জমজমাট অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯


প্রকাশিত:
৪ এপ্রিল ২০১৯ ১৪:৩৭

আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ২১:০৩

জমজমাট অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯

 আনিসুল কবীর,ঢাকা  : ১লা ফেব্রুয়ারী থেকে ঢাকায় চলছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯। ঢাকা ইউনিভার্সিটি সংলগ্ন বাংলা একাডেমী চত্বর এবং সোহরোওয়ার্দী উদ্যানের একটি অংশে অমর একুশে বই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বর্তমান বাংলাদেশে, বিশেষত রাজধানী ঢাকায় বছরের ফেব্রুয়ারী মাস জুড়ে মানুষের প্রধান আকর্ষন হিসাবে অমর একুশের গ্রন্থমেলা বা একুশের বইমেলা নিজের অবস্থান প্রতি বছর দৃঢ থেকে দৃঢতর করে চলেছে। একুশের বইমেলাকে অনেকে প্রাণের মেলাও বলে থাকে। তবে কোন বাহুল্য বাদ দিয়ে শুধু বই প্রদর্শন, প্রকাশ, লেখক পাঠক সবাবেশ, বই কেনা বিক্রি মিলে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এবং ছুটির দিন লাখো মানুষ এই ঐতিহ্যবাহী মেলাতে সববেত হয়। ঢাকার শিক্ষিত জনগোষ্ঠির প্রিয় জায়গা এই বই মেলা। বর্তমান ডিজিটাল যুগে অমর একুশের বইমেলার জনপ্রিয়তা কমার পরিবর্তে যেন আরও বেশি ব্যাপকতা লাভ করছে। মানুষ বই পড়া কমিয়ে দিয়েছে বা দিচ্ছে মনে করা হলেও, ঢাকার বইমেলায় বই প্রকাশ ও বিক্রয় বেশ অনেকটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিবছর। পৃথিবীর অন্য যে কোন বই মেলার সাথে অমর একুশের বই মেলার প্রধান পার্থক্য মনেহয়, এই মেলায় শুধুমাত্র বাংলা ভাষার বই প্রদর্শন করা হয়।এটা বাংলা বইয়ের মেলা। যদিও অনেক প্রকাশনী থেকে ইংরেজী ভাষার বই প্রদর্শীত ও বিক্রয় করা হয়, তদুপরি এই মেলা যেন বাংলা ভাষাভাষীদের মিলন মেলা। মানুষ শুধু বই দেখতে বা কিনতে আসেনা, বরং অধিকাংশ মানুষের মধ্যে একুশে বইমেলা একটা আবেগের নাম। ফেব্রুয়ারী মাস জুড়ে অমর একুশে বইমেলায় কয়েকবার করে ঘুরতে বা বই কিনতে আসা চাই অধিকাংশ ঢাকাবাসির।



১৯৭২ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারীতে মুক্তধারা প্রকাশনীর চিত্তরঞ্জন সাহা বাংলা একাডেমীর বর্ধমান হাউসের সামনে চট বিছিয়ে ৩২টি বই নিয়ে বই মেলার গোড়া পত্তন করেন।১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলা একাডেমীর সেই সময়ের মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমীর সাথে বই মেলার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন। ১৯৮৩ সালে প্রথম বই মেলাটিকে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নামকরণ হয়। তবে সেই সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ১৯৮৩ সালে বই মেলা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি, তবে এর পরের বছর অর্থাৎ ১৯৮৪ সালে আরম্ভরের সাথে অমর একুশের গ্রন্থমেলার আয়োজন করা হয়। মাত্র ৩২ বই দিয়ে শুরু করা একটি ছোট আয়োজন বিশাল আকার ধারন করার পথে এগিয়ে চলা শুরু করে। এরপর থেকে প্রতি বছর বাংলা একাডেমীর চত্বরের মধ্যেই বই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিলো। কিন্তু ধীরে ধীরে বই মেলার প্রকাশক ও পাঠকের সংখ্যা অত্যাধিক বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ২০১৪ সাল থেকে বাংলা একাডেমীর বিপরীত দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটি অংশে বই মেলার বিস্তার ঘটানো হয়। বর্তমানে বই মেলার মূল অংশ বলতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশটিকেই বোঝানো হয়।



বই মেলার ওয়েবসাইট ঘেটে জানা যায় ২০১৯শের বই মেলায় প্যাভিলিয়ন, স্টল মিলিয়ে মোট বরাদ্দ হয়েছে ৭৭০ ইউনিট, তার মধ্যে ১৫০টি বাংলা একাডেমি মাঠে যেখানে প্রতিষ্ঠান সংখ্যা ১০৪টি, এবং ৬২০টি ইউনিট সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেখানে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৭১টি। প্যাভিলিয়ন সংখ্যা ২৪টি।





অন্যবারের তুলনায় যেন এবারের বই মেলা আরও বেশি জমজমাট। দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফেব্রুয়ারী মাসের প্রতিটি ছুটির দিনে বিকালের পরে মেলায় পা ফেলা দায় হয়ে পরে। অসংখ্য মানুষের আনাগোনায় তৈরী হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। মেলায় শিশুদের জন্য শিশু চত্বর নামের একটি অংশ আছে, সেখানে শিশুতোষ বইয়ের সম্ভার নিয়ে বেশ কয়েকটি স্টল এবং বাচ্চাদের খেলার জায়গা আছে। প্রতিদিন অসংখ্য শিশু ও তাদের পরিবার এই শিশু চত্বরের স্টল গুলো পরিদর্শন ও বই কিনতে মেলায় আসে। মেলার মধ্যে এক কোনায় ফুড কর্নার ও মেলার মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিনা মূল্যে পানি পানের ব্যাবস্থা করেছে।



তবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে এবার শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য হুইল চেয়ার ও হুইল চেয়ার দিয়ে ঘোরানোর জন্য ভলান্টিয়ারের ব্যাবস্থা।



অতীতে বইমেলায় আসা নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হতো বাংলা একাডেমীর নজরুল বা বটমূলের মঞ্চে। এখন সোহরোওয়ার্দী উদ্যানের অংশে বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের মঞ্চ করা হয়েছে। প্রতিদিন শতাধিক নতুন বই প্রকাশিত এবং প্রদর্শীত হচ্ছে একুশে বই মেলায়। টিভি, রেডিও ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা ক্যামেরা নিয়ে লেখক, প্রকাশক ও দর্শনার্থীদের সাক্ষাৎকার সরাসরি প্রচার করে থাকে। ফলে ঘরে বসেও প্রতিদিনের বই মেলার খবর পেয়ে যায় বই প্রিয় দর্শকরা।  





বইপ্রেমী ঢাকাবাসির হৃদয়ে একুশে বই মেলা যেন আনন্দের বার্তা বয়ে নিয়ে আসে প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে। এই মেলায় একবারের জন্য হলেও পা চাই ই চাই অধিকাংশ মানুষের। এ মেলা উপলক্ষে প্রবাসী বাংলাদেশী অনেক মানুষ দেশের আগমন করেন। বই মেলা নিয়ে বাংলাদেশীদের আবেগ উছ্বাস ধিরে ধিরে আরও বৃদ্ধি লাভ করুক এটিই বই প্রকাশের সাথে সংশ্লিষ্টদের চাওয়া।       


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top