এ ইউনিফর্মের ওজন পৃথিবীর চেয়েও বেশি
প্রকাশিত:
৩১ জানুয়ারী ২০১৯ ০৬:৪০
আপডেট:
১৬ মার্চ ২০২৫ ০৯:৪৫

‘সেদিন সুদূর নয়, যেদিন ধরণী পুরুষের সঙ্গে গাহিবে নারীরও জয়।‘ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার নারী কবিতাটি শেষ করেছিলেন এভাবেই। সেই কাব্যের মান রেখে আজ সামরিক বাহিনী, পুলিশ, কৃষি, শিক্ষা এবং রাজনীতিতে নারীর ভূমিকা সুস্পষ্ট।
‘আমাদের চেতনায়, আমাদের অনুভবে, এ সামরিক পোশাকের (ইউনিফর্ম) ওজন পৃথিবীর চেয়েও অনেক বেশি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দীর্ঘমেয়াদি কোর্স সফলতার মধ্য দিয়ে শেষ করে আমরা মেজর থেকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়েছি।‘
এ ইউনিফর্ম আমাদের অসীম সাহসের প্রতীক। একদিন নারী সেনাদের মধ্য থেকে কেউ না কেউ সেনাবাহিনীর শীর্ষ পদে আসীন হবেন। সম্প্রতি পদোন্নতি পাওয়া ৪ নারী অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল সানজিদা হোসেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারহানা আফরীন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারাহ্ আমির ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দা নাজিয়া রায়হান নিজেদের অনুভূতির কথা এভাবেই প্রকাশ করছিলেন।
সারাহ্ আমির বলেন, নারী সেনাদের মধ্য থেকে কেউ না কেউ একদিন সেনাবাহিনীর শীর্ষ পদটিতে আসীন হবেন। ২০০০ সালে যখন আমাদের যাত্রা শুরু হয়। ওই যাত্রার অনুপ্রেরণা ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা কিন্তু এ উপমহাদেশের সবার চেয়ে উপরে। বিশ্বের কোথাও লেফটেন্যান্ট কর্নেলের র্যাংকই দেয়া হয়নি। কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়া হয়নি। একটি ইউনিট কমান্ডারের দায়িত্ব নিয়ে মাঠে নেমেছি।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারাহ্ আমির সিলেট জালালাবাদ সেনানিবাস ইউনিটের ইউনিট ট্যাকটিকস উইং স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি অ্যান্ড ট্যাকটিকসে প্রশিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। ২০০১ সালের ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। ২০০২ সালের ৩১ ডিসেম্বর কমিশন লাভ করেন।
বাবা কর্নেল (অব.) আমির হোসেন। এ অর্জন বাবারও, বাবা চেয়েছেন আমি আজকের এ জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হই। বাবার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে আমার। বাবা যে কী খুশি হয়েছেন, তা বলে বোঝাতে পারব না। এ অর্জনের পেছনে সারাহ্ আমিরের মা মাহমুদা খাতুন ও স্বামী লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহমুদ হাসানেরও সহযোগিতা রয়েছে।
সানজিদা হোসেন বলেছেন, ২০০১-১৯ সাল পর্যন্ত অনেক লম্বা সময় পার করে আসছি এ পেশায়। সব সময় মনে হয়েছে আমি একজন আর্মি অফিসার। কখনও নারী হিসেবে আলাদা সুবিধা পাওয়ার কল্পনাও করিনি। সব অফিসারের সঙ্গে যথাযথ দায়িত্ব পালন ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই এ পর্যন্ত এসেছি।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল সানজিদা হোসেন রংপুর সেনানিবাসের ৭ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি খোলাহাটি ইউনিটের ইউনিট কমান্ডার হিসেবে যোগদান করেছেন। সানজিদা হোসেন জানান, আমার ফোন পেয়ে বাবা আনন্দে কাঁদতে শুরু করেন। বাবা এটিএম দেলোয়ার হোসেন একজন ব্যাংকার। মেয়ের এ অর্জনে মা বিলকিস আরা চৌধুরীও খুশি। তার এ সাফল্যে স্বামী লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসানের সহযোগিতা ও একমাত্র মেয়ে তানাজের কথাই মনে পড়ে সবার আগে।
ফারহানা আফরীন বলেন, আমাদের চেতনায়, আমাদের অনুভবে, আমাদের এ সামরিক পোশাকের (ইউনিফর্ম) ওজন এই গ্রহ-পৃথিবীর চেয়েও অনেক বেশি। এ ইউনিফর্ম আমাদের অসীম সাহসের প্রতীক। যে সাহস আমাদের মতোই সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমি সেনাবাহিনীর অফিসার, এটা আমার কাছে সবচেয়ে বড় গর্বের।
চাকরির প্রতিটি পদে যেমন চ্যালেঞ্জ ছিল তেমনি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার আনন্দও ছিল। আর্মিতে নারীদের আরও বেশি এগিয়ে আসতে হবে। নতুনদের জন্য আমরা আছি, আমাদের সহযোগিতা সব সময় থাকবে। মেয়েরা পারে না এমন কিছু নেই, শুধু সময়ের ব্যাপার, সুযোগের ব্যাপার। লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারহানা আফরীন ঢাকায় স্পেশাল উইং আর্মি এভিয়েশন অধিনায়ক হিসেবে যোগদান করেছেন। ২০০১ সালের ৪ জুলাই অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৩ সালের ২ জুলাই কমিশন অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করে।
সৈয়দা নাজিয়া রায়হান বললেন, একটি স্বপ্ন নিয়েই আর্মিতে যোগদান করেছি। দেশ, দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করব, ওটাই সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল।
নারী নয়, একজন সেনা কর্মকর্তা হিসেবেই সব অর্জন করছি। আমাদের সময় আর্মিতে তেমন সুযোগ-সুবিধা ছিল না। এখন নারীদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। আমরা চাই, এ পেশায় নারীরা আরও এগিয়ে আসবেন।
দিনের পর দিন খেয়ে না-খেয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। রাতের পর রাত হেঁটেছি। এত কষ্টের পরও একটি আকর্ষণ ছিল, আমার পোশাকের (ইউনিফর্ম) প্রতি। পোশাক আমাকে সাহস দেয়, এগিয়ে যেতে বলে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দা নাজিয়া রায়হান টাঙ্গাইল ৪ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের ইউনিট কমান্ডার হিসেবে যোগদান করেছেন। বাবা সৈয়দ আবু রায়হান সরকারের সচিব ছিলেন। মা রীনা খান। স্বামী লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর হোসেন, মেয়ে রিয়ানা ও ছেলে রিশানকে নিয়ে তার পরিবার।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: