সিডনী সোমবার, ৬ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১


 না ফেরার দেশে- বাংলার সম্ভাবনাময় অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা : ডঃ সুবীর মণ্ডল


প্রকাশিত:
২৪ নভেম্বর ২০২২ ০৪:১৮

আপডেট:
৬ মে ২০২৪ ০০:২৫

ছবিঃ ঐন্দ্রিলা শর্মা

 

দীর্ঘ লড়াইয়ের পর, সকলের প্রার্থনাকে বিফল করে চলে গেলেন 'জিয়ন কাঠি'-খ্যাত নায়িকা ঐন্দ্রিলা শর্মা। ১ নভেম্বর ব্রেন স্ট্রোক হয় অভিনেত্রীর। এরপরই তাঁকে হাওড়ার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করা হয় অপারেশনও। কিন্তু সংক্রমণ বাড়তে থাকায় তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। মাঝে কদিন সুস্থতার দিকে এগোলেও শেষ পর্যন্ত লড়াইটা হেরেই গেলেন 'ফাইটার' ঐন্দ্রিলা। গত বুধবার তাঁর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় পর পর দু'বার। মাঝে খবর ছড়িয়ে যায় যে তিনি আর নেই। তখন তাঁর বন্ধু সব্যসাচী জানান, এই খবর মিথ্যে। শুক্রবার তাঁর অবস্থার খানিক উন্নতি হলেও শনিবার ফের অ্যাটাক। ১০ বার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় অভিনেত্রীর। এরপরই আর শেষ রক্ষা করা গেল না। রবিবার ২০ নভেম্বর চলে গেলেন সকলকে কাঁদিয়ে।
কয়েক বছর আগেই বছর কুড়ির গণ্ডি পেরিয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা, অথচ এই স্বল্প সময়ে কী ভীষণ লড়াই করে গেলেন। দেখিয়ে গেলেন বেঁচে থাকার লড়াই কাকে বলে। প্রথমে ২০১৫ সালে মারণ রোগ ক্যানসার থাবা বসায় তাঁর শরীরে। তারপর ২০২১ আরও একবার তিনি ক্যানসার আক্রান্ত হন। দুইবার ক্যানসারকে হারিয়ে, কেমোথেরাপি করিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন। কাজে ফেরেন। একাধিক ওয়েব সিরিজ, সিনেমায় অভিনয় করেন। কিন্তু তারপরই আচমকা তাঁর ব্রেন স্ট্রোক। সেখানেও লড়েছিলেন নিজের জান দিয়ে। তবে লড়াইটা তাঁর আর জেতা হল না।
আশঙ্কা করা গিয়েছিল শনিবার রাতে। হঠাৎই ফেসবুক থেকে ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে করা সব পোস্ট মুছে ফেলেন সব্যসাচী। যে ছেলেটা একদিন আগেও আশার আলো দেখিয়েছিল সকলকে তাঁর এহেন আচরণই বুঝিয়েছিল সব ঠিক নেই।

'ঝুমুর' নামক একটি সিরিয়াল দিয়ে অভিনয় জগতে পা রাখেন ঐন্দ্রিলা। এই সিরিয়ালেই তাঁর বিপরীতে দেখা গিয়েছিল সব্যসাচী চৌধুরীকে। এই 'বামাখ্যাপা' সব্যসাচী চৌধুরীই শেষ দিন পর্যন্ত তাঁর পাশে থেকেছেন। ভালোবাসায়, যত্নে ভালো রাখার চেষ্টা করেছেন ঐন্দ্রিলাকে। ঐন্দ্রিলার সঙ্গে তিনিও লড়াই করছিলেন। কিন্তু নিয়তির বোধহয় অন্য কিছু ইচ্ছে ছিল।

দীর্ঘ লড়াই শেষ। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেল, ২০ নভেম্বর, দুপুর ১২টা ৫৯ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। গত ১ নভেম্বর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে ভর্তি করানো হয় হাওড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানান, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে ঐন্দ্রিলার। কোমায় চলে যান তিনি। রাখা হয় ভেন্টিলেশনে। আর ফিরল না জ্ঞান। হাসপাতালেই প্রয়াত হলেন  ঐন্দ্রিলা শর্মা। 
রবিবার সকালেও অভিনেত্রীর বেশ কয়েক বার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। তার পর থেকেই পরিস্থিতি জটিল হতে শুরু করে। সেই সময় হাসপাতালে ছিলেন তাঁর মা-বাবা এবং পরিবারের আরও কিছু সদস্য। রবিবার সকালেই আনন্দবাজার অনলাইনকে ঐন্দ্রিলার মা জানান, মেয়ে একদমই ভাল নেই। ১ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তির পর দিন যত এগিয়েছে ততই কঠিন হয়েছে ঐন্দ্রিলার লড়াই।
গত ১৪ নভেম্বর থেকে ঐন্দ্রিলার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। হৃদ্‌যন্ত্র স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছিল বার বার। শনিবার (১৯ নভেম্বর) রাতে বার দশেক কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। এই ধাক্কা আর সামলাতে পারলেন না ঐন্দ্রিলা।
অতীতে দু’বার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েও চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন ঐন্দ্রিলা। ২০১৫ সালে, একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রথম বার ক্যানসার ধরা পড়ে তাঁর। কর্কট রোগের আক্রমণ হয়েছিল তাঁর অস্থিমজ্জায়। দ্বিতীয় বার ২০২১ সালে। সে বার ফুসফুসে টিউমার। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ের সঙ্গে সঙ্গেই চলেছে তাঁর অভিনয়ের কাজ।  

যেন এক অটুট প্রেমকাহিনি। মৃত্যুও যেখানে হার মেনেছে বারে-বারে। সব্যসাচী চৌধুরী ও ঐন্দ্রিলা শর্মার সম্পর্ক ঠিক এমনই সুরে সাজানো। তবে সেই স্বপ্নের রূপকথা আজ যেন তাসের দেশের মতো ভেঙে পড়ল আজ অর্থাৎ রবিবার। সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে চিরঘুমের দেশে পাড়ি দিলেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। নবান্নের পাশে বেসরকারি হাসপাতালে অবশেষে থামল লড়াই। রবিবারই প্রয়াত হলেন তিনি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ২৪ বছর। সেই সঙ্গে দীর্ঘ কুড়ি দিনের লড়াই শেষ হল।পাড়ি দিলেন না ফেরার দেশে।

 


ডঃ সুবীর মণ্ডল
পশ্চিম বঙ্গ, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

 

 

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top