সিডনী সোমবার, ৬ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১


সিডনিতে গায়ত্রী সন্ধ্যায় যাপিত জীবনের গল্প বললেন সেলিনা হোসেন


প্রকাশিত:
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৯:০৫

আপডেট:
৬ মে ২০২৪ ০০:০৫

সিডনিতে গায়ত্রী সন্ধ্যায় যাপিত জীবনের গল্প বললেন সেলিনা হোসেন

লেখক বা ঔপন্যাসিকদের কোনো সীমারেখা নেই, পুরো জগৎটাই তাদের। নিজ নিজ সৃষ্টিকর্মেই বিশ্বভুবনে তাদের জনপ্রিয়তা। সিডনিতে  বাংলাদেশের স্বাধীনতা পদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক ও প্রভাত ফেরীর উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সেলিনা হোসেনের উপস্থিতি সে বিষয়টি আবারও প্রমাণ করেছে। জনপ্রিয় এই কথাসাহিত্যিক   একুশে একাডেমি অস্ট্রেলিয়া আয়োজিত এবং অস্ট্রেলিয়ার জনপ্রিয় বাংলা পত্রিকা প্রভাত ফেরীর সহযোগিতায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর  শুক্রবার, সন্ধ্যায় হার্স্টভিল সিভিক সেন্টারে “গায়ত্রী সন্ধ্যায় যাপিত জীবনের গল্প” নামক একটি সাহিত্য সন্ধ্যায় অংশ নিয়ে , ভক্তদের মুখোমুখি হলেন, অটোগ্রাফ দিলেন, ছবি তুললেন আর নিজের লেখিকা হয়ে ওঠার গল্প বললেন।  পাঠক ও ভক্ত মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনলেন সেলিনা হোসেনের  লেখিকা হয়ে ওঠার সেই গল্প। এই সময় তিনি  নিজের জনপ্রিয় সৃষ্টি ‘জলোচ্ছ্বাস, হাঙর নদী গ্রেনেড, ভালোবাসা প্রীতিলতা, গায়ত্রী সন্ধ্যা,পোকা মাকড়ের ঘরবসতি,মগ্ন চৈতন্যে শিস ’সহ বিভিন্ন উপন্যাসের বিষয়ে আলোকপাত করেন।





এই সময় তিনি বলেন,  বাঙালির শিকড়ের সন্ধানে যা কিছু থাকবে সে জায়গা গুলো যেন  সাহিত্যের মধ্য দিয়ে আমাদের পরবর্তি প্রজন্ম জানতে পারে সেই লক্ষ্যই  কাজ করে যাচ্ছি। গল্প ও উপন্যাসের মাধ্যমে আমি তা তুলে ধরার চেষ্ঠা করি যাতে আমাদের নতুন প্রজন্ম আলোকিত হয় এবং সারা বিশ্বে বাঙালী, বাংলাদেশ  এবং বাংলা ভাষা যেন উজ্জল হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস  বাংলাদেশিদের জন্য বড় অর্জন। তবে আমরা যদি এর সুফল থেকে নিজেরাই বঞ্চিত হয় তবে তা হবে খুবই  দুঃখজনক।



নিজের শিক্ষকের উদ্ধতি দিয়ে  তিনি বলেন, ধর্ম হচ্ছে মানুষের পবিত্র বিশ্বাস  এবং তিনি তা  হৃদয়ে নিয়ে বাস করবেন, তার জন্য তিনি অন্যের হাতে খুন হতে পারেন না বা কেউ তাকে মারতে পারেন না। প্রত্যেকের ধর্মের অধিকার আছে, সেটা নিয়ে সে বেঁচে থাকবে।





নিজের প্রয়াত কন্যা ও বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রশিক্ষক বৈমানিক ফারিয়া হোসেন লারা,  যিনি ১৯৯৮ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর প্রশিক্ষণ উড্ডয়নের সময় নিহত হন,  তার স্মৃতিচারন করতে গিয়ে বলেন  ‘লারার স্বপ্ন ছিল খোলা আকাশে পাখির মতো ভেসে বেড়ানোর। সেই স্বপ্ন পূরণও হয়েছিল।তার বুকের ভেতর জিইয়ে রেখেছিল সহায়-সম্বলহীন মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর বাসনা। লারা স্বপ্ন দেখত, স্বপ্ন দেখাত মানুষকে। লারার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য তার নামে গড়ে তোলা 'ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশন' দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দুঃস্থ মানুষের জন্য কাজ করছে।’





অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সেলিনা হোসেনের স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনের পর ঢাকা ছেড়ে আমরা গ্রামে গিয়ে সংগঠিত হই। আমরা সকলে বঙ্গবন্ধুর কথা গুলো হৃদয়ে অঙ্গীভূত করে নিয়েছিলাম, যে কারনে যুদ্ধে পরাভূত হয়নি।





প্রভাত ফেরী প্রধান সম্পাদক শ্রাবন্তী কাজী আশরাফী,  সেলিনা হোসেনের ইজ্জত উপন্যাসের মালেকা চরিত্রের কয়েকটি লাইন উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, অন্তরে গহীনে প্রবেশ করে মানব মনের হৃদয়ের আকুতি খুব সহজ সরল ও সুন্দর করে উপস্হাপন খুব কম লেখকের পক্ষেই সম্ভব। বাংলাদেশের ঘুনে ধরা সমাজ ব্যবস্হা নিয়ে অনেকেই হয়ত অনেক কিছু লিখতে পারে কিন্তু মালেকার মতো চরিত্র দিয়ে বাংলাদেশের প্রচলিত সমাজিক অবকাঠামোতে আঘাত সেলিনা হোসেনের মতো লেখিকার পক্ষেই সম্ভব। তিনি লেখিকাকে নিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য একুশে একাডেমী সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।







শাখাওয়াত নয়নের সঞ্চালনায়  শুরুতেই ছিল একুশে একাডেমী অস্ট্রেলিয়ার সাংস্কৃতিক দলের পরিবেশনা। এর পর সেলিনা হোসেন  এবং তার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয় এবং তাদের প্রতিষ্ঠিত 'ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশন'  জন্য একুশে একাডেমী অস্ট্রেলিয়া ও বিভিন্ন ব্যাক্তির পক্ষকে থেকে অনুদান তুলে দেওয়া হয়।  এই সময় একুশে একাডেমী অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে লেখিকাকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠান সফল করার জন্য একুশে একাডেমী অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি স্বপন পাল সকলকে ধন্যবাদ দেন।  


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top