আসছে ঈদ, বাড়ছে ভারতীয় গরু


প্রকাশিত:
১৩ আগস্ট ২০১৮ ১৩:৫২

আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ০৮:৩৬

আসছে ঈদ, বাড়ছে ভারতীয় গরু

সারা বছরে দেশে প্রায় ২ কোটি ৩১ লাখ ১৩ হাজার গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া জবাই হয়। এর অর্ধেকই জবাই হয় কোরবানির ঈদের সময়। বছরের অন্যান্য সময় আমদানি কিছুটা শিথিল থাকলেও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বাড়ছে ভারতীয় গবাদিপশুর আমদানি। এরই ধারাবাহিকতায় প্রায় প্রতিদিনই রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা ও বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে হাজার হাজার কোরবানির পশু অবৈধভাবে ঢুকছে বাংলাদেশে। এর মধ্য শুধু রাজশাহী ও চাঁপাইয়ের সীমান্ত দিয়েই প্রতি রাতে আসছে প্রায় আড়াই হাজার গরু-মহিষ। ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে ভারতীয় গরু আমদানির পরিমাণও তত বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 



আর ব্যাপক হারে ভারতীয় গরু আমদানির ফলে দেশি গরুর দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কায় হতাশার মুখে পড়েছেন স্থানীয় হাট মালিক ও খামারিরা। এবারের ঈদেও কেউ কেউ লোকসানের আভাস পাচ্ছেন। তবে ঈদকে ঘিরে কোথাও কোথাও কোরবানির পশুরু ঘাটতি থাকায় ভারতীয় এসব গরু আমদানি করে ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও দাবি অনেকের। তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, অনেক বৈধ ব্যবসায়ী রাজস্ব দিয়ে করিডরের মাধ্যমে এসব গরু আমদানি করছে। 



এদিকে দেশের ব্যবসায়ীরা ঈদকে ঘিরে হাজার হাজার কোরবানির গরু প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করছেন। সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, এ অঞ্চলে ছোট-বড় এক হাজার ৫০০ গরুর খামার রয়েছে। সে হিসাবে প্রায় ৪০ হাজার গরু প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করা হচ্ছে। যার বর্তমান গড় বাজারমূল্য প্রায় ৩২ কোটি টাকা।



স্থানীয় একজন খামারি জানান, গরুকে প্রাকৃতিক পন্থায় মোটাতাজা ও সুস্থ রাখতে খড়, নালিগুড়, ভাতের মাড়, তাজা ঘাস, খৈল, গম, ছোলা, খেসারি, মাসকলাই, মটরের ভুসিসহ নানা পুষ্টিকর খাবার দেয়া হয়। এ ধরনের গরুর মাংস খেয়ে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। তবে কিছু অসাধু মৌসুমী ব্যবসায়ী কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

কোরবানির-গরু

অন্যদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলের অনেক খামারিরকেই দেখা যাচ্ছে- কম টাকায় রোগা কিংবা হালকা ধাঁচের গরু কিনে বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করে রাতারাতি গরু মোটাতাজা করে ফেলছেন। এসব ক্ষেত্রে তারা ভারত থেকে চোরাই পথে আসা ডেক্সিন, স্টেরয়েড, হরমোন ও উচ্চমাত্রার রাসায়নিক ব্যবহার করছেন। মূলত বেশি লাভের আশায় ওষুধ দিয়ে চলছে গরু মোটাতাজাকরণের কাজ। 



রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যমতে, রাজশাহীতে ১৭ হাজার ৭০০টি খামারে মজুদ রয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৫০৯ কোরবানিযোগ্য পশু। কিন্তু চলতি বছর জেলায় ৩ লাখ ১০ হাজার কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। বাড়তি চাহিদা মেটাতে কেউ কেউ ভারতীয় গরু-মহিষ আমদানি করছেন। তবে কৃত্রিম পদ্ধতিতে কোরবানির পশু মোটাতাজাকরণের হার বিগত বছরগুলোর তুলনায় কমেছে বলে দাবি অধিদফতরের।



তবে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বেনাপোলের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিবি। এই পথে এবছর অবৈধভাবে গরু আমদানি প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। সেখানে সীমান্ত পেরিয়ে কাউকেই ভারতে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। তবে সেসব এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নেই সেসব জায়গা দিয়ে অনেকেই অতি গোপনে গরু-মহিষ-খাসি আমদানি করছে। 

কোরবানি-গরু

এদিকে কাস্টমস করিডোর সূত্র জানিয়েছে, গেল বছর কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে সীমান্ত দিয়ে ৭ মাসে ভারত থেকে প্রায় ৩৫ হাজার ৬৭৮টি গরু বাংলাদেশে আমদানি করা হয়। যাতে সরকারের রাজস্ব আয় হয় ১ কোটি ৭৮ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। চলতি বছরের প্রথম ৭ মাস অর্থাৎ জুলাই পর্যন্ত ভারত থেকে পাচারকৃত ৭ হাজার ৫২৬টি বাংলাদেশে আনা হয়েছে। যেখানে সরকার রাজস্ব আয় করেছে ৩৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। 



ঈদের এখনও এক সপ্তাহেরও বেশি সময় বাকি। এই সময়ের মধ্যে অবৈধপথে ভারতীয় গরু আমদানির এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এ অবস্থা চলতে থাকলে স্থানীয় পশু ব্যবসায়ী ও খামারিরা আগামী বছরগুলোতে ব্যবসায় আগ্রহ হারাবেন বলেও সংশ্লিষ্টদের অভিমত।



গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া মিলিয়ে দেশে এখন ১ কোটি ১৬ লাখ ‘কোরবানিযোগ্য’ গবাদি পশু রয়েছে বলে গত ২২ জুলাই প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের এক বিজ্ঞপ্তি জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, কোরবানিযোগ্য এসব গবাদিপশুর মধ্যে ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার গরু ও মহিষ এবং ৭১ লাখ ছাগল ও ভেড়া রয়েছে।



উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ঈদুল আজহায় সারা দেশে ১ কোটি ৫ লাখ পশু কোরবানি হয়েছিল। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা বেড়ে হয়েছিল ১ কোটি ১৫ লাখ। বিগত দুই বছরের চেয়েও এবার কোরবানির সংখ্যা বাড়তে পারে বলে  প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে।  


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top