সিডনী শুক্রবার, ১০ই মে ২০২৪, ২৭শে বৈশাখ ১৪৩১

দেশের এক-চতুর্থাংশ ব্যাংকেই বসেছে পর্যবেক্ষক-সমন্বয়ক: মিলছে না সুফল ১৫ ব্যাংকে


প্রকাশিত:
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:০৩

আপডেট:
১০ মে ২০২৪ ২২:২৮

 

দুর্বলতা ও বিশৃঙ্খলায় ঘুরপাক খাচ্ছে ব্যাংকিং খাত। অবস্থার উন্নতিতে কোনো উদ্যোগেই মিলছে না সুফল। সমস্যাগ্রস্ত ১৪টি ব্যাংক ও একটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে স্বাভাবিক করতে পর্যবেক্ষক, সমন্বয়ক ও প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কিন্তু ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কাছে তারা নিতান্তই অসহায়। এসব পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক কেবল কাগজে-কলমে নিয়ম রক্ষার দায়িত্বে ব্যস্ত। কারণ ব্যাংক পরিচালনার প্রকৃত ক্ষমতা পর্ষদের ওপরই ন্যস্ত।

এমনকি পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক ব্যাংকের ঋণ অনুমোদন, পুনঃতফশিল, খেলাপি, অবলোপন, নিয়োগ, আয়, ব্যয় ও শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। কোনো অনিয়মের বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতাও নেই।

তারা কেবল সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অবস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত করতে পারে। অথচ প্রচলিত আইনেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলে যে কোনো ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সে পথে হাঁটছে না। এতে পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক নিয়োগ এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম রক্ষার কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘একজন পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক একা কী করবেন। একার পক্ষে কতটুকু করা সম্ভব তা সবারই জানা। তারা তো ঋণ অনুমোদন, খেলাপি আদায় কিংবা নিয়োগে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেন না। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলে যে কোনো ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারে।

যদিও এটা কোনো সমাধান নয়। তবে পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক নিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো প্রজ্ঞাপন নেই। তাদের ক্ষমতাও কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু উল্লেখ নেই। প্রাথমিকভাবে পর্যবেক্ষক ব্যাংকের পর্ষদ সভায় উপস্থিত থেকে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে বাংলাদেশ ব্যাংককে তা অবহিত করেন। কিন্তু সমন্বয়ক পর্ষদ সভায় সশরীরে উপস্থিত থাকেন না। তারা সাধ্য অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করেন।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, অপেক্ষাকৃত কম দুর্বল ব্যাংকে পর্যবেক্ষক এবং বেশি দুর্বল ব্যাংকে সমন্বয়ক দেওয়া হয়। সে আলোকে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ও বিশেষায়িত ৫ ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর ৯ ব্যাংকে দেওয়া হয় সমন্বয়ক। এছাড়া একটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বসানো হয় প্রশাসক।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংকগুলোতে পর্যবেক্ষকরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারেন না এমন অভিযোগ বেশ পুরোনো। পর্যবেক্ষকরা পর্ষদে মতের প্রতিফলন ঘটাতে পারছেন না।

পর্যবেক্ষক বা সমন্বয়ক মতামত দেওয়ার পরই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে-এমন নিয়ম করা দরকার। তা করতে না পারলে কাগুজে দায়িত্ব পালন ছাড়া তাদের কিছুই করার নেই। এতে দুর্বল ব্যাংকেরও কোনো পরিবর্তন আসবে না।’

একটি বেসরকারি ব্যাংকের ম্যানেজার জানান, গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পর এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, ১০টি দুর্বল ব্যাংককে চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্রুতই সেগুলোকে সবল করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। গভর্নরের এমন বক্তব্যের পর কয়েকটি দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে সভা করা হয়। বেশ কিছু লক্ষ্য দিয়ে এমওইউ সই করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে সমন্বয়ক নিয়োগ দেওয়া হলো। কিন্তু ব্যাংকগুলোর অপর্যাপ্ত জামানত, অনিয়মের মাধ্যমে সৃষ্ট ঋণ, উচ্চ খেলাপি ঋণ, আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি দেখানোসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে কোনো উন্নতি চোখে পড়ছে না।

এতে বোঝা যায়, পর্যবেক্ষক সমন্বয়ক নিয়োগ নয়, ব্যাংকে ঋণ ছাড়ের তদবির বন্ধ করতে হবে। তা না হলে ব্যাংকে সুশাসন ফিরবে না। আবার কয়েকটি ব্যাংকে তো পর্যবেক্ষকরাই অসহায় থাকেন। কারণ ব্যাংক মালিকদের হাত পর্যবেক্ষকের চেয়ে অনেক শক্তিশালী।

 


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top