সিডনী সোমবার, ১৩ই মে ২০২৪, ৩০শে বৈশাখ ১৪৩১

পেঁয়াজের ক্রেতা মিলছে না, দাম কমিয়ে বিক্রি


প্রকাশিত:
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:৫৪

আপডেট:
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০:০০


খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের ক্রেতা মিলছে না। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে মূল্য বাড়ানো এবং শুল্কারোপ করায় দাম চড়া হওয়ার পর থেকে পাইকারি বাজারে ক্রেতা মিলছে না। এই অবস্থায় পাইকারি বাজারে কেজি ৬০ টাকা দর হাঁকা হলেও ক্রেতা না পেয়ে কেজি ৫৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে গতকাল। ক্রেতার আকাল হওয়ায় অনেক আড়তেই পেঁয়াজ নষ্ট হতে শুরু করেছে।


জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের আড়তদার মোহাম্মদ ইদ্রিস কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পেঁয়াজের বাজার বলতে গেলে ক্রেতাশূন্য। চাহিদা অনুযায়ী ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে ঠিকই, কিন্তু দাম আরো কমে যাবে এই শঙ্কায় ক্রেতা মিলছে না পাইকারিতে।’ তিনি বলেন, ‘ভারত শুল্কারোপের পর খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৬২ টাকায়।


এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকায়। অনেকেই ৬০ টাকা দর দিয়েছিল, কিন্তু সেই দরে ক্রেতা মিলছে না বলে বাধ্য হয়েই ৫৪ টাকায় বিক্রি করে দিচ্ছে।’
মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, এক সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজ আড়তে পড়ে থাকায় বস্তার ভেতর নষ্ট হচ্ছে। অনেক পেঁয়াজের গায়ে দাগ লেগেছে।


সেগুলো আরো কমদামে বিক্রি করতে হবে। জানা গেছে, নিজেদের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্কহার ৪০ শতাংশ বাড়িয়ে গত ২০ আগস্ট প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর দুই দিন পর শুল্কায়নমূল্যও বাড়িয়ে দেয়। এর পর থেকে দেশের বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে অস্থিরতা শুরু হয়। ভারত থেকে আমদানিমূল্য বাড়ার কথা কেজিতে সাড়ে ছয় টাকা কিন্তু একলাফে সেটি বেড়ে যায় কেজিতে ২০ টাকা।

এর ফলে খাতুনগঞ্জের পাইকারিতেই কেজি ৬২ টাকার ওপরে বিক্রি হয় ভারতীয় পেঁয়াজ। দেশি পেঁয়াজ অবশ্য আরো বেশি দামেই বিক্রি হয়।
এই অবস্থায় ভারতের বদলে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আনার অনুমতি দেয় সরকারের কৃষি বিভাগ। শুরু হয় বিকল্প দেশ থেকে আইপি বা আমদানি অনুমতিপত্র দেওয়া। আমদানি অনুমতি দেওয়া সেই পেঁয়াজ এখনো দেশে পৌঁছেনি কিন্তু তার আগেই বাজারে অস্থিরতা কমে আসে। কমতে থাকে দাম।

কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সংগনিরোধ দপ্তরের হিসাবে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে গতকাল পর্যন্ত ১৪ লাখ ৫৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর বিপরীতে পেঁয়াজ এসেছে ৪ লাখ ২১ হাজার টন। শুধু ২৩ আগস্ট থেকে গতকাল ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারত থেকেই পেঁয়াজ এসেছে ৪৬ হাজার টনের বেশি।

ভারতের বদলে বিকল্প ১০ দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেওয়া হয়েছে ৩১ হাজার টন। সেই পেঁয়াজ এখনো আসেনি, সমুদ্রপথে জাহাজে চট্টগ্রাম বন্দরে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। সেই পেঁয়াজ আসলে বাজারে আরো দাম কমে যাবে বলছেন ব্যবসায়ীরা।

উদ্ভিদ সংগনিরোধ দপ্তরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিকল্প দেশ থেকে যেই আবেদন করেছেন অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে আমরা অনুমতি দিচ্ছি। এই কারণে চীন থেকে যেমন পেঁয়াজের অনুমতি দিয়েছি আমেরিকা থেকেও অনুমতি দিয়েছি। অনুমতি পাওয়া দেশের তালিকায় পাকিস্তান যেমন আছে তেমনি আছে নেদারল্যান্ডস, আরব আমিরাত এবং তুরস্ক, কাতার, মিশরও। আমরা নিশ্চিত এসব পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছলেই বাজারে দামে ধস নামবে।’

খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে দাম কমে কেজি ৫৪ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। নগরীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। সুপার শপগুলোতে আরো বেশি দামে কেজি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ভ্রাম্যমাণ ভ্যান গাড়িতে কিছুটা কমে কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।

খুচরা ব্যবসায়ী রিয়াজ উদ্দিন বাজারের আজমত উল্লাহ বলেন, ‘দাম আরো কমার ভয়ে আমরা বেশি পরিমাণ পেঁয়াজ কিনে রাখছি না। এক-দুই বস্তা কিনে বিক্রি করছি। ফলে পাইকারি বাজারের তুলনায় দাম অতটা কমেনি খুচরা বাজারে।’

তিনি বলেন, ‘বিকল্প দেশের পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম আরো কমে যাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই ভয়েও আমরা বাড়তি পেঁয়াজ কিনছি না।’


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top