সিডনী রবিবার, ১২ই মে ২০২৪, ২৯শে বৈশাখ ১৪৩১


কিশোরী সাংবাদিকের দিনলিপি


প্রকাশিত:
২৪ মে ২০১৮ ০২:৪৮

আপডেট:
১২ মে ২০২৪ ১৭:০২

কিশোরী সাংবাদিকের দিনলিপি

প্রতিদিন ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম কিংবা ইউটিউবে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনার দৃশ্য সরাসরি পুরো বিশ্বকে জানিয়ে ব্যাপক আলোচনায় এসেছে সর্বকনিষ্ঠ সাংবাদিক জানা তামিমি।  



প্রতিদিন গুলির আওয়াজ, বোমার কম্পন কিংবা কারও স্বজনের আহাজারির শব্দ শুনে তার ঘুম ভাঙে। আবার গভীর রাতে ইসরাইলি বাহিনীর অতর্কিত হামলায় আঁতকে উঠে, তারপর নির্ঘুম রাত কাটে তার। সেই জানা জিহাদ (১১) ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরের বনু তামিম গোত্রের মেয়ে। পশ্চিম তীরের নাবি সালেহ গ্রামে ২০০৬ সালে তার জন্ম।



জানার বয়স যখন মাত্র ৭ তখন তার পরিবারের দুই সদস্যকে হত্যা করে ইহুদি সন্যরা। তখন থেকে সে সাংবাদিকতা শুরু করে। মায়ের আইফোনে ধারণ করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে পেয়ে যায় সাংবাদিকতার খেতাব। পরবর্তীতে তার ফিচার, সংবাদগুলো বিভিন্ন বার্তা সংস্থা এবং সংবাদমাধ্যম কেনা শুরু করে। 



জানাকে কেউ জানা তামিমি, কেউ জানা জিহাদ, কেউবা জানা জিহাদ আইয়াদ নামে চেনে। সংবাদিকতা ও সাহসিকতার জন্য ২০১৭ সালে তুরস্কভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল বেনিভোলেন্স পুরস্কার পায় সে। জানার ফেসবুকে এখন প্রায় ২ লাখ ৮৪ হাজার ৭২৬ জন ফলোয়ার রয়েছে। তার মা নাউয়াল তামিমি ফিলিস্তিন সরকারের উন্নয়ন মন্ত্রণায়লের নারীবিষয়ক পরিচালক। 



সম্প্রতি ন্যাদারল্যান্ডভিত্তিক জোমিনটিভি জানাকে নিয়ে ‘লোকাল হিরো’ নামে একটি সিরিজ করেছে। সেখানে মূলত তার দিনলিপি নিয়ে অলোকপাত করা হয়েছে। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও ছোট্ট শিশু কীভাবে অসম্ভবকে সম্ভব করছে সেটাই তুলে ধরা হয়েছে।



বমের সঙ্গে খেলাধুলা

গত ফেব্রুয়ারিতে প্রচারিত প্রথম এপিসোডে জানার ছোটবেলার জীবন নিয়ে কথা হয়। এক সময় সে এবং তার বন্ধুরা মিলে টিয়ারগ্যাস ও বোমার খালি কৌটা নিয়ে খেলাধুলা করতো। এমনকি তারা ইসরাইলি সেনাদের ওপর ঘৃণাভরে ওগুলো ছুঁড়ে মারতো।



ওই অনুষ্ঠানে জানা বলছিল, ‘আমার স্বপ্ন এই জুলুম ও অবরোধ থেকে বেরিয়ে একটা সুন্দর পরিবেশে বাস করা। বিশ্বের অন্যন্য শিশুদের মত করে বাঁচতে চাই। সবার মত করে আমিও বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে চাই। কিন্তু, রাত হলেই বোমের শব্দে আঁতকে উঠতে হয়। তাছাড়া, জানালা দিয়ে তাকালেই দেখতে পাই আমার কোনো বন্ধুকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে হত্যা করছে। কিছু দিন আগেও আমার কাছের বন্ধুকে ধরে নিয়ে গেছে, আমার মাকে ওরা মেরে আহত করেছে। আমার বড়িতে ঢুকে সবকিছু তছনছ করেছে। এর শেষ কোথায়? আমি বিশ্বকে জানাতেই সাংবাদিকতার পথে হাঁটছি।’ 



দুঃস্বপ্নের এক অভিযানের দিন

হঠাৎ আমাদের গ্রামে ইহুদিবাদী সেনাদের অভিযান ১৪ বছরের কিশোর আমার চাচাতো ভাই মোহাম্মদকে তারা ঘরে মাথায় গুলি করলো, সেটা যে কী ভয়ঙ্কর দৃশ্য ছিল! তার মাথার খুলির একাংশ অকেজো হয়েছে। এমন অভিযান আমাদের ফিলিস্তিনে নিত্যদিনের ঘটনা। 



ইসরাইলি ফাঁদে আমরা আটকা

আমাদের দেশেই সমুদ্র সৈকত রয়েছে। এক সময় তা দেখতে বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ আসতো। কিন্তু দুঃখের বিষয় ওই সমুদ্র আমি ছবিতে দেখেছি। কখনো সেখানে গিয়ে দেখারও সুযোগ পাইনি।



এই কনিষ্ঠ সাংবাদিক জানায়, তারা ইসরাইলি ফাঁদে আটকে আছে। তাদের এলাকা ইহুদিরা দখল করে নিয়েছে। সেখান থেকে বের হতে পারে না। ‘আমাদের কাছে মনে হয় এটা যেন বড় কোনো কারাগারা, আমরা চাইলেই কোথায় যেতে পারি না’। 



কিশোরী আহাদ তামিমিকে গ্রেফতার

গত ডিসেম্বরের একটি দিন। তাদের গ্রাম নাবি সালেহতে অভিযানে যায় ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। তারা জানার চাচাতো ভাই মোহাম্মদকে গুলি করে। তখন কিশোরী আহাদ তামিমি ঘুমচ্ছিল। গুলির শব্দে জেগে দেখে তার ছোট ভাইয়ের মাথায় গুলি এ সময় রাগের মাথায় ইহুদি সেনাদের গালে থাপ্পর মারার অপরাধে তাকে ধরে নিয়ে যায়। এবং আট মাসের জেল দেয়।



‘সত্যির তার জন্য আমরা খুবই কষ্ট পাচ্ছি। সে আমার ক্লাসে বড় হলেও এক সঙ্গেই চলতাম।’



দুঃস্বপ্নময় জীবন

জানা তার শেষ সাক্ষাৎকারে বলেছিল তার গ্রাম নাবি সালেহ কথা। সেখানকার দুঃস্বপ্নময় জীবনের কথা। কোনো বন্ধুর সঙ্গে মিশতে পারে না, কারো বাড়িতে ঘুরতে যেতে পারে না। কারণ, সারাক্ষণ তাদের নজরদারিতে রাখা হয়, নয়তো কারো না কারো ওপর হামলা করার কারণে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে থাকে। গুলি, বোমা, চেয়ারগ্যাস, জলকামানের সঙ্গেই বাস করতে হচ্ছে। আর রাত হলেই একা হয়ে যাই তাই সারা রাত দুঃস্বপ্নে কাটে।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top