সিডনী শনিবার, ১৮ই মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

এক উভদেহী শিশুর বেড়ে ওঠার গল্প : কাজী কেয়া


প্রকাশিত:
২৬ জুন ২০২১ ২০:০৭

আপডেট:
২৬ জুন ২০২১ ২০:৩৪

ছবিঃ কাজী কেয়া

 

এক

রাতভর হাসপাতালের বারান্দায় কাটিয়ে ভোরে খবরটা পেলেন শাফায়েত। নার্স এসে বললেন, আপনার সন্তান ভূমিষ্ট হয়েছে, এবং সুস্থ আছে।
তো, ছেলে, না মেয়ে?
আপনি কী আশা করেন?
দুটো ছেলের পর একটি মেয়ে আশা করেছিলাম।
আপনি যেভাবে তাকে ভাবেন, হয়তো তেমনই সে।
নার্সের কথার অন্তর্নিহিত অর্থ বোঝার চেষ্টা না করেই বেশ প্রফুল্ল মনে শাফায়েত ছুটে গেলেন কেবিন নং একশ তিনে। মা ও নবজাতককে দেখতে। শাফায়েত সাহেবের বিশ্বাস তার এই তৃতীয় সন্তানটি অবশ্যই মেয়ে। কারণ, নার্স চামেলি সে—কথাই তো বোঝালেন, ‘আপনি যেভাবে তাকে ভাবেন।’ শাফায়েত তো শিশুটিকে কন্যা হিসেবেই ভেবে নিয়েছেন।
ফুটফুটে অপরূপ দেখতে। ঠোঁটজোড়া গোলাপি কিশমিশের মতো । চোথজোড়া মায়ামাখা, মুখে মিষ্টি হাসি। সদ্যজাত শিশু এমন উচ্ছল হতে পারে ভাবাই যায় না। খুব খুশি শাফায়েত সাহেব। শিশুটি বাবার দিকে পিটপিট চোখে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বাবা, হেসে মাথা দোলাতেই সুন্দর হাসিটা ছড়িয়ে দিলো।
মাও খুশি। খুব খুশি। শাফায়েত হাসিমুখে বললেন, কাল সকালেই রিলিজ করিয়ে নিয়ে যাবো বাসায়। তো, মেয়েটির নাম কী রাখা যায় বলোতো! এটা কী মাস যেন? মৃদুস্বরে শিশুর মা মনিজা বললেন, জুন।
বাহ, ওর ডাকনাম তবে জুনই রাখলাম। পরে একটা ভালো দেখে নাম রাখা যাবে। কী বলো?
‘হুম!’ মনিজার ছোট্ট উত্তর।


বাসায় ফিরলে স্বজনরা অনেকে দেখতে এলো জুনকে।

কেউ বলল, অপরূপা।
কেউ বলল, অপ্সরী।
জুনের ছোটখালা মৌমী বলল, এ আমাদের ছোট্ট সুন্দর রাজকুমারী। এই বলে তুলতুলে গালে একটু আদর বুলিয়ে দিলো।
নতুন শিশুর জন্য উপহারের কমতি নেই। খেলনা, দোলনা, কিডবক্স, রঙিন রঙিন ছোট্ট পোশাক। কত যে জিনিস?
জুনকে পরানো হলো চাচির দেয়া প্রজাপতি আর ফুল আঁকা সুন্দর ফ্রকটা। ওকে কোলে নিয়ে একটু ঝুলিয়ে দেখল ছোটখালা। ‘ওহো, এ—তো সত্যি—সত্যিই পরীর দেশের মেয়ে’ এই বলে জুনকে দোলাতে লাগল।
জুন আরো সুন্দর হয়ে উঠছে দিনদিন। আদরের কোনো কমতি নেই। যত্নেরও শেষ নেই। বাবার আরাধ্য কন্যাসন্তান বলে কথা। ইদানীং শাফায়েত অফিস থেকে একটু আগেভাগেই বাসায় ফেরেন। কন্যার টানে। প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরেই, ‘জুন মামনি তুমি কেমন আছো’- বলেই আগে তার চাঁদমুখটা দেখে মিষ্টি করে হাসেন। জুনও বাবার দিকে চেয়ে খুশিতে হাত—পা নাচাতে থাকে।
বছর না পুরোতেই ঘটা করে আকিকা দিয়ে ভালে একটা নামও রাখা হলো জুনের। শাফিনা সুলতানা। বাবার নামের সাথে মিল রেখে। সবার পছন্দ হলো নামটা।
 জুন বড়ো হচ্ছে। যতো দিন যাচ্ছে তারমধ্যে একটু একটু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। পুতুলের চেয়ে বল নিয়ে খেলতেই বেশি পছন্দ করে। তাও একা একা। শুভ আর রাজু ছোটবোনটিকে নিয়ে খেলতে চায়, কিন্তু সে তাদের ডাকে যায় না। পাঁচবছর বয়সেই ওর মধ্যে বিপরীত চিহ্ন স্পষ্ট হতে থাকে। মা’র চোখেই প্রথমে তার বিপরীত আদলটা ধরা পড়ে। তিনি কাউকে তা বুঝতে না দিয়ে মেয়েদের সাজে যতরকম সম্ভব সাজিয়ে রাখেন। কাজল এঁকে দেন চোখে। কপালের একপাশে টিপ এঁকে দেন। তারপরও তার মনটা সন্তানের ভবিষ্যৎ ভেবে শংকায় থাকে। তবে, শাফায়েত সাহেব এখনো জুনের বৈপরীত্য আঁচ করতে পারেননি। কন্যার মায়ায় তিনি এখনো চটজলদি বাড়ি ফেরেন।
কিন্তু তার কাছে ব্যাপারটা স্পষ্ট হতে বেশিদিন সময় নিলো না। জুনের অসুস্থতায় সব পরিষ্কার হয়ে যায়। কদিন ধরে ঠাণ্ডাজ্বরে ভুগছে জুন। আর দেরি করা উচিৎ নয় মনে করে শাফায়েত সাহেব সেদিন বিকেলের আগেই বাসায় ফিরলেন। বললেন, শিশুবিশেষজ্ঞ ডাক্তার ইমরুলকে ফোনে নাম দিয়ে রেখেছি। পাঁচটার মধ্যে যেতে হবে। জলদি রেডি হয়ে যাও মেয়েকে নিয়ে।
‘হোমিও খাইয়েই দেখি না কদ্দিন। শিশুদের জন্য হোমিও অষুধ ভালো কাজ করে। তুমি নাহয় আইডিয়াল হোমিও থেকে ওর অসুখের কথা বলে অষুধ নিয়ে এসো।’
মনিজার কথায় তাচ্ছিল্যভরে হেসে উঠলেন শাফায়েত- হোমিওটোমিও করে অযথা সময়ক্ষেপণ। মেয়েটার তড়িৎ চিকিৎসা দরকার। দেরি করো না চলো। শিশু স্পেশিয়ালিস্ট ড. ইমরুল হাসান। শিশুরোগের সবচেয়ে বড়ো ডাক্তার বুঝলে!
অগত্যা, মনিজা বেগম জুনকে নিয়ে রেডি হলেন। পাঁচটার পাঁচমিনিট আগেই তারা চেম্বারে পৌঁছালেন। খানিক্ষণ বসতেই ডাক এলো জুন!
বাবা—মা দুজনই ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকলেন জুনকে নিয়ে।
‘বাহ. সুন্দর সোনামনিটা তো নামটাও সুন্দর। জুন মাসে জন্মেছে বুঝি!’ উত্তরের অপেক্ষা না করেই ডাক্তার সাহেব বললেন, জুনসোনা জিবটা দেখি, হা করো তো।

জিবটা দেখে, স্টেথিস্কোপ দিয়ে বুক, পেট পরীক্ষা করতে—করতে একসময় গম্ভীর হয়ে গেলেন ডাক্তার। কী যেন ভাবলেন, তারপর বললেন, ওহ, থার্ড জেন্ডার বেবি? কথাটা বলেই বললেন, এখনই সময়, ভালো চিকিৎসা করলে হয়তো স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে এটা সম্ভব। আল্লাহ নিশ্চয় ভালো কিছু বুঝেছেন। সমস্যাটা হলো আমাদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজটাকে নিয়ে। বুঝলেন, শাফায়েত সাহেব, শিশুটিকে যেভাবেই হোক পড়াশোনা করাবেন। অবশ্য, এ—ধরনের বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করাটাও ঝামেলার ব্যাপার। আর যদি বেবির মায়া ত্যাগ করে ওর ভালোটা চিন্তা করেন, তাহলে, নিউ সান নেদারল্যান্ড—এর সঙ্গে যোগাযোগ করে ওদের হাতে ওকে দিয়ে দিন। নেদারল্যান্ডের এই অর্গানাইজেশনটা থার্ড জেন্ডার বেবিদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কাজ করে। আমি ওদের ঠিকানা, ফোন নাম্বারটা দিচ্ছি এখনই। বলেই খচখচ করে লিখে প্যাডের কাগজটা ছিঁড়ে শাফায়েত সাহেবের হাতে দিলেন।
শাফায়েত সাহেব এ— কী শুনলেন? তার কত প্রত্যাশার, কত স্বপ্নের সন্তান, তিনি একটি কন্যাসন্তান চেয়েছিলেন। আর সেটাই তো এতদিন ভেবে এসেছেন, কত মায়াডোরে বাঁধা তার প্রিয় কন্যাসন্তানটি থার্ড জেন্ডারের? কিন্তু, মনিজা তাকে এতদিন এটা জানায়নি কেন? এটা ভাবতে ভাবতে ঠিকানা লেখা কাগজটা পকেটে রেখে, কেমন অসহায় চোখে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে থাকেন শাফায়েত সাহেব। জুনের আম্মুও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকেন।
ডাক্তার সাহেবের চোখ এড়া্য় না তাদের বিষণ্ণ ভাবটা। স্বাভাবিক করার জন্য হেসে বলেন, আরে চিন্তা কিসের? শিশু, শিশুই। দেখবেন এই শিশুটিই একদিন জগৎখ্যাত প্রতিভা হয়ে উঠবে। তবে হ্যাঁ, অবশ্যই নিউ সানের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন কিন্তু। কথা ক’টা বলে, প্রেসক্রিপশনটা দিয়ে বললেন, একটাই অষুধ দিলাম। দিনে তিনবার । খাওয়ার আগে। এক চা—চামচ করে। ঠিক হয়ে যাবে দুদিনেই।

