পর্ব তিন: ওয়ালমার্টে কেনা কাটা
প্রকাশিত:
২৩ মে ২০১৯ ১৬:৪৯
আপডেট:
৫ এপ্রিল ২০২০ ০৬:২২
-2020-04-04-23-06-10.jpeg)
দ্বিতীয় দিন সকালে উঠে ভাবলাম বাইরে একটু হাঁটাহাঁটি করে আসি। জানালার ব্লাইন্ড ফাঁক করে বাইরে তাকিয়ে আমার চক্ষু স্থির! তিন জন তরুণী দাঁড়িয়ে আছে, তাদের পোষাকের বর্ণনায় আর গেলাম না (আজ আবার রমজান শুরু হয়ে গেছে আমেরিকায়!)। তবে লক্ষনীয় হচ্ছে তাদের সঙ্গে তিন দুগুনে ছয়টা নানান সাইজের কুকুর। একটা আরেকটার উপর লাফিয়ে উঠছে, ছুটছে এদিক ওদিক, মাঝে মাঝে ওদের গায়ের উপরও দিব্যি লাফিয়ে উঠছে, তারা অবশ্য কিছু মনে করছে না। সে এক কুকুর কাহিনী বটে। আমার আর বাইরে বেরুতে সাহস হল না।
পরে এষার সাথে আলোচনা করে বুঝলাম এরা মাঝে মধ্যে তাদের কুকুরদের বাইরে লাফঝাপের জন্য বের করে আনে ঘর থেকে (বাথরুম করার জন্যও বটে)। আমার কেন যেন মনে হল এরা ব্যাক্তিগত জীবনে কি নিঃসঙ্গ? ক্ষেত্র বিশেষে তাই কুকুরই তাদের সঙ্গী?
পরদিন কোথায় যাওয়া যায়? এষা বলল তার শাক-সব্জি কিনতে হবে, সে ওয়াল মার্টে যাবে। আমরা যাব কিনা। আমরাও তার সাথে রওনা দিলাম। আবার সেই সাপের মত দীর্ঘ ক্যাটারপিলার বাস। এই বাস ঢাকাতেও আছে তবে মনে হচ্ছে এখানকার বাসগুলো বেশী দীর্ঘ।
ওয়ালমার্টে ঢুকে আবার মাথা নষ্ট অবস্থা! কি নেই এখানে? এক একটা গলিতে এক এক টাইপের জিনিষপত্র। মরিচের সাইজ দেখলাম আমাদের দেশের কচি লাউয়ের মত, লেবুর সাইজ তরমুজের মত। তবে খাদ্যাভাসে মানুষকে অলস করার একটা প্রবনতা লক্ষ করলাম এখানে। যেমন কমলার প্যাকেট আছে, আবার ছিলানোর কমলার প্যাকেটও আছে। আবার কমলার কোয়া ভাগ করা প্যাকেটও আছে। মোট কথা আপনাকে যে করেই হোক কমলা খেতেই হবে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে এখানে সেলফ বিলিং সিসটেমও আছে। কেউ খোঁজ নিতেও আসে না কে কি নিচ্ছে। শুধু মদের বোতল কিনলে একজন এসে উঁকি মেরে দেখে যায় কে কিনছে অর্থাৎ সে ২১ বছরের উপরের কিনা (এখানে ২১ এর নিচে মদ্যপান নিষেধ)। সত্যি এদের নিয়ম কানুনে আমি মুগ্ধ!
যাহোক সব কেনা কাটা শেষ করে দু তিনটা ব্যাগ হাতে আমরা বেড়িয়ে এলাম। আবার ক্যাটারপিলার বাসের অপেক্ষা! সামার টাইম বলে ওরা বাসের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। আগে ছিল প্রতি পনেরো মিনিটে একটা বাস। এখন ঘন্টায় একটা।
তবে ফেরার পথে এই বাসে একটা কেলেঙ্কারী হল। সাপের মত এই বাস যখন টার্ন নিল তখন মহান স্যার আইজ্যাক নিউটনের গতি জড়তা প্রমান করার জন্যই যেন আমাকে ব্যাগ এন্ড ব্যাগেজ নিয়ে একটা অনিচ্ছাকৃত ব্যাঙ লাফ দিতে হল। ছিটকে পড়লাম সামনের আরেকটা সীটে। তবে মানির মান আল্লায় রাখে, আমার আর স্যার আইজ্যাক নিউটনের গতি জড়তার বৈজ্ঞানিক এক্সপেরিমেন্ট দেখার জন্য বাসে কেউ ছিল না। শুধু নামার সময় গাড়ীর চালক গম্ভীর মুখে বলল ‘দ্যাট ওয়াজ অ্যান এক্সিলেন্ট ডাইভ!’ তার মানে সে ভিউ মিররে আমার ব্যাঙ লাফ দেখেছে ... উফ!!
বাস থেকে নেমে একটু রাস্তা হাঁটতে হয়। সেখানে একটা আশ্চর্য জিনিষ দেখলাম। একটা স্ট্যান্ডের উপর ছোট্ট একটা ঘরের মত তার ভিতরে দশটা বই। এখান থেকে একটা বই পড়তে নিলে আরেকটা বই রেখে যেতে হয়। কি সুন্দর সিসটেম! মিনিয়েস্ট লাইব্রেরী অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড! ভাবছি ঐ লাইব্রেরীতে একটা উন্মাদ দিয়ে রাখব... প্রচারেই প্রসার!
বিষয়: আহসান হাবীব
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: