সিডনী মঙ্গলবার, ২১শে মে ২০২৪, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


মার্কিন বাহিনী কি আফগানিস্তান ছাড়বে?


প্রকাশিত:
২৬ জুন ২০১৮ ০৬:২২

আপডেট:
২১ মে ২০২৪ ০২:২০

মার্কিন বাহিনী কি আফগানিস্তান ছাড়বে?

সম্প্রতি কিছু আশার আলো দেখতে পাচ্ছে আফগানিস্তান। ঈদকে সামনে রেখে তালেবানরা যে তিন দিনের অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দিয়েছিল, ১৭ বছরের যুদ্ধে এ ধরনের ঘটনা অভাবনীয়। দেশের বিভিন্ন জায়গায় তালেবানরা জড়ো হয়ে আরও স্থায়ী অস্ত্রবিরতির ডাক দিয়েছে। আর তালেবানদের অস্ত্রবিরতির মেয়াদ বাড়াতে বলেছে কাবুল। দুঃখজনক হলো তারা তাদের যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরে গেছে এবং আফগান বাহিনীর বিরুদ্ধে আবার হামলা শুরু করেছে।



এদিকে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি এবং এমনকি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বিবৃতিতে বলেছেন যে তালেবানদের সাথে যে কোন আলোচনায় আফগানিস্থানে অবস্থানরত বিদেশী সেনাদের প্রসঙ্গ থাকবে। এটা অনেক বড় ধরনের অগ্রগতি। বহু বছর ধরে তালেবানরা বলে আসছে যে মার্কিন সেনারা যুদ্ধ বন্ধ করে দেশ ত্যাগ না করলে তারা অস্ত্র ত্যাগ করবে না।



এর অর্থ কি এই যে আমেরিকার দীর্ঘতম যুদ্ধের ইতি টানতে তালেবানদের সাথে সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে আলোচনা করতে চাচ্ছে ওয়াশিংটন? এই প্রশ্নের উত্তর হলো সেনা প্রত্যাহার খুবই বাস্তবিক এবং বোধগম্য একটা সম্ভাবনা- কিন্তু সেটা এখনই নয়, আরও ভবিষ্যতের ব্যাপার। তবে যখনই সেনা প্রত্যাহার করা হোক না কেন, সেটা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং মার্কিন স্বার্থের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে।



বাস্তবে প্রায় এক দশক ধরে আফগানিস্তানে মার্কিন সরকার খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে নেই। ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একটা অসামান্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন- ধারাবাহিকভাবে মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। ২০১৪ সালের শেষ নাগাদ আফগানিস্তানে যুদ্ধের ভূমিকা থেকে বেরিয়ে এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং তখন সেখানে যে এক লাখ সেনা ছিল, তাদের অধিকাংশই ফিরে এসেছে।



এরপর আসলো ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বছরের আগস্টে যখন তিনি আফগানিস্তান কৌশল ঘোষণা করেন, তখন তিনি স্বীকার করেন যে প্রাথমিকভাবে সেখানে সেনা রাখার ব্যাপারটা তার কাছে ভালো লাগেনি। কিন্তু এক পর্যায়ে এসে সেখানে সেনাদের শুধু বহালই রাখেননি তিনি, বরং তাদের সংখ্যা ও শক্তিও বাড়িয়েছেন। আফগানিস্তানে ‘পরিস্থিতি বিবেচনা’ করে কৌশল গ্রহণের পক্ষে ট্রাম্প। এর অধীনে কোন আগাম নির্ধারিত দিনক্ষণ ঠিক না করে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে সেখানে মার্কিন সেনা থাকবে কি না। এ কৌশলের কারণেই সেনা প্রত্যাহারের একটা সুযোগ এসেছে হোয়াইট হাউজের সামনে।



যদি হোয়াইট হাউজ মনে করে যে যুদ্ধক্ষেত্রে শক্তি বাড়িয়ে কোন লাভ হচ্ছে না এবং তালেবানরা এখনও আলোচনার ব্যাপারে আগ্রহী নয়, তাহলে সেনা প্রত্যাহারের কথা ভাবতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে অবস্থানের ব্যাপারে কখনই স্বচ্ছন্দ্য ছিলেন না ট্রাম্প। এবং তিনি এটাও জানেন, তার যে মূল রাজনৈতিক সমর্থক গোষ্ঠি রয়েছে, তারাও চায় না আমেরিকার বাইরে মার্কিন সামরিক মোতায়েনের মাত্রা ও সংখ্যা বাড়ানো হোক।



এর অর্থ এই নয় যে, শিগগিরই সেখান থেকে সেনা সরিয়ে নেয়া হবে এবং তালেবানদের দাবির প্রেক্ষিতে সেটা করা হবে। যদি সেনা প্রত্যাহার করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সেটা নিজের হিসেব অনুযায়ী নিজের পছন্দের সময়েই করবে।



সেনা প্রত্যাহারের পক্ষে ও বিপক্ষে দুই দিকেই জোরালো যুক্তি রয়েছে। একদিকে ১৭ বছরের সামরিক উপস্থিতির কারণে তালেবানদের বিস্তার রোধ করা যায়নি। ২০০১ সালের পর তালেবানদের এখন সবচেয়ে বেশি এলাকা দখলে রয়েছে। মার্কিন উপস্থিতি দিয়ে আইএসের আগমন ও শক্তি বৃদ্ধিও ঠেকানো যায়নি। আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক তৎপরতায় প্রায় আড়াই হাজার সেনা নিহত হয়েছে। শত সহস্র বিলিয়ন ডলার খরচের কথা বাদই দিলাম। এক হিসেবে প্রতি এক ঘণ্টায় সেখানে ৪ মিলিয়ন ডলার ব্যায় হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের।



এরপরও সেনা প্রত্যাহারের কিছু ঝুঁকিও রয়ে গেছে। তালেবানরা বলছে, বিদেশী সেনারা দেশ ছাড়লে তারা যুদ্ধ বন্ধ করবে। কিন্তু মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হলে তারা আরও অবাধে যুদ্ধ করার সুযোগ পেয়ে যাবে। মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান ছেড়ে গেলে যুদ্ধক্ষেত্রে বিরাট একটা সুযোগ পেয়ে যাবে তালেবানরা এবং দীর্ঘ দিন ধরে আফগান সরকারকে উৎখাতের যে চেষ্টা করছে তারা, সে সুযোগ পেয়ে যাবে তারা।



আর এই লক্ষ্য যদি তাদের অর্জন না-ও হয়, তবু তালেবানরা আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর উপর বড় ধরনের আঘাত হানতে পারবে, আরও বহু এলাকার দখল নিতে পারবে এবং নড়বড়ে আফগান রাষ্ট্রের অবস্থার আরও অবনতি ঘটাবে। এর ধারাবাহিকতায় এ অঞ্চলে বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে, অবিচার ও গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়বে। আল কায়েদা, আইএসের যে সব যোদ্ধা আফগানিস্তান-পাকিস্তান অঞ্চলে অবস্থান করছে, তারা এই অস্থির পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে নতুন নতুন ঘাঁটি গড়ে তুলবে।



যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তাই অপ্রিয় সত্য হলো আফগানিস্তানে থেকে যাওয়া বা ফিরে যাওয়া দুটোই সমস্যাজনক। আফগানিস্তানে চোরাবালির প্রসঙ্গে বলা যায়, এখানে একক কোন ভালো উপায় নেই।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top