়ল। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে স্বপ্নের সূচনার পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াকু হারমানতে হল বাংলাদেশকে।
বুধবার কেনিংটন ওভালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও টসে হেরেছেন মাশরাফি। কিন্তু কিউই অধিনায়ক আগে ব্যাটিং না করে বাংলাদেশের হাতে ব্যাট তুলে দিলেনু। আগের ম্যাচের মতো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো শুরু করেছিলেন সৌম্য সরকার ও তামিম ইকবাল। কিন্তু ম্যাট হেনরির বলে বোল্ড হয়ে নিজের ইনিংসটি লম্বা করতে পারলেন না সৌম্য। বাংলাদেশের রান তখন ৪৫। সৌম্য আউট হলেন ২৫ বলে ২৫ করে। এর মধ্যে তিনবার বলকে সীমানা ছাড়া করেছেন।
উদ্বোধনী সঙ্গী হারিয়ে তামিম বন্ধু সাকিব আল হাসানকে নিয়ে ভালোভাবেই এগোচ্ছিলেন। কিন্তু দলীয় ৬০ রানের মাথায় লকি ফার্গুসনের একটি বলে টপ এজ হয়ে তিনি বল তুলে দিলেন আকাশে। লোপ্পা ক্যাচটি লুফে নিতে কোনোই সমস্যা হয়নি ট্রেন্ট বোল্টের। দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচের মতো এ ম্যাচেও বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হলেন তামিম। ৩৮ বলে তিন বাউন্ডারিতে করেছেন ২৪।
দুই ওপেনারকে হারানোর পর চাপ সামলানোর চেষ্টা করছেন সাকিব ও মুশফিকুর রহিম। স্কোরবোর্ডে যখন ১১০ রান তখন সাকিবের সঙ্গে ভুলবোঝাবুঝিতে রান আউট হলেন মুশফিক (১৯)। সাকিবই আগে কল দিয়েছিলেন। তাতে সাড়া দিয়ে ক্রিজের মাঝপথে এসে পড়েন মুশফিক। সাকিব একটু এগিয়ে গিয়ে নিষেধ করায় মুশফিক তার প্রান্তে আর ফিরতে পারেননি।
সাকিবের অভিব্যক্তি দেখে তাঁর কষ্টটা বোঝা গেছে। তবে এরপর মোহাম্মদ মিঠুনকে সঙ্গে নিয়ে সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন বাংলাদেশের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। এর মাঝেই টানা দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নিয়েছেন সাকিব। এটি তাঁর ক্যারিয়ারে ৪৪ তম ফিফটি। আগের ম্যাচে ৭৫ করে আউট হয়েছিলেন। এ ম্যাচে মনে হচ্ছিল সাকিব সেঞ্চুরিটা তুলে নেবেন। কিন্তু সেটা আর হলো কোথায়! কলিন ডি গ্রান্ডহোমের বল কাট করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন উইকেটের পেছনে। সাকিব থামলেন ৬৪ রানে। ৬৮ বলে আ্ট বাউন্ডারিতে এই রান করেন তিনি।
এরপর যার ওপর ভরসা করা হয়েছিল সেই মাহমুদউল্লাহও মাত্র ২০ রান করে মিচেল সান্টনারের বলে কেন উইলিয়ামসনকে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন। কিউই বোলারদের সামনে হাতই খুলতে পারলেন মোসাদ্দেক হোসেন (১১)। বাংলাদেশের স্কোর যে ২৪৪ অবধি পৌঁছেছে এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের। ম্যাট হেনরির বলে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে বোল্ড হওয়ার আগে খেলেছেন ২৩ বলে ২৯ রানের ইনিংস। বাউন্ডারি তিনটি আর ছয় মেরেছেন একটি। ৪৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে সফল বোলার ম্যাট হেনরি। ৪৪ রানে ২ উইকেট ট্রেন্ট বোল্টের।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড এখনো অবধি চারবার মুখোমুখি হয়েছে। একবারও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। তবে ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এই ইংল্যান্ডেই নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেটি নিশ্চয় আজ প্রেরণা হয়ে আসবে!
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: