সিডনী শুক্রবার, ১০ই মে ২০২৪, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩১

রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে , ১০ মাসে এসেছে ১২শ’ কোটি ডলার


প্রকাশিত:
৪ মে ২০১৮ ০৪:৩২

আপডেট:
১০ মে ২০২৪ ০০:৫৪

রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে , ১০ মাসে এসেছে ১২শ’ কোটি ডলার

ইতিবাচক ধারায় হাঁটছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের গতি। ফলে গত কয়েক মাস ধরেই বাড়ছে বাংলাদেশের জিডিপিতে ১২ শতাংশ অবদান রাখা এই প্রবাসী আয়। এপ্রিলে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৩২ কোটি ৭১ লাখ ডলারেরও বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। যা মার্চের তুলনায় ২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার বেশি আর গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলার বেশি।



বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে থেকে এ তথ্য জানা গেছে।



ব্যাংকাররা বলছেন, রেমিট্যান্স বাড়লেও যে হারে বাড়ার কথা সেই হারে বাড়ছে না। কারণ দ্রুত সময়ে অর্থ স্বজনের কাছে পৌঁছাতে প্রবাসীরা এখনও ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে হুন্ডির মাধ্যমেই বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন। এজন্য বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি উদ্যৌগ নিলেও তা পুরোপুরি কাজে আসছে না।



তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মূলত ডলারের দাম বেড়ে যাওযার কারণে রেমিট্যান্স বাড়ছে। এছাড়া হুন্ডি প্রতিরোধ করাও কিছুটা কাজে এসেছে। তাদের মতে, রেমিট্যান্সের এই ইতিবাচক প্রবাহ ধরে রাখতে শ্রমবাজারে বৈচিত্র্য আনতে হবে। পুরানো বাজারের পাশিপাশি নতুন শ্রম বাজারে দক্ষ কর্মী পাঠাতে হবে।



বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবছরের এপ্রিলে ১৩২ কোটি ৭১ লাখ ডলারেরও বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। যা গত বছরের চেয়ে ২৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলার বেশি। ওই সময় রেমিট্যান্স এসেছিল ১০৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার। আর গত মার্চে এসেছিল ১৩০ কোটি ৪ লাখ ডলার। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১ হাজার ২০৮ কোটি ৮১ লাখ ডলার।



গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের চেয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ কম রেমিট্যান্স এসেছিল। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীরা মাত্র ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। যা ছিল গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।



এরপর রেমিট্যান্স বাড়াতে হুন্ডি প্রতিরোধসহ নানা উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে অক্টোবর থেকে রেমিট্যান্স বাড়তে শুরু করে। ওই মাসে ১১৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে, যা ছিল সেপ্টেম্বরের চেয়ে ৩০ কোটি ৩০ লাখ ডলার বেশি। সেই থেকে বলতে গেলে এখনও ইতিবাচক ধারায় রয়েছে এই প্রবাসী আয়।



রেমিট্যান্স বাড়ার পেছনে হুন্ডি প্রতিরোধের চেয়ে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ার ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন দুই অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।



ইব্রাহীম খালেদ বলেন: ‘বাংলাদেশ ব্যাংক হুন্ডিরোধে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এছাড়া ডলারের দাম বাড়ছে। তাই প্রবাসীরা ব্যাংকিং পথে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন।



মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন: ডলারের বিপরীতে টাকা দুর্বল হয়েছে। প্রবাসীরা এখন ডলার পাঠালে আগের তুলনায় টাকা বেশি পাচ্ছে। তাই তারা হুন্ডিতে না পাঠিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠাচ্ছেন। এসব কারণেই রেমিট্যান্স বাড়ছে।



তিনি বলেন, এই আয় প্রবাহ ধরে রাখতে এখন থেকেই নতুন শ্রম বাজারে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর উদ্যোগ নিতে হবে।



তবে এতে কিছুটা দ্বিমত পোষন করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন উর্ধ্বর্তন কর্মকর্তা। নাম না প্রকাশ করার শর্তে তিনি বলেন: অভ্যন্তরীণ অনেক কিছুই বাইরের থেকে জানা যায় না। রেমিট্যান্স বাড়ছে। এটা ভাল সংবাদ সংবাদ। তবে যে পরিমাণে রেমিট্যান্স আসার কথা সেই পরিমাণে আসছে না।



এর কারণ হিসেবে এই ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন: প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে তাদের স্বজনেরা তা হাতে পেতে কমপক্ষে তিন দিন লেগে যায়। কিন্তু হুন্ডির মাধ্যমে পাঠালে তা এক থেকে দেড় ঘন্টার মধ্যেই পেয়ে যায়। তাই দ্রুত অর্থ হাতে পেতে অধিকাংশ প্রবাসী রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে হুন্ডিকে বেছে নেয়।



প্রতিবেদন অনুযায়ী, এপ্রিলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩২ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। বিশেষায়িত দু’টি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ৯ লাখ ডলার। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৯৭ কোটি ৫৫ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ৪১ লাখ ডলার।



বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৬ কোটি ৬১ লাখ ডলার। অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ১৩ কোটি ৩ লাখ ডলার, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ডলার এবং জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে ৭ কোটি ৯৯ ডলার এসেছে।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top