 

দুই

নিয়তিকে মেনে নেয়া ছাড়া উপায় কী! শাফায়েত সাহেব নিজেকে সামলে নিয়েছেন। মনিজা বেগমও সত্যকে মেনে নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই নৈন্দিন কাজে নিমগ্ন থাকেন। তারা সবসময় সজাগ থাকেন, যাতে জুন ঘুনাক্ষরেও উপলব্ধি না করে বাবা—মা তারপ্রতি সামান্যতম অবহেলা করছে। স্বজনপরিজনদের নিয়ে বেশ আনন্দ করেই জুনের পঞ্চম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হলো। এরমধ্যেই মায়ের কাছ থেকে লেখা, আঁকা, পড়াশোনাও চলছে তার। স্বরবর্ণ—ব্যঞ্জনবর্ণ লিখতে শিখেছে। ভাইরা স্কুল যাই, জুনও বায়না ধরল স্কুলে ভর্তি হবে। এবং ক্রমেই জিদটা বাড়তে থাকে। মা প্রতিদিনই বোঝান, অবশ্যই তুমি স্কুলে যাবে, খুব ভালো স্কুলে তোমাকে ভর্তি করা হবে। এজন্য ঘরে আরো ভালো করে লেখাপড়া শিখতে হবে। মা বোঝালেও বুঝতে চায় না সহজে। বলে, অনেক শিখেছি, বাকিটা স্কুলে গিয়ে শিখব।
এমন অবস্থায় মনিজা বেগম একদিন শাফায়েত সাহেবকে ভ্যাপারটা জানান। শাফায়েত সাহেব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, না, সমাজকে ব্যাপারটা জানতে দেয়া যাবে না। এজন্য মনটাকে কঠিন করতে হবে। ওর ভবিষ্যৎ ভাবতে গেলে মায়া ছাড়তেই হবে। আজই আমি নিউ সানের সঙ্গে যোগাযোগ করব।
কিন্তু ওটুকু মেয়ে কি আমাদের ছেড়ে যেতে চাইবে?
এজন্য ওকে প্রস্তুত করে নিতে হবে। সেটা খুব কৌশলে করতে হতে। আমরা দুজন মিলেই ওকে বোঝানোর কাজটা করব। স্কুলে ভর্তি হওয়ার কথা বললেই বলতে হবে, তোমার ভাইদের চেয়েও ভালোভাবে লেখাপড়া করতে হবে তোমাকে। এজন্য আমরা তোমাকে বিদেশে পাঠাবো। খুব শিগ্রি যাবে তুমি। সেখানে বিদেশি ছেলেমেয়েদের সাথে পড়বে। অনেক আনন্দে থাকবে। ভালো থাকবে। আর ছুটি পেলেই দেশে আসবে। ভারি মজা হবে তোমার ইত্যাদি..।
এ—ভাবেই বাবা—মা প্রায়ই ওর সাথে আলাপ করেন। জুনও বিদেশে পড়তে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠে। টেলিভিশনে বিদেশি ছোটদের সিনেমায় শিশুদের স্কুলের দৃশ্য আর খেলাধুলা দেখে দেখে ওর উৎসাহ আরো বেড়ে যায়। এখন প্রতিদিনই সে নিজে থেকেই তাগিদ দিয়ে চলেছে কবে যাবো বিদেশে? আর কতদিন আম্মু? আব্বু অফিস থেকে ফিরলে, তাকেও একই প্রশ্ন করে চলে কবে যাবো? কবে আব্বু?
শুভ আর রাজুও জেনে গেছে তাদের বোনটি বিদেশে যাবে। সেখানে খুব ভালো স্কুলে ভর্তি হবে। আর সে নিয়ে বোনটির সঙ্গে গল্পও করে ওরা। রাজু বলে, জুনসোনামনি, তুমি বিদেশ গিয়ে আমাদের ভুলে যাবে নাতো? জুন মাথা নাড়ায় না, ভুলব না। শুভ বলে, বোন, তুমি কিন্তু ফোন করবে রোজ দু—তিনবার। জুন বলে, হ্যাঁ, করব। এমন আরো কত কথা!
এরমধ্যে শাফায়েত সাহেব নেদারল্যান্ডে নিউ সান কর্তুপক্ষের সঙ্গে ইন্টারনেটে কথাও বলেছেন। তাদের কথামতো জুনের জন্মনিবন্ধন সনদ আর ছবি পাঠানোর পর তারা বেশ গুরুত্বের সঙ্গে ব্যাপারটা নিয়েছে। তাদের বাংলাদেশেস্থ অফিস ঢাকার গুলশানে। নেদারল্যান্ড থেকে ওরা ঢাকার অফিসে বিষয়টি জানিয়েছে। ঢাকার অফিস থেকে শাফায়েত সাহেবকে জানিয়েছে, জুনের তিনকপি ছবি এবং যাবতীয় তথ্যসহ জুনকে নিয়ে সোমবারে তাদের সঙ্গে দেখা করতে। আর ওরা এব্যাপারে একটা নো অবজেকশন পত্রে অভিভাবকের স্বাক্ষর নেবে। ওরাই জুনের পাসপোর্ট—ভিসা করিয়ে নেবে। বিষয়টি জুনের আম্মুও জানেন।
 তো যথাসময়ে জুনকে নিয়ে শাফায়েত সাহেব নিউ সানের ঢাকা অফিসে গেলেন। সাথে জুনের আম্মুও। ওখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মি. ইয়াম জুনকে দেখে খুব খুশি। তিনি ভাঙা ভাঙা বাংলাং ওর সঙ্গে বেশ সখ্য গড়ে তুললেন। বললেন, তুমি যে বাবা—মাকে ছেড়ে ওখানে যাবে মন খারাপ করবে নাতো!
জুন খুব স্বাভাবিকভাবে বলর, আমি তো ওখানে পড়াশোনা করতে যাবো। লেখাপড়া শেষ করে তো ফিরবোই। মি. ইয়াম হাসলেন। হেসে বললেন, তা হয়তো ফিরবে কোনোদিন, কিন্তু তুমি আমাদের দেশের মানুষ হয়ে যাবে তো!
কিছু বুঝল কিনা জুন, জানি না । সে মায়াময় চোখে তাকালো বাবা—মার দিকে। মা ওকে বুকে জড়িয়ে নিলেন।

তিন

না, আত্মীয়—স্বজন, পাড়াপড়শি কাউকেই জানালেন না। জুনের পাসপোর্ট—ভিসা রেডি হয়ে গেল। দিনটি ছিল শুক্রবার। ছুটির দিন। খুব ভোরবেলা জুনকে নিয়ে এয়ারপোর্টে গেলৈন শাফায়েত সাহেব। সঙ্গে তা মা এবং দু’ভাই শুভ আর রাজুও গেল। ওখানে আগে থেকেই নিউসানের দুজন প্রতিনিধিসহ মি. ইয়াম উপস্থিত আছেন। মি. ইয়াম পরিচয় করিয়ে দিলেন তাদেও সঙ্গে নতুন দুজনের। ওদের একজন জন টমাস। এই টমাসই জুনকে নেদারল্যান্ডে পৌঁছে দিয়ে আসবে।
সকাল দশটা তিরিশে বিমান ছাড়বে। জুনকে নিয়ে মি. টমাস এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে ঢুকে গেলেন। ওখানে পাসপোর্ট এন্ট্রি হয়ে গেলে, হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালেন টমাস। জুনও ছোট্ট হাতটি নেড়ে বাবা—মা, প্রিয় ভাইদের দিকে তাকালো একবার। ওর মুখটা কেমন মলিন হয়ে ছিল। এরপর যাত্রিদের ভিড়ে মিলিয়ে গেল। বাবার চোখদুটি ছলছল করছিল। মা কান্নাটা চেপে রাখতে পারলেন না। ভাইদুটিও গুমরে উঠল।

মি. ইয়াম ওদের সান্তনা দিয়ে বললেন, দুঃখ করেন না। গড তাকে ভালো রাখবে। এবং একদিন সে সমাজকে জানিয়ে দেবে স্বাভাবিক মানুষ যা পারে, সেও তা পারে। সেও মানুষ।

চার

জুন ভালো আছে। বছর দুয়েক ভিডিও কলে বাবা—মা, ভাইয়াদের সঙ্গে কথা বলেছে নিয়মিত। খুব ভালো আছে সে। ওর মতোই থার্ডজেন্ডার শিশুদের বন্ধু হিসেবে পেয়েছে। তবে, বাঙালি সন্তান ও একাই। অন্যেরা নেদারল্যান্ড, ইতালি, হাঙ্গেরিয়া, সুইডেনসহ নানাদেশের শিশু। নিউ সান বিশ্বজুড়ে এধরনের শিশুদের নিজস্ব খরচে স্বাবলম্বি করে তোলে। মানুষ হিসেবে তারাও যে সমান যোগ্য সেটা প্রতিষ্ঠা করাই ওদের লক্ষ্য। ওখানে যাওয়ার পর বাংলা পড়া আর হয়ে ওঠেনি। ইংরেজি ভাষাটা রপ্ত করেছে ওখানকার মানুষদের মতোই। ওরা জানিয়েছে তাদের জুন পড়াশোনায় খুব ভালো। এমন মেধাবিদের ওরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ দিয়ে থাকে। শিক্ষা অর্জনের পর ওরা জীবিকার পথ বেছে নেয়।
প্রতিষ্ঠানের নিয়ম, বয়স সাত বছর হয়ে গেলে অভিভাবকদের সঙ্গে শিশুদের আর যোগাযোগ রাখতে দেয়া হয় না। কারণ, তখন তারা বুঝতে শেখে মানুষ হয়েও তারা আলাদা এক সত্তার অধিকারী্। তাদের ভেতরেই তাদের থাকতে হয়। মনস্ত্বাত্বিকভাবে তাদেরকে সজাগ করে দেয়া হয় এবং বাস্তবতাকে মেনে নেয়ার বোধ তাদের মধ্যে জাগ্রত করা হয়।
না, শাফায়েত সাহেব এবং মনিজা বেগম কেউ এখন মেয়েটির জন্য মন খারাপ করেন না। বরং তারা মনে মনে খুশি তাদের সন্তানটিকে অন্তত আপন সমাজের অসম্মান—অবহেলা সয়তে হয়নি। সে তার পরিবারটিকেও বাঁচিয়েছে। একটি চাকরিনির্ভর মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া অমন একটি থার্ড জেন্ডার শিশুকে রক্ষা করার ভার তাদের পক্ষে বহন করা সম্ভব ছিল না। একথা ভেবে শাফায়েত সাহেব নিউ সান নেদারল্যান্ড—কে ধন্যবাদ জানান।

 
পাঁচ

সময় গত হয়েছে অনেক। শাফায়েত সাহেব মাঝারি গোছের সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন কয়েক বছর আগে। দু’ সন্তান শুভ ও রাজু তারাও পড়াশোনা শেষ করে পেশাগতজীবনে প্রবেশ করে সংসারিও হয়েছে নিজেদের মতো করে। ছেলেদুটো চাকরিসূত্রে ঢাকার বাইরে দুটি জেলাশহরে থাকে। সন্তানদের মানুষ করতে গিয়ে সঞ্চয় করা হয়ে ওঠেনি। পৈত্রিক ভিটেজমি বেচে এবং এককালীন পাওয়া অবসরভাতার কিছু অংশ মিলিয়ে ঢাকায় ছোট একটা ফ্ল্যাট কিনে নিজেরা দুজন বসবাস করেন। পেনশনের যৎসামান্য মাসিক ভাতায় একভাবে চলে যাচ্ছে জীবন। অসুখবিসুখে বা দুঃসময়ে খরচ করার মতো বাড়তি কোনো টাকা হাতে থাকে না।
জুনের সঙ্গে দীর্ঘ বাইশ বছর কোনো যোগাযোগ নেই তাদের। তবে, মনিজা বেগম মেয়েটির কথা ভেবে সময় সময় দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। তার চোখে কষ্টের অশ্রু চিকচিক করে ওঠে। তার কথা খুব মনে পড়লে পুরনো অ্যালবাম খুলে শিশু জুনের উচ্ছল, মায়াভরা মুখের ছবিগুলো দেখেন। একসময় আঁচলে অশ্রু মুছে সযত্নে অ্যালবামটা রেখে দেন। শুভ—রাজুও পরে জেনেছে তার আদরের ছোট্ট বোনটি প্রকৃত অর্থে একজন ক্লীব মানুষ হয়ে জন্ম নিয়েছিল। তাই জুনের প্রতি তাদের আর কোনো আগ্রহ থাকেনি। তারা ভুলেও কখনো জানতে চায়নি সে এখন কোথায়, কেমন আছে।
হঠাৎ ক’দিন ধরে শাফায়েত সাহেব অসুস্থ। কাশি আর শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা। পুরো ইউরোপ কাঁপিয়ে এখন এদেশেও মহামারী করোনা ধেয়ে এসেছে। সামান্য সর্দিকাশি হলেই এখন করোনা ভেবে শঙ্কিত হয়ে পড়ে হাসপাতালের ডাক্তার—নার্সরা। করোনার বড় চিহ্ন গায়ে জ্বর থাকা। কিন্তু জ্বর যেহেতু নেই, তাই ডিসপেন্সারি থেকে সাধারণ কাশি কমার টেবলেট কিনে এনে কদিন খেলেন শাফায়েত সাহেব। এতে একটু উপসম হলেও হঠাৎ গায়ে একটু জ্বরভাব দেখা দিলো। আর বসে না থেকে হাসপাতালে গিয়ে রক্ত পরীক্ষা করতে দিলেন। পরদিন রিপোর্টে করোনা ধরা পড়ল। এরপর হাসপাতালে আইসোলেশনে ঠাই হলো। ওদিকে ঘরে কোয়ারেন্টেশনে আছেন মনিজা বেগম। শাফায়েত সাহেবের দেখার জন্য ডাক্তা—নার্সরা আছেন, কিন্তু মনিজা বেগম একবারে একা। ছেলেো খবর পেয়েও নিরূপায়। দেশজুড়ে লকডাউন। বাবা—মার এই বিপদকালে ইচ্ছা থাকলেও তাদের পক্ষে ঢাকায় ছুটে আসা সম্ভব না।
করোনার কোনো ওষুধ নেই, পরিচর্যা আর আচরণ—নির্দেশিকা মেনে চললে হয়তো নিরাময় সম্ভব। শাফায়েত সাহেবকে নিয়ে চিকিৎসকরা উদ্বিগ্ন আছেন বয়সের কারণে। প্রবীণরা এরোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর আশংকা বেশি। শাফায়েত সাহেব ধরেই নিয়েছেন তিনি মারা যাবেন। মৃত্যুকে তার ভয় নেই, চিন্তা শুধু মনিজা বেগমের জন্য। ছেলেরা থাকে দূরে, তারা চাকরি—সংসার নিয়েই ব্যস্ত। মনিজা একা কীভাবে বাকি জীবন পার করবেন।
এ—মুহূর্তে জুনের কথাও তার মনে পড়ছে খুব। রাতে সেই ছোট্ট মেয়েটাকে স্বপ্ন দেখেছেন। সে মাথার কাছে দাঁড়িয়ে পরম মমতামাখা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, বাবা কেমন আছো? তারপর মাথায় হাত বুলোতে থাকল। হঠাৎ একাধিক মানুষের কথাগুঞ্জনে ঘুম ভেঙে যায় শাফায়েত সাহেবের। দেহআবৃত পোশাকে তিনজন এসে তার বেডের কাছে দাঁড়ালেন। তাদের একজন এই হাসপাতালের ডাক্তার। তিনি বললেন, শাফায়েত সাহেব, কেমন আছেন এখন? আমাদের মনে হয় আপনি সেরে উঠবেন শিগ্রি। সুদূর নেদারল্যান্ড থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল এসেছেন। তারা প্রথমেই আপনাকে দেখতে চাইলেন। এইতো ইনি টিমপ্রধান ডা. এস. জুন।
শাফায়েত সাহেব ঘোরলাগা চোখে ফিরে তাকালেন। নেদারল্যান্ড, ডা. জুন. তার কানে এই শব্দদুটি মৃদু কম্পন সৃষ্টি করামাত্র তার মনে কন্যার স্মৃতি শতগুণ প্রবলতর হলো। মুখ তুলে তাকালেন। বিদেশি ডাক্তার তার কপালে হাত রেখে তাপ মাপলেন। আবৃত মুখাবয়ব দেখা গেল না ডাক্তারের, তবে, হাতের স্পর্শে একটা পরিচিত মায়া অনুভব করলেন শাফায়েত। তবে, সেই মায়ার রেশ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। তিনি যা ভাবছেন তা হয়তো মিথ্যে। জুন অনেকের নামই হতে পারে। বিদেশি ডা. হাসপাতালের ডাক্তারের সঙ্গে মৃদুস্বরে কিছু আলাপ করে, শাফায়েতের মাথায় আর একবার হাত স্পর্শ করে চলে গেলেন।
বিকেলে হাসপাতালের পরিচালক স্বয়ং এসে শাফায়েত সাহেবকে জানালেন, বিদেশি টিমপ্রধান আপনাকে স্পেসিয়াল ট্রিটমেন্টে দিতে চান। তাদের সদ্যউদ্ভাবিত করোনা নিরসনের ভ্যাকসিন কয়েকটি মাত্র এনেছেন তারা। একটি আপনাকে পুশ করা হবে। ওরা আশা করছেন, পুশ করার ১২ ঘণ্টার মধ্যে আপনি সেভেন্টি পার্সেন্ট সুস্থ হয়ে উঠবেন। তার আগে এক কাপ গরম দুধ খেয়ে নিন।
ডাক্তার নার্সকে শাফায়েত সাহেবকে একগ্লাস দুধ দিতে নির্দেশ দিয়ে চলে গেলেন।

ছয়

এই প্রথম পাখির কলকাকলিতে ঘুম ভাঙল শাফায়েত সাহেবের। চোখ মেলে দেখেন তিনি নিপাট একটি ক্যাবিনে শুয়ে আছেন। পুবপাশের খোলা জানালা সবুজ প্রকৃতি তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। রেইনট্রির পাতারা দুলছে মৃদু হাওয়ায়। তিনি এখন ষোল আনা সুস্থতা বোধ করছেন। এমন সময় সেই বিদেশি ডাক্তারসহ তিনজন হাসিমুখে তার কক্ষে এসে দাঁড়ালেন। আবৃত মুখে হাসির রেশ টের পেলেন উঁকি দেয়া চোখগুলো দেখে। ঠিক আগের মতোই টিমপ্রধান সেই ডাক্তার তার কপালে হাত রেখে বললেন, নাও, ইউ আর টোটালি ফ্রেস। নো প্রবলেম। এই বলে, এবার নির্মল বাংলায়, বললেন, আজকেই আপনি বাসায় ফিরতে পারবেন মায়ের কাছে, আর মাও সুস্থ আছেন। হাসপাতাল প্রতিনিধিরা নিয়মিত তারও খোঁজ রাখছে।
শাফায়েত সাহেব মুগ্ধদৃষ্টিতে ডাক্তারকে লক্ষ্য করতে থাকেন। ডাক্তার একটা রঙিন খাম শাফায়েত সাহেবের হাতে দিয়ে বললেন, প্লিজ, পাপা, এটা রাখুন। আপনি আজ রিলিজ পাচ্ছেন। সেজন্য সামান্য উপহার। বাসায় গিয়ে খুলবেন। আসি পাপা, বাই..!
তারা চলে যেতেই বুকটা কেমন ছ্যাৎ করে উঠল। যেন সবচেয়ে আপন স্বজনটি দীর্ঘযুগ পরে তার বুকের পিয়ানোয় মমতার সুর ছড়িয়ে হঠাৎ উধাও হলো। ’কে সে?’ প্রশ্নটা শাফায়েত সাহেবের হৃদয় স্পর্শ করে বেরিয়ে এলো অস্ফুটভাবে।

সাত

হাসপাতালের এম্বুলেন্স ঠিক সন্ধ্যার আজানের মুহূর্তে শাফায়েত সাহেবের জিগাতলার এপার্টমেন্টের কাছে এসে থামল। শাফায়েত সাহেব সম্পূর্ণ সুস্থ। মুখে একচিলতে হাসি নিয়ে নিজেই গাড়ি থেকে নামতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সঙ্গে আসা হাসপাতাল কর্মিরা বাধা দিলো। তারা স্ট্রেচারে শুইয়ে তাকে তেতলার ফ্লাটে পৌঁছে দিলো।
মনিজা বেগম মুখে স্বস্তির হাসি। বললেন, তোমার সুস্থ হয়ে ওঠার খবর হাসপাল থেকে জানিয়েছিল। তবে, আজই যে রিলিজ দেবে, তা জানতাম না। জানো, আমাকেও হাসপাতালের একজন নার্স এসে রোজ দেখে যেত। নিয়মিত পথ্য ও নির্দেশনাও দিতো। নাম তার মালতী। বলত, বিদেশি চিকিৎসক টিমের প্রধানের নির্দেশেই আমি এ— দায়িত্ব পালন করছি।
শাফায়েত সাহেবের ভেতরটা আবারও কেমন নড়ে উঠল, ‘চিকিৎসক টিমপ্রধান, মানে ডা. এস জুন! তার এত মমতা কেন আমাদের ওপর?’ কথাটা ভাবতেই কেমন উদাস হয়ে গেলেন শাফায়েত।
‘এত কী ভাবছ?’ মনিজা বেগমের কথার শব্দে সম্বিত ফিরে শাফায়েত সাহেব ব্যাগ থেকে রঙিন প্যাকেটটা বের করে মনিজা বেগমের হাতে দিলেন। বললেন, এটা বিদেশি ডাক্তার আমাকে সুস্থ হয়ে ওঠায় উপহার হিসেবে এটা দিয়েছে। দেখো তো খুলে। বেশ ভারি মনে হচ্ছে। কী আছে এত?.. এই বলে প্যাকেটের মুখটা খুলেই দেখেন একটা শাদা গোলাপ,একটা চিঠি আর অনেক টাকা।
এতটাকা? কেন দিলো ওরা?— গুণে দেখেন একশটা হাজার টাকার নোট। একলাখ টাকা!
‘চিঠিটা দাও তো।’ মনিজা বেগম পত্রটা দিলে শাফায়েত সাহেব পড়তে থাকেন। পড়ার আগেই ভির্মি খেলেন গোটা গোটা কাঁচা হাতের বাংলায় লেখা। ‘এমন লেখা তো তার ছোট্টো জুনের হাতের লেখার মতোই—!’ এরপর পড়তে গিয়ে বড়ো ধাক্কা খেলেন।

 ‘প্রিয় পাপা

তুমি আমাকে যতটুকু বাংলা শিখিয়েছিলে, ততটুকুই মনে আছে। এরপর ইংরেজি ভাষাতেই ভর করে বেড়ে ওঠা। আমি এখন একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এবং গবেষক চিকিৎসাবিজ্ঞানী। আামাদের টিম প্রথমেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ভারতের মহারাষ্ট্রে। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে এখানেই আগে এলাম। আর তোমাদের জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠল। বাংলাদেশের একশ জন করোনা আক্রান্ত রোগীর রিপোর্ট এবং পরিচিতি পাঠাতে বললে, এরা যেগুলি পাঠালো তাতে তোমার নামটাও দেখলাম। এরপর কী আমি না এসে পারি।
আমি ভালো আছি। আমাদের এই সমাজে থার্ড জেন্ডার আর ফাস্টর জেন্ডারেও কোনো বৈষম্য নেই, আর শিক্ষার আলো সেই তফাৎটা একবারেই সরিয়ে দেয়।
মায়ের সাথে দেখা হলো না। দেখা না—হওয়ায় উত্তম। কারণ, তোমাদের সমাজ এটা ধারণ করতে অক্ষম। ভাইদুটি নিশ্চয় ভালো আছে। সবাই ভালো থাক। আমি তো তোমাদেরই সন্তান। তাই দেখা না হোক, সশরীরে সাক্ষাৎ না হোক। যখন তোমাদের ঠিকানা পেয়েছি। যোগাযোগ থাকবে একভাবে। পাপা, তোমাদেও আর কখনো কষ্ট করতে হবে না। অন্তত আর্থিক অভাবটা বোধ করতে হবে না। আমি তো আছি পাপা। তোমার সন্তানই আমি। প্রতিমাসে তোমার ব্যাংক হিসাবে জমা হবে তোমাদের অংশটা। আমি তো একা। একা মানুষের যাপিত জীবনে আর কতোইবা লাগে। বাবা—মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব অনেক। আমি তার সামান্যই তোমাদের জন্য কেও যাবো। ভালো থাকো। মায়ের জন্য অনেক আদর। হ্যাঁ, পাপা, তুমি যখন চিঠিটা পড়ছ, তখন আমি আমার কর্মস্থল নেদারল্যান্ডের পথে, আকাশের অনেক উপর দিয়ে উড়ে চলেছি। শূন্যতা ছুঁয়ে ছুঁয়ে পূর্ণতার দিকে আমার এ যাত্রা। আসি।

ইতি তোমাদের জুন, ডা. এস. জুন।’

পড়া শেষ হতেই শাফায়েত সাহেব কেমন স্থবির হয়ে যান। কিছু ভাবতে পারেন না। বিছানায় শুয়ে পড়েন। চোখ বুজে আসে। তিনি কপালে ছোট্টো জুনের হাতের স্পর্শ অনুভব করেন। মনিজা বেগমও খোলা জানালার পাশে অশ্রুসজল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন রাতের আকাশে যেখানে বিশাল শূন্যতাকে আলো করে আছে সোনালি গোল চাঁদটা।

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top