সিডনী শুক্রবার, ১০ই মে ২০২৪, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩১

সীমার ভেতর অসীম তুমি বাজাও আপন সুর


প্রকাশিত:
২৫ জুন ২০১৮ ১৪:২০

আপডেট:
১০ মে ২০২৪ ০০:০৯

সীমার ভেতর অসীম তুমি বাজাও আপন সুর
“আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়”


এভাবে যখন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন তখন এক আশ্চর্য বোধ এসে জমা হয়। যেভাবে জীবনানন্দ বলেছিলেন-


যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ -


মরিবার হলো তার সাধ –


অথচ জীবনে সব ছিলো – যে জীবন হতাশা থাকার কথাই নয় তবু হতাশা, ক্লান্তি জীবন সম্পর্কে অনীহা এসে জমা হলে কবিগুরুর


ক্যামেলিয়া  কবিতায় এক হতাশা বোধ থেকে অতিক্রান্ত হবার সকল পথ  রুদ্ধ হয়েও যেনো  নতুন এক উন্মুক্ত পথের অভিযাত্রী -


ভাগ্যটা যেন ঘোলা জলের ডোবা,


      বড়ো রকম ইতিহাস ধরে না তার মধ্যে,


             নিরীহ দিনগুলো ব্যাঙের মতো একঘেয়ে ডাকে–


দিন যখন নিরীহ কাটতে থাকে তাতে যা চাই তা পাচ্ছিনা অথচ চাই বড় রকমের একটা কিছু হোক–


কিন্তু কমলার পথ চেনা সেই লাজুক প্রেমিক কিন্তু বার বার তার দৃষ্টি আকর্ষন করতে চেয়েছে –


অথচ সে  এমন যে কিছুতেই  প্রেমিকের চোখের ভাষা পড়তে পারেনি ।



 




সেই যে প্রেমিক প্রবর এক ইংরেজকে চুরুট খাবার অপরাধে সবার সামনে সে বেচারা নেমে গেলো সেই ট্রাম থেকে



কমলার পাশে বসেছে একজন আধা-ইংরেজ।



ইচ্ছে করছিল, অকারণে টুপিটা উড়িয়ে দিই তার মাথা থেকে,



         ঘাড়ে ধরে তাকে রাস্তায় দিই নামিয়ে



      কোনো ছুতো পাই নে, হাত নিশ্‌পিশ্‌ করে।



এমন সময়ে সে এক মোটা চুরোট ধরিয়ে



                     টানতে করলে শুরু।



         কাছে এসে বললুম, "ফেলো চুরোট।’



সবাই বাহবা দিলো কিন্তু ক্যামেলিয়া সেই ট্রামে ওঠা বন্ধ করলো ।



“পরদিন তাকে দেখলুম না,



                 তার পরদিনও না,



             তৃতীয় দিনে দেখি



         একটা ঠেলাগাড়িতে চলেছে কলেজে।



বুঝলুম, ভুল করেছি গোঁয়ারের মতো।



         ও মেয়ে নিজের দায় নিজেই পারে নিতে –


 




যে সমাজে তখনো নারী ঘরের ভেতর বন্দী এবং এক পা দুপা করে এগিয়ে এসেছে আধুনিক জগতে -
রবীন্দ্রনাথের লেখায় সেই নারীমুক্তির বাণী যেনো সরবে সূচীত হয়েছে ।



বিচ্ছেদের ভেতরে সান্ত্বনা খুজেছেন – যে প্রেম লৌকিক নয় সে প্রেম অলৌকিক ,প্রেম তো সমর্পণই ।



বাইরে থেকে মিষ্টিসুরে আওয়াজ এল, "বাবু, ডেকেছিস কেনে।’



      বেরিয়ে এসে দেখি ক্যামেলিয়া



         সাঁওতাল মেয়ের কানে,



             কালো গালের উপর আলো করেছে ।



সে আবার জিগেস করলে, "ডেকেছিস কেনে ।’



         আমি বললেম, "এইজন্যেই।’



             তার পরে ফিরে এলেম কলকাতায়।



    



বাঁশি কবিতায় বাঙ্গালী নারীর সেই অনির্বচনীয়  শ্বাসত মুখ  এবং  রূপ কি ভীষণ মিষ্টিরূপে ধরা দেয় -



বাঁশি কবিতায় বাঙ্গালী নারীর সেই অনির্বচনীয়  শ্বাসত মুখ  এবং  রূপ কি ভীষন মিষ্টিরূপে ধরা দেয় –



ঘরেতে এলো না সে তো মনে তার নিত্য আসা যাওয়া-



পড়নে ঢাকাই শাড়ি কপালে সিঁদুর –



যে নারীকে ভালোবাসা হলো সে নারী তার ঘরে আনা হয়নি তার দারিদ্রের কারণে -


 




আহা দারিদ্র –



বেতন পঁচিশ টাকা,



    সদাগরি আপিসের কনিষ্ঠ কেরানি।



        খেতে পাই দত্তদের বাড়ি



               ছেলেকে পড়িয়ে।



        শেয়ালদা ইস্টিশনে যাই,



সন্ধ্যেটা  কাটিয়ে আসি,



        আলো জ্বালাবার দায় বাঁচে।



যে নিজের ঘরের ভেতর আলো জ্বালাতে পারে না  সে কি করে অন্যের জীবনে



তাকে সেই ভালোবাসাকেও ভুলে থাকতে হয় ।



বর্ষা ঘন ঘোর।



    ট্রামের খরচা বাড়ে,



মাঝে মাঝে মাইনেও কাটা যায়।



           গলিটার কোণে কোণে



        জমে ওঠে পচে ওঠে



               আমের খোসা ও আঁঠি, কাঁঠালের ভূতি,



                          মাছের কান্‌কা,



জীবন এমন অসহনীয় -গলিটার কোনে যেমন জমে ওঠে ময়লার স্তূপ -সে জীবনে কোনো আলো নেই ,দারিদ্রের কারণে না পাবার বেদনাটুকুন আছে -



রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঁশী কবিতায় জীবনের যে চিত্র এঁকেছেন সে উনিশ শতকের ইংরেজ সময়কাল । কোনো রকমে নিজেকে টিকিয়ে রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টা ।



হঠাৎ খবর পাই মনে



           আকবর বাদশার সঙ্গে



               হরিপদ কেরানির কোনো ভেদ নেই।



সে বেদনায় হরিপদ কেরাণী এবং রাজা বাদশাহ সমান ভাবেই দাহ অনুভব করে


 




“এ গান যেখানে সত্য



অনন্ত গোধূলিলগ্নে



        সেইখানে



           বহি চলে ধলেশ্বরী;



        তীরে তমালের ঘন ছায়া;



               আঙিনাতে



        যে আছে অপেক্ষা ক’রে, তার



           পরনে ঢাকাই শাড়ি, কপালে সিঁদুর।



 



“এ গান যেখানে সত্য



অনন্ত গোধূলিলগ্নে



        সেইখানে



           বহি চলে ধলেশ্বরী;



        তীরে তমালের ঘন ছায়া;



               আঙিনাতে



        যে আছে অপেক্ষা ক’রে, তার



           পরনে ঢাকাই শাড়ি, কপালে সিঁদুর।



 



তবু আশাবাদী মন এক অপেক্ষাকাতর নারীর জন্য আকুল থাকে – সে অপেক্ষা অনন্তকালের -
এবং ঢাকাই শাড়ি কপালে সিঁদুরের আবেদন বাঙ্গালীর চিরকালীন ভালোবাসার নারীর জন্য অপেক্ষা
কখনোই ফুরোবার নয় - বাঁশী' এবং ক্যামেলিয়া' কবিতা দুটো পুনশ্চ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া -
 পুনশ্চ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো অনেকটা গল্পের মত এগিয়ে গেছে -


 




অসংকুচিত গদ্যরীতিতে কাব্যের অধিকারকে অনেক দূর বাড়িয়ে দেয়া সম্ভব -



পদ্য হল সমুদ্র,



           সাহিত্যের আদিযুগের সৃষ্টি।



                তার বৈচিত্র্য ছন্দতরঙ্গে,



                     কলকল্লোলে!



গদ্য এল অনেক পরে।



     বাঁধা ছন্দের বাইরে জমালো আসর।



          সুশ্রী-কুশ্রী ভালো-মন্দ তার আঙিনায় এল



                         ঠেলাঠেলি করে।



গদ্য ছন্দে লেখা কবিতাগুলোতে  এক একটি গল্প এক একটি গান –



চেনা জানা জগত সে জগতের ভেতরে বাইরে যে সুর নীরবে  বহমান –



                  এ কালের আঙিনায় দাঁড়িয়ে।



কালকে অতিক্রম করে যে ভাব , ভাষা , বোধ আঙ্গিকের বৈচিত্র্য  সে কবির ভাষায়
পরাক্রম শক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও কবি কিছুটা সন্দিহান ।


 




আমার বাণীকে দিলেম সাজ পরিয়ে



                   তোমাদের বাণীর অলংকারে;



        তাকে রেখে দিয়ে গেলেম পথের ধারে পান্থশালায়”



আবার কবি যুক্ত করেছেন নিজেকে সকল কালের সাথে -



চিরকালীন এক সবুজ কবি যখন বলেন



             “যেন গর্ব করে বলতে পার



                   আমি তোমাদেরও বটে,



             এই বেদনা মনে নিয়ে নেমেছি এই কালে” —



 



কবির বেদনা চিরকালীন । সে বেদনা থেকে এবং  অতৃপ্তি থেকে কবির যাত্রা সীমা থেকে অসীমের পানে -
কবিকে সময়ের সীমাবদ্ধতায় আটকে রাখা যায় না । কবির যাত্রা সসীম থেকে অসীমের পানে


 



 



 



 




 


 

বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top