সিডনী রবিবার, ১২ই মে ২০২৪, ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১


নরেন্দ্র মোদির কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ!


প্রকাশিত:
১৬ মে ২০১৮ ০১:২৫

আপডেট:
১২ মে ২০২৪ ০০:৩৯

নরেন্দ্র মোদির কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ!

দক্ষিণ ভারতের রাজ্য কর্নাটকে বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গণনায় মঙ্গলবার দিনভর টানটান উত্তেজনার পর বিজেপি গরিষ্ঠতার চেয়ে সামান্য পিছিয়ে রয়েছে।



তবুও বিজেপি যেমন ওই রাজ্যে সরকার গড়ার দাবি জানাচ্ছে, তেমনি কংগ্রেসও জানিয়েছে তারা সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবেগৌড়ার দলকে সরকার গঠনে সমর্থন দিতে প্রস্তুত। খবর বিবিসি



 





কর্নাটক নির্বাচনে বিজেপির নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা না পাওয়াকে অনেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তায় ভাঁটার টান হিসেবে দেখছেন।



পাশাপাশি পর্যবেক্ষকরা অনেকেই বলছেন, বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ঠিকমতো ঐক্য হলে ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচন যে বিজেপির জন্য শক্ত চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে, কর্নাটকের ফলাফল তা প্রমাণ করে দিয়েছে।



দক্ষিণ ভারতের একমাত্র যে রাজ্যটিতে বিজেপি একদা ক্ষমতায় ছিল, সেই কর্নাটকের নির্বাচনে আজ প্রায় সারাদিনই তারা গরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ১১২টি আসনের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করেছে, কিন্তু মঙ্গলবার দিনের শেষে দেখা যাচ্ছে, তাদের সম্ভবত পাঁচ-সাতটি আসন কম পড়বে।



তবে তার অনেক আগেই অবশ্য কর্নাটক থেকে কংগ্রেসকে হঠিয়ে বিজেপি তাদের ‘কংগ্রেস-মুক্ত ভারত’ গঠনের লক্ষ্যে এক ধাপ এগোনোর কথা ঘোষণা করে দিয়েছিল।



প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি যেমনটা এর মধ্যেই বলেছেন - কংগ্রেস এখন শুধু পাঞ্জাব, ক্ষুদ্র রাজ্য পন্ডিচেরী আর গান্ধী পরিবার - এই তিন 'পি'তেই সীমাবদ্ধ থাকবে।’



পরে বিকেলের দিকে জনতা দল (সেকুলার)-কে সমর্থন করে কংগ্রেস বিজেপিকে ঠেকানোর মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কর্নাটকের হার যে দলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে তা দলের শীর্ষ নেতারাও প্রকারান্তরে মানতে বাধ্য হচ্ছেন।



পাঞ্জাবের কংগ্রেস মন্ত্রী নভজোত সিং সিধু যেমন বলছেন, ‘জরুরি অবস্থার সময়ই অনেকে বলেছিলেন কংগ্রেস এবার শেষ। কিন্তু এত বছরের পুরনো একটা দল, গান্ধী-নেহরুর দল কীভাবে শেষ হতে পারে?’



তবে কংগ্রেসের ঘুরে দাঁড়ানোর একমাত্র রাস্তা যে এখন বিরোধী দলগুলির সঙ্গে জোট বাঁধা, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই।



তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জিও টুইট করে মনে করিয়ে দিয়েছেন, কংগ্রেস যদি জনতা দলের সঙ্গে ভোটের আগেই সমঝোতা করত, ভোটের ফল সম্পূর্ণ অন্যরকম হত।



তার দলের এমপি সুখেন্দুশেখর রায়কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কর্নাটক থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশের বিরোধী দলগুলো কি আগামী বছরের ভোটের আগে জোট বাঁধতে পারবে?



সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায় না, কিন্তু পলিটিক্স হল আর্ট অব পসিবিলিটি। কাজেই বিষয়টা নির্ভর করবে বিরোধী দলগুলোর দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। কর্নাটকে এখন যে টালমাটাল অবস্থা চলছে, ঘোড়া কেনাবেচার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে - সে সব কিছুই দরকার হত না যদি কংগ্রেস জনতা দলের সঙ্গে ভোটের আগেই সমঝোতা করত।’



‘এখন সেটা থেকে শিক্ষা নিয়ে কংগ্রেস যদি ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগেও আঞ্চলিক বিরোধী দলগুলোকে যার যেখানে প্রাধান্য তাকে সেখানে গুরুত্ব দিয়ে একটা প্রাক-নির্বাচনী সমঝোতার উদ্যোগ নেয়, তাহলে বিরোধীদের জন্য কিন্তু দারুণ ইতিবাচক ফল আসতেই পারে,’ বলছিলেন সুখেন্দুশেখর রায়।



তবে মাস-কয়েক আগে প্রধানমন্ত্রীর নিজের রাজ্য গুজরাটে যেভাবে বিজেপির আসন কমেছে ও এখন কর্নাটকেও যেভাবে তারা হোঁচট খেল, তাতে প্রবীণ কংগ্রেস এমপি প্রদীপ ভট্টাচার্য মনে করছেন নরেন্দ্র মোদি যে অপরাজেয় নন সেটা এখন প্রমাণিত।



 



প্রদীপ ভট্টাচার্য বলছিলেন, ‘একটা সময় যে ভাবা হচ্ছিল নরেন্দ্র মোদিকে ছাড়া বোধহয় ভারতবর্ষ চলবে না, আজ কিন্তু পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে মোদি ক্রমাগত দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছেন। ২০১৯ সালে তাকে বিরোধীরা হারিয়ে দিলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।’



কিন্তু কংগ্রেসের নিজের অবস্থাই যেখানে বেহাল, সেখানে মোদি তথা বিজেপিকে সেই চ্যালেঞ্জটা ছুঁড়ে দেবেন কে?



‘না, বিষয়টা একা শুধু কংগ্রেসের নয়। যে বিরোধী দলগুলো বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করে, তার জন্য তাদের সঙ্গে এখন থেকেই কংগ্রেসকে নির্বাচনী সমঝোতা আর আসন-রফার কাজ শুরু করে দিতে হবে বলে আমি মনে করি,’ বলছিলেন প্রদীপ ভট্টাচার্য।



এটা ঠিকই যে ভারতে ২০১৪ সালের নির্বাচনেও বিজেপির বিরুদ্ধে গোটা দেশে দুই তৃতীয়াংশ ভোট পড়েছিল, তার পরেও বিপুল গরিষ্ঠতা পেতে তাদের কোনও অসুবিধা হয়নি - কারণ বিরোধী দলগুলোর মধ্যে কোনও ঐক্য ছিল না।



২০১৯ সালে কিন্তু বিরোধী দলগুলো বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট হতেই পারে, বলছেন তৃণমূলের সুখেন্দুশেখর রায়।



তার কথায়, ‘১৯৭৭ ও ১৯৮৯ সালেও কিন্তু কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ভারতের তখনকার সব বিরোধী দল একজোট হয়েছিল। জনসঙ্ঘের মতো দল তো সাতাত্তরে নিজের নাম-প্রতীক মুছে ফেলে জনতা দলের সঙ্গে মিশে যেতেও দ্বিধা করেনি। একইভাবে স্বতন্ত্র পার্টি, ভারতীয় কিষাণ দলও নিজের অস্তিত্ব মুছে ফেলে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইতে সামিল হয়েছিল।’



 



‘কাজেই অতীতে যে জিনিস বারে বারে ঘটেছে, তা কেন ভবিষ্যতে আবারও ঘটবে না?’, বলছেন রায়।



কর্নাটকে শেষ পর্যন্ত কারা সরকার গড়বে, সেই উত্তর জানতে সম্ভবত আরও দিন-কয়েক অপেক্ষা করতে হবে।



কিন্তু ওই রাজ্যের ফলাফল যে বছর-খানেক বাদে সাধারণ নির্বাচনের আগে দেশের শাসক ও বিরোধী, উভয় শিবিরেই দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে, তাতে কোনও সংশয় নেই।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top