শেষ সময়ে সবোর্চ্চ সতর্ক বিএনপি


প্রকাশিত:
৩ অক্টোবর ২০১৮ ০১:০৩

আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ১৫:০০

শেষ সময়ে সবোর্চ্চ সতর্ক বিএনপি

দশম জাতীয় সংসদ নিবার্চনের আগে-পরে নানা ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনীতির মাঠ থেকে ছিটকে পড়লেও এবার এ ইস্যুতে সবোর্চ্চ সতকর্ থাকছে বিএনপি। তাই বতর্মান সরকারের ক্ষমতার মেয়াদের শেষ সময়ে যে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে সরকারবিরোধী এ দলটি রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতির চুলচেরা হিসাব-নিকাষ করছে। পাশাপাশি ক্ষমতাসীনরা যাতে ভিন্ন ইস্যুতে তাদের ব্যস্ত রেখে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনের প্রচার-প্রচারণাসহ আনুষঙ্গিক কাযর্ক্রম থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে না পারে সেদিকেও নজর রাখছে দলীয় হাইকমান্ড। অন্যদিকে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠন প্রক্রিয়ায় সবোর্চ্চ ছাড় দেয়ার প্রস্তুতি নিলেও এ ইস্যুতে যাতে কোনো ফঁাদে পড়তে না হয় সে বিষয়েও সতকর্ বিএনপি। বিশেষ করে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়তে বিকল্পধারা এক তরফা তাগিদের বিষয়টি অত্যন্ত সু⊃2; দৃষ্টিতে পযের্বক্ষণ-পযাের্লাচনা করছে রাজনীতির মাঠে দীঘির্দন কোণঠাসা থাকা দেশের বৃহত্তর এ দলটি। বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, বতর্মান সরকারের মেয়াদের শেষ সময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নানা অপকৌশলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চাইছে। এরই ধারাবাহিকতায় নানা ধরনের ‘গায়েবী’ মামলায় তাদের নেতাকমীের্দর গ্রেপ্তারের পাশাপাশি দৌড়ের উপর রাখা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে নানামুখী হয়রানি-নিযার্তন চালিয়ে বিক্ষুব্ধ নেতাকমীের্দর ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিএনপিকে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী দল হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টায় রয়েছে। যা এখন সাধারণ মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাই এ ফঁাদ এড়িয়ে চলতে দলীয় হাইকমান্ড তৃণমূলের কমীের্দর কড়া নিদের্শ দিয়েছে বলে জানান ওই নেতারা। এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে অংশগ্রহণ নিয়েও বিএনপির চুলচেরা বিশ্লেষণের খবর পাওয়া গেছে। দলের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া বিএনপি এতদিন নিবার্চনে না যাওয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিলেও এতে দলের লাভ-ক্ষতির হিসাব-নিকেষ করে এখন তারা আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। এমন কি কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় নিয়েও নিবার্চনের আগে বড় ধরনের কোনো আন্দোলনে যাবে না বিএনপি। বরং এসব বিষয়ে সবোর্চ্চ সংযত থেকে নিবার্চনকালীন নিরপেক্ষ সরকার এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডসহ নিবার্চনী আনুষঙ্গিক ইস্যুতে জোরদার তৎপরতা চালাবে। যদিও এসব বিষয়ে তারা প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করবে না। বরং এ ইস্যুগুলো তাদের দাবি-দাওয়ার তালিকার শীষের্ স্থান পাবে। অন্যদিকে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য অটুট রাখতে বিএনপি সবোর্চ্চ সচেষ্ট থাকবে। তবে ঐক্য ধরে রাখতে ছোট দলের বড় আবদার পূরণ করার প্রস্তুতি থাকলেও জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করার কোনো চিন্তা নেই বলে দলের একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। বরং এ ইস্যুতে বিকল্পধারার অনড় অবস্থানের বিষয়টি তারা গভীরভাবে পযের্বক্ষণ করছে। কেননা এ বিষয়টি তারা অনেকটা সন্দেহের চোখে দেখছে। দলীয় নেতাদের কেউ কেউ মনে করেন, বিকল্পধারার সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী তার ‘ব্যক্তিগত আক্রোশ’ থেকে বিএনপিকে চাপে রাখতে চাইছে। কিংবা এর নেপথ্যে বিশেষ কোনো স্বাথির্সদ্ধির ঘটনা রয়েছে। বিএনপি নেতারা মনে করেন, সুষ্ঠু নিবার্চনের ইস্যুতে বিএনপিকে রাজপথের আন্দোলনে নামতে হবে। আর এ সময় জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটকে তারা সক্রিয়ভাবে পাশে পাবে। এছাড়া বিকল্পধারার চেয়ে জামায়াতের ভোটব্যাংক অনেক বেশি শক্তিশালী, যা জোটবদ্ধ নিবার্চনে কাজে লাগবে। এছাড়া বিএনপি এ সময় জামায়াতকে ছেড়ে দিলে আওয়ামী লীগ তাদের কাছে টানতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকেই। কেননা অতীতেও তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল। ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় নিবার্চনে অংশ নিয়েছিল জামায়াত। এরপর ’৯৫-৯৬ সালে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আন্দোলন করেছিল দলটি। তবে তাদের ভিতরে সেই সখ্যতা এখনো আছে। আর সেটাকে আওয়ামী লীগ আবারও কাজে লাগালে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিএনপিই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই এ ইস্যুতে বিএনপি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানায় বিএনপির নীতি-নিধার্রকদের একাধিক সূত্র। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, বিভিন্ন সভা-সমাবেশ এবং আলোচনা সভায় সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ নীতিনিধার্রকরা মুখে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হবে বলে দাবি করলেও বাস্তবে এ ইস্যুতে তারা টালবাহানা করছে। তাদের মতে, রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবেই ক্ষমতসীনরা জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি দীঘির্দন ধরেই ঝুলিয়ে রেখে এ ব্যাপারে লাভ-ক্ষতির হিসাব কষছে। তাই এ সময়ে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করা বিএনপির জন্য বড় ভুল হবে বলে মন্তব্য করেন তারা। এদিকে নিদর্লীয় সরকার ছাড়া নিবার্চনে না যাওয়ার জন্য বিএনপি শেষসময় পযর্ন্ত জোরালো আন্দোলন চালালেও তাতে ব্যথর্ হলে এ সিদ্ধান্তেও অনড় না থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা এ অবস্থান দলকে নতুন করে ঝুঁকিতে ফেলবে- যা তারা আগেই টের পেয়ে গেছে। তাই এ ইস্যুতে তারা চুলচেরা হিসাব-নিকাষ করে পা ফেলানোর আগাম সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। বিগত সময়ে বিএনপি হাইকামন্ড নিজেদের ভারতবিদ্বেষী দল হিসেবে জাহির করলেও এবার সে অবস্থানও পাল্টে ফেলবে। তাদের নিবার্চনী প্রচার-প্রচারণায় এবার এ বিষয়টি ‘স্পষ্ট’ করবে। কেননা, আমেরিকা কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়ন নয়, ভারতই বাংলাদেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে- এ বিষয়টি তাদের কাছে এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের অত্যন্ত হৃদতাপূণর্ সম্পকর্ থাকার কথা জেনেও গত জুন মাসে বিএনপির তিন প্রভাবশালী নেতা ভারত সফর করেছেন। তারা রাজনৈতিক নেতা ও থিংক ট্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছেন। ভবিষ্যতে বিএনপি ভারতের সঙ্গে সুসম্পকর্ রাখতে চায় এ বাতার্ পেঁৗছে দিয়েছে। বৃহত্তর ঐক্য প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শতের্ বিএনপির প্রথম সারির একজন নেতা যায়যায়দিনকে বলেন, ড. কামাল হোসেন ও বি. চৌধুরী দুজনই ব্যক্তিগতভাবে সম্মানীয় কিন্তু ভোটের রাজনীতিতে কোনো ফ্যাক্টর নয়। তবে, সরকারবিরোধীদের একই প্ল্যাটফমের্ আনতে ভোটের অঙ্কের বিষয়টি মাথায় রেখে বিএনপি তাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। বিএনপির ওই নেতা আরও বলেন, এই সময় জোট করে সরকারের পতন ঘটানো যাবে না, সে চিন্তা তাদের মাথায়ও আছে। তবে, একটা দর কষাকষির জায়গায় গিয়ে তারা নিবার্চনে যেতে চাচ্ছে। জাতীয় ও আন্তজাির্তকভাবে সবাইকে দেখাতে পারবে যে তাদের দাবির পক্ষে জনগণের বিশাল প্ল্যাটফমর্ তৈরি হয়েছে। তাই বৃহত্তর ঐক্য গঠনের বিষয়টি তারা গুরুত্ব দিচ্ছে।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top