গণহত্যার বিচার দাবিতে উত্তাল রোহিঙ্গা শিবির


প্রকাশিত:
২৬ আগস্ট ২০১৮ ০১:৫২

আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ০৮:৩৬

গণহত্যার বিচার দাবিতে উত্তাল রোহিঙ্গা শিবির

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বিচার দাবি করেছে। একই সঙ্গে তারা নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার, রোহিঙ্গা পরিচয়ে মর্যাদার সঙ্গে বসবাসের অধিকার দাবি করেছে।



গতকাল ২৫ আগস্ট রাখাইনে নিধনযজ্ঞের শিকার হয়ে ঢলের মতো দলে দলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার এক বছর পূর্ণ হওয়ার দিনটিতে কক্সবাজারের ৩০টি শিবিরের রোহিঙ্গারা একযোগে বিক্ষোভ করেছে। দিনটিকে তারা পালন করেছে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে।



টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার শিবিরগুলোতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে রোহিঙ্গারা গণহত্যার জন্য দায়ী মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও অং সান সু চি সরকারের বিচার দাবি করেছে। তারা ২৫ আগস্ট দিনটিকে বিশ্বব্যাপী ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি জানিয়েছে। ক্ষুব্ধ রোহিঙ্গারা ঘৃণা প্রকাশ করেছে সৃষ্টিকর্তার দরবারে হাত তুলে মোনাজাতের মাধ্যমে। বিক্ষোভে ফেটে পড়া রোহিঙ্গাদের গগনবিদারি কণ্ঠে ছিল ‘নো মোর জেনোসাইড, নো মোর রিফিউজি লাইফ, উই ওয়ান্ট সলিউশন, সে রোহিঙ্গা নট বাঙালি, উই ওয়ান্ট ডিগনিটি, জেনোসাইড নেভার এগেইন’সহ নানা স্লোগান।



গত বছরের ২৫ আগস্ট উখিয়া-টেকনাফ ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে থাকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সে দেশের সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন মিলে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন শুরু করেছিল। অন্তত ২৩ হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়। আগুন দিয়ে তাদের ঘরবাড়ি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়। ধর্ষণের শিকার হয় অন্তত ১৮ হাজার নারী।





এই নিধনযজ্ঞের কারণে গত এক বছরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে সাত লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা। এ ছাড়া আগে থেকে অবস্থান করছিল আরো কয়েক লাখ। সব মিলিয়ে বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফের ৩০ শিবিরে ১১ লাখ ২০ হাজারের কাছাকাছি রোহিঙ্গা বসবাস করছে।



গতকাল সরেজমিনে রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুরা শিবির থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে। ৯টা থেকেই তাদের নির্ধারিত কর্মসূচি শুরু হয়। রোহিঙ্গারা একত্রিত হয়ে বিক্ষোভসহকারে নেমে আসে রাস্তায়। এ সময় তারা নিরাপদ প্রত্যাবাসনের দাবিসংবলিত বিভিন্ন ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন প্রদর্শন করেছে।



উখিয়ার কুতুপালং শিবিরের ‘ই’ ব্লকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশুর হাতে দেখা গেছে চারটি হাত আঁকা প্ল্যাকার্ড। এসব হাত কালো কালিতে আঁকা।



চিহ্নটির বিষয়ে রোহিঙ্গা নেতা আবদুল গাফফার বলেন, চারটি হাতের ওপরেরটিতে লেখা আছে ‘জাস্টিস’। নিচের হাতে ‘রাইটস’। বাঁ পাশের হাতে লেখা ‘রোহিঙ্গা’ আর ডান হাতে লেখা ‘ব্যাক হোম’। তিনি বলেন, চারটি হাতের এই চিহ্নের মাধ্যমে তাঁরা বলতে চান—গণহত্যার বিচারের দাবিতে রোহিঙ্গারা সবাই ঐক্যবদ্ধ আছে।



রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর রাস্তায় রাস্তায় তারা গগনবিদারি স্লোগান তোলে। তেমনি আবার গণমোনাজাতে সৃষ্টিকর্তার কাছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর গণহত্যার বিচার চেয়ে অঝোরে কেঁদেছে রোহিঙ্গারা।



বিভিন্ন শিবিরে একসঙ্গে বিক্ষোভ করার একপর্যায়ে রোহিঙ্গারা কক্সবাজার ও টেকনাফ মহাসড়কে নেমে আসার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশ তাদের শিবিরে ঢুকিয়ে দেয়। পরে তারা শিবিরের ভেতরেই নিরাপদ প্রত্যাবাসনের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে। এ সময় তারা মিয়ানমারের রাখাইনে গণহত্যা বন্ধ, আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিচার, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার দাবি জানায়। তারা আরো জানায়,  নিরাপদ পরিবেশ, নাগরিকত্ব ও একটি রাষ্ট্রের সব সুযোগ-সুবিধাসহ নিজ দেশে ফিরে যেতে চায়।



উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের শেড মাঝি মোহাম্মদ হাসান বলেন, ‘আমরা রাখাইনে নিজ ভিটেমাটিতে ফিরে যেতে চাই। ফিরতে চাই অবশ্যই মিয়ানমারের নাগরিকত্ব নিয়ে এবং রোহিঙ্গা পরিচয়ে। সেই সাথে নিরাপদ পরিবেশে বসবাস করতে চাই রাখাইনে নিজ গ্রামে।’ তিনি আরো বলেন, ২৫ আগস্ট দিনটিকে তাঁরা বিশ্বব্যাপী গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের দাবি জানাচ্ছেন।



রোহিঙ্গা আলেম মাওলানা আবদুর রহিম বলেন, ‘আমরা নিজ দেশে এমনভাবে ফিরে যেতে চাই যাতে আবারও শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে না হয়।’



উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মো. খায়েরুজ্জামান জানান, রোহিঙ্গারা তাদের ওপর চালানো নির্যাতন-অত্যাচারের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছে। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে রোহিঙ্গারা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top