সিডনী মঙ্গলবার, ২১শে মে ২০২৪, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


তরুণ ও যুবকদের মাধ্যমেই দেশে প্লাস্টিকের দূষণ বাড়ছে


প্রকাশিত:
১৯ জানুয়ারী ২০২০ ০২:৩০

আপডেট:
২১ মে ২০২৪ ০১:০৩

ফাইল ছবি

প্রভাত ফেরী ডেস্ক : পরিবেশ দূষণে প্লাস্টিক বর্তমানে এক আতঙ্কের নাম। হু হু করে বাড়ছে পরিবেশ বিধ্বংসী এই পণ্যের ব্যবহার। বাংলাদেশে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে দেশটির তরুণ এবং যুব জনগোষ্ঠী পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিক দূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ি। গবেষণায় বলা হয়েছে, এই তরুণ ও যুব জনগোষ্ঠী একবার ব্যবহার করা হয় এমন সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক পণ্য বেশি ব্যবহার করে। গবেষণার এই ফলাফল এমন এক সময়ে পাওয়া গেল যখন সারা বিশ্বে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সার্বিকভাবে প্লাস্টিকের ব্যবহার একেবারে কমিয়ে আনার লক্ষ্যেই এই চেষ্টা। বিবিসি

দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত মানুষের জীবনে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার ব্যাপক। সকালে ওঠে যে ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করছেন এবং যে টিউব থেকে টুথপেস্ট আসছে, তার সবকিছুই প্লাস্টিকের তৈরি। এ ছাড়া দিনে প্রতিটি খাবার এবং জীবনযাত্রায় প্লাস্টিক পণ্য এখন অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্লাস্টিক যেহেতু পচনশীল নয়, তাই ব্যবহারের পর যেসব প্লাস্টিক পণ্য ফেলে দেওয়া হয়, তার অধিকাংশই যুগের পর যুগ একইভাবে পরিবেশে টিকে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এক গবেষণায় বলেছে, মুদি দোকান থেকে কেনা পণ্য বহন করার জন্য যেসব ব্যাগ ব্যবহার করা হয়, সেগুলো প্রকৃতিতে মিশে যেতে ২০ বছর সময় লাগে। চা, কফি, জুস কিংবা কোমল পানীয়ের জন্য যেসব প্লাস্টিকের কাপ ব্যবহার করা হয়, সেগুলো ৫০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। আর ডায়াপার এবং প্লাস্টিক বোতল ৪৫০ বছর পর্যন্ত পচে না।

তরুণ-যুবকরা যেভাবে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক দূষণ করছে : বাংলাদেশে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার নিয়ে গবেষণাটি করেছে বেসরকারি সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন। ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের মধ্যে ওই গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, তরুণ এবং যুবকরাই পরিবেশে প্লাস্টিক দূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ি। যে সব খাবারের সঙ্গে প্লাস্টিকের প্যাকেট রয়েছে, সেগুলোই সবচেয়ে বেশি ভোগ করছে তরুণ এবং যুবকেরা, যাদের বয়স ১৫-৩৫ বছরের মধ্যে।

গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, বাংলাদেশে যত সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার হয়, তার ৩৫ শতাংশ ব্যবহার করে ১৫-২৫ বছর বয়সি জনগোষ্ঠী, আর এ ধরনের প্লাস্টিকের ৩৩ শতাংশ ব্যবহার করে ২৬-৩৫ বছর বয়সিরা। অর্থাৎ বাংলাদেশে তরুণ এবং যুবকরাই সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের সবচেয়ে বড় ব্যবহারকারী, কারণ মোট সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ৬৮ শতাংশ ব্যবহার করছে এই জনগোষ্ঠী।

এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের প্রধান নির্বাহী শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ২০১৮ সালে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং সিলেট বিভাগীয় শহরে ১২শ মানুষের ওপর তারা জরিপটি চালান। এ ছাড়া ২০১৯ সালে জরিপ চালানো হয়েছে ৮শ জনের ওপর। এর মধ্যে ছিলেন, প্লাস্টিক উৎপাদক, খুচরা বিক্রেতা এবং প্লাস্টিক ব্যবহারকারী।

শাহরিয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে এখন প্রতিবছর যে পরিমাণ বর্জ্য হয়, তার ৮৭ হাজার টন হচ্ছে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক। এসব প্লাস্টিক রি-সাইকেল করা যায় না। ফলে এগুলোর জায়গা হচ্ছে নদী-নালা-খাল-বিলে। জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, পরিবেশের ওপর প্লাস্টিকের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে ব্যবহারকারীদের কোনো ধারণাই নেই। তবে ৬০ শতাংশ ব্যবহারকারী বলেছেন, সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের বিকল্প দেওয়া হলে তারা সেটি গ্রহণ করতে রাজি আছেন।

তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, আবর্জনার মধ্যে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের পরিমাণ ছিল মাত্র তিন শতাংশ। অথচ ২০১৯ সালে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২১ শতাংশে। জরিপে দেখা গেছে- রেস্টুরেন্ট, আবাসিক হোটেল, এয়ারলাইন্স এবং সুপারশপ থেকে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক সবচেয়ে বেশি আসছে। এর মধ্যে বেশি আসে রেস্টুরেন্ট থেকে। এরপর রয়েছে এয়ারলাইন্স এবং আবাসিক হোটেল। আবাসিক হোটেল থেকে যেসব প্লাস্টিক বর্জ্য আসে, সেগুলো হচ্ছে শ্যাম্পুর বোতল ও মিনি-প্যাক, কন্ডিশনার প্যাকেট, টুথপেস্ট টিউব, প্লাস্টিক টুথব্রাশ, টি ব্যাগ এবং বিভিন্ন খাবারের প্যাকেট। এয়ারলাইন্স থেকে আসে প্লাস্টিকের চামচ, স্ট্র, প্লেট, কাপ, গ্লাস এবং আরও নানা ধরনের প্লাস্টিকের মোড়ক।

এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের প্রধান নির্বাহী শাহরিয়ার হোসেন মনে করেন, সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক থেকে সরে আসার লক্ষ্যে এখনই কাজ শুরু করতে হবে। যেসব পণ্যের জন্য প্লাস্টিকের ব্যবহার একেবারেই আবশ্যক নয়, সেগুলো এখনই বন্ধ করা যেতে পারে বলে তিনি মত দেন। আর যেসব পণ্যের জন্য কিছু সময় প্রয়োজন সেগুলো ধাপে-ধাপে ব্যবহার বন্ধ করতে পারে বলে উল্লেখ করেন শাহরিয়ার। এ ছাড়া একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের হাইকোর্ট সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছে যে আগামী এক বছরের মধ্যে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top