কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে বাদ পড়ছেন মন্ত্রীরা
প্রকাশিত:
১০ এপ্রিল ২০১৯ ১৬:৩৩
আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ২১:০৫

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকতে পারবেন না মন্ত্রীরা। আওয়ামী লীগের আগামী অক্টোবরে অনুষ্ঠিতব্য দলের কাউন্সিলে এরকম সিদ্ধান্ত নেয়া হতে চলেছে। দল এবং সরকারকে আলাদা করতে আওয়ামী লীগ এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে। দলের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ছাড়া অন্যকোন কেন্দ্রীয় নেতা মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভূক্ত থাকলে তাদেরকে হয় মন্ত্রীত্ব না হলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গ্রহণ করতে হবে। আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির ১১ জন নেতা মন্ত্রিসভায় রয়েছেন। এরা হলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ন সাধারন সম্পাদক ডা: দীপু মনি, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক টিপু মুনশি, আইন বিষয়ক সম্পাদক শ. ম রেজাউল করিম, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, খালেদা মাহমুদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের মধ্যে দুজন; নুরুল কবির হুমায়ূন এবং বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান। অক্টোবরে কাউন্সিলের সময় যদি তাঁরা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তাহলে তাদের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হবে বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছেন। তবে এখানে উপদেষ্টা মণ্ডলী অন্তর্ভূক্ত হবেন না। কারণ উপদেষ্টারা নির্বাহী দায়িত্ব পালন করেন না, এটা আলংকারিক পদ।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসেছে। অনেকেই এমপি কিংবা মন্ত্রী হিসেবে মনোনয়ন পান না। ফলে তাদেরকে দলে জায়গা দিতে হবে এবং তারা যেন দলের জন্য কাজ করতে পারে। অন্যদিকে যারা মন্ত্রী হন তারা মন্ত্রণালয় কিংবা সরকারি কর্মকাণ্ডে তাদের ব্যস্ত থাকতে হয়। ফলে দলের জন্য তারা সময় দিতে পারেন না।
উল্লেখ্য যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দল এবং সরকার আলাদা করার প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এজন্যই তিনি শুধুমাত্র দল চালানোর জন্য মন্ত্রিত্ব ছেড়েছিলেন এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন, যে সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে বিবেচিত