সিডনী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী প্রতিবাদ সভা


প্রকাশিত:
২৬ অক্টোবর ২০২১ ০১:৪৯

আপডেট:
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৪৯

 

বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে গত ২৩ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়াতে সাধারণ প্রবাসী বাংলাদেশিরা একটি ভার্চুয়াল প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন। সমগ্র অস্ট্রেলিয়া থেকে বিভিন্ন পেশার মানুষ এই ভার্চুয়াল প্রতিবাদ সভায় যোগ দেয়, বক্তব্য পেশ করেন ও সংহতি প্রকাশ করেন।

অস্ট্রেলিয়ার ইস্টার্ন টাইম রাত দশটায় চিত্রশিল্পী ও সমাজ সংগঠক হাসিনা চৌধুরী মিতার সঞ্চালনায় এই প্রতিবাদ সভার শুরু হয়। প্রতিবাদ সভায় বক্তারা কেন বারবার এই ধরণের বর্বরোচিত সাম্প্রদায়িক হামলার স্বীকার বাংলাদেশ হচ্ছে তার কারণ ও এর থেকে পরিত্রানের দিকে আলোকপাত করেন। পরিবাদ সভার শুরুতেই সকলেই সাম্প্রতিক এই আক্রমণের তীব্র নিন্দা ও খেদ প্রকাশ করেন।

প্রতিবাদ সভার শুরুতেই সঞ্চালক মিতা বলেন, "আমাদের অবস্থান খুবই পরিষ্কার ও নিদৃষ্টআমরা আজ একত্রিত হয়েছি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, ধর্মন্ধতার বিরুদ্ধে" । অস্ট্রেলিয়ার এডিলেডে থেকে রেডিও বাংলা এডিলেডের তানজিলা ফেরদৌস তাইসিন বলেন যে, এরকম একটা ঘৃণ্য কাজে আমরা সবাই খুব অসস্থিতে ও মনোকষ্টে আছি এবং কেউ সমর্থন দিচ্ছি না, তিনি প্রশ্ন রাখেন তবে কেন এই ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে । মেলবোর্ন থেকে লেখক ও কলামিস্ট নাদেরা সুলতানা নদী বলেন, "ব্যাক্তিগতভাবে আমি খুবই হতাশ ও বিমর্ষ "তিনি আরো বলেন যে আমাদের আমরা জানি এই কাজগুলো করা করছে, কিন্তু আমরা প্রতিবাদ করছি না, আমরা অনেকেই নানা কারণে মৌন আছি, কিন্তু এই মৌনতা’টাই এই চক্রটি কাজে লাগায়। তাই আমাদের মৌনতা ভেঙে প্রতিবাদ করতে হবে। মেলবোর্নে থেকে উপস্থিত জনাব সানি সঞ্জয় বলেন, "আমরা এই ঘটনাগুলোর সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই আসলে দেখে আসছি" তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "আমরা সনাতন ধর্মীরা আসলে এখন মন্দিরের ঘন্টার মতো, যে আসে সেই আমাদের বজায়" তিনি এটাও উল্লেখ করেন যে, " আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের ৯৯.৯৯ ভাগ মানুষই শান্তি প্রিয় কিন্তু গুটি কয়েক মানুষের হাতে আসলে এই ৯৯.৯৯ ভাগ জনসংখ্যা জিম্মি।

চলমান এই পরিস্থিতির কারণ বিশ্লেষণ করতে যেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডঃ স্নিগ্ধা রিজওয়ানা যিনি এই মুহূর্তে নিউজি ল্যান্ডের অকল্যান্ড উনিভার্সিটিতে আছেন উল্লেখ করেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এই পরিস্থিতির জন্য অনুঘটক, তিনি বর্তমান বাংলাদেশে চলমান তিনমুখী শিক্ষা ব্যাবস্থাকে একমুখী করণের দাবি জানান, সেই সঙ্গে ধর্মীয় শিক্ষা ব্যাবস্থাকে আরো নজরদারিতে আনার দাবি জানান।

প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বারবার একই বিষয়গুলোতে জোড় দেন ও সমাধান দাবি করেন। তারা বলেন, আমরা যারা অসাম্প্রদায়িকতা বিশ্বাস করি, ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করি, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাস করি, তারা গভীর উদ্বেগের ও হতাশার সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, একটি ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক ও একটি বুদ্ধিবৃত্তিক রাষ্ট্রের ব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা '৭২ সংবিধানের পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে দাবি করে আসছি তা নানা ভাবে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রতিবাদ থেকে '৭২ এর সংবিধানের প্রত্যাবর্তন দাবি করা হয়।
সভায় আরো বলা হয় যে, আমরা এই একবিংশ শতকে এসেও সংখ্যালঘু নামক সবটি শুনছি, যা খুবই নিন্দনীয় একটি শব্দ এই শতকে এসে। কারণ সংখ্যালঘু শব্দটা একটা পরিসংখ্যানকে নির্দেশ করে মাত্র সেই হিসেবে অনেকেই তবে সংখ্যালঘু। আর সংখ্যাগুরু শব্দটাও কর্তৃত্ববাদী ও টোটালিটেরিয়ান বা সর্বগ্রাসী। এবং এই শব্দগুলোই কি কখনো কখনো অন্য মতবাদী বা অন্য ধর্মীদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে আর যার ফলাফল সনাতন ধর্মীয় জনসংখ্যার ২৬% থেকে ৮% এসে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রদায়িক এই আঘাতগুলো দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং এই আক্রমণের ভয়াবহতার মাত্রাও বাড়ছে! অতীতের ঘটনাগুলোর যথাযথ ও দৃস্টান্তমূল ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রের গাফিলতি'ই কি আজকের এই পরিস্থিতির জন্য অনেকাংশে তাই দায়ী।
এই হীন ও নিকৃষ্ট কাজে জড়িত সকল ব্যাক্তিদের দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করুন সভা থেকে দাবি করা হয়। একই সঙ্গে রাষ্ট্রের ধর্ম বর্ণ বিশ্বাস নির্বিশেষে প্রিতিটি নাগরিকের সমান অধিকার ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং সকল ধরণের সাম্প্রদায়িক আক্রমণ রোধ নিশ্চিত করতে হবে।

প্রতিবাদ সভায় মেলবোর্ন আরো উপস্থিত ছিলেন, অধ্যাপক এসরার ওসমান, অধ্যাপক সানিয়াত ইসলাম, ডঃ আলম মাহবুব, সমাজ সংগঠক জাইদি সজীব, কবি ওয়াজীহ রাজীব, সংগীত শিল্পী আদিলা নূর ও সাদিয়া আম্রিন, সিডনি থেকে সাকিনা আক্তার ও মুক্তমঞ্চের সম্পাদক জনাব নোমান শামীম এবং ব্রিসবেন থেকে সংগীত শিল্পী অবনী মাহবুব।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top