‘রাতে নেতাকর্মীদের বাড়ির সামনে এসে থামে কালো গ্লাসের মাইক্রো’
প্রকাশিত:
৪ অক্টোবর ২০১৮ ০৮:৪৪
আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ১৪:৫৮

বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো কারণ ছাড়াই কাল্পনিক মামলার বন্যায় দেশকে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন প্রতিনিয়ত হামলা-মামলার শিকার। কোনো কারণ ছাড়াই কাল্পনিক মামলার বন্যায় ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে দেশকে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে এই ভোটারবিহীন সরকার। কোনো ওয়ার্ডেই তিন জন নেতাকর্মী একসাথে চলাফেরা করতে পারছে না। এর ওপর ক্রমাগত বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ির সামনে রাতের অন্ধকারে এসে থামে কালো টিনটেড গ্লাস দিয়ে ঢাকা মাইক্রোবাস। কর্কশ কড়া নাড়ার শব্দে ভেঙে চুরে খান খান হয়ে যায় রাতের নিস্তবদ্ধতা। বাসাবাড়ি তছনছ করে চলে চিরুনী তল্লাশি। তুলে নিয়ে যায় কিশোর, তরুণ, ছাত্রদল, যুবদল এবং অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের। এমনকি বয়স্ক বিএনপি নেতাকর্মীদেরও।’
‘খাল, বিল, নদীধারে মাইক্রো থেকে নামিয়ে দিয়ে চলে যেতে বলে। তারপর গুলি করা হয় পেছন থেকে। তা না হলে কিছুদিনের জন্য, নয়তো চিরদিনের জন্য গুম করে অদৃশ্য করা হচ্ছে। তা না হলে লকআপে চলানো হয় অকথ্য অত্যাচার নির্যাতন। বিরোধীদলের প্রতি সরকারের নীতি হচ্ছে-বিরোধী নেতাকর্মীদের ধর থেকে মুন্ডু খসিয়ে ফেলার নীতি।’
বৃহস্পতিবার (৪ অক্টোবর) নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিষয়ে রিজভী বলেন, ‘এই মামলায় কয়েক দফা চার্জশিট দেয়া এবং বিচার কার্য অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার পর বিচারিক আদালত থেকে চার্জশিট ফিরিয়ে এনে সম্পূরক চার্জশিট দেয়া হয় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর। যা ছিল বেআইনী ও নজীরবিহীন। এতে মূখ্য উদ্দেশ্য ছিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মামলায় জড়ানো।’
তিনি বলেন, ‘২০১১ সালের ৭ এপ্রিল মুফতি হান্নানকে অমানুষিক নির্যাতনের করে তাকে দিয়ে আদালতে তারেক রহমানের নাম বলানো হয়। তারেক রহমানের নাম বলানোর পর মুফতি হান্নান সুযোগ খুঁজছিলো তা প্রত্যাহারের। তা না হলে পুনরায় রিমান্ডে নিয়ে ‘ক্রসফায়ারে’ মৃত্যুবরণ করতে হবে এই আশঙ্কায় চার্জশিট দাখিলের জন্য প্রহর গুনতে থাকে।’
মুফতি হান্নানের চার্জশিট প্রত্যাহারের অাবেদন তুলে ধরেন রিজভী। বলেন, ‘অবশেষে ২০১১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সেই সুযোগ মুফতি হান্নান পেয়ে যায়। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিনের আদালতে মুফতি হান্নান লিখিতভাবে জানান, ২০১১ এর ৪ এপ্রিল কাশিমপুর কারাগার থেকে এনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলগেটে জেল সুপার লিখিত কাগজ স্বাক্ষর করতে বলে। স্বাক্ষর না করলে অশ্লীল গালিগালাজ করে, বিষ প্রয়োগে মেরে ফেলার কথা বলে। জেল সুপার তৌহিদ হত্যার হুমকি দেয়। দুদিন পর সিআইডির এএসপি ফজলুল কবিরসহ অন্যান্য অফিসাররা এবং আগে থেকে ম্যাজিস্ট্রেটের রুমে বসে থাকা কাহার আকন্দ আমার (মুফতি হান্নান) দিকে একটি কাগজ ধরিয়ে দেয়। সেখানে তারেক রহমান, হারিস চৌধুরী, পিন্টু ও বাবরসহ অনেকের নাম জড়িত করা হয়েছে দেখতে পাই। অতঃপর জবানবন্দীতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানালে আমাকে জেলের ভিতরে হত্যা করাসহ রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করার হুমকি দেয়া হয়। এরপর রাত ১১টার দিকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে বললে আমি অস্বীকার করি।’
‘উল্লেখ্য যে- ম্যাজিষ্ট্রেটের সামনে উপস্থিত করার আগে বিভিন্ন সময় আমাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। ফজলুল কবির ও কাহার আকন্দ দুজনই আমার চোখে কালো কাপড় বেঁধে র্যাবের কাছে নিয়ে যেতো। এভাবে নির্যাতনের অভিনব কায়দা প্রয়োগ করে মুফতি হান্নানের নিকট থেকে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা চালানো হয়।’
গতকাল বুধবার বিএনপির কর্মসূচি পালনকালে সরকারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দেশের কয়েকটি জেলায় নেতাকর্মীদের ওপর বেধড়ক লাঠিচার্জে মিছিল পণ্ড করে দিয়েছে। পাইকারী হারে গ্রেফতার এবং আক্রমণে অনেক নেতাকর্মীকে আহত হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন, বেলাল হোসেন প্রমুখ ।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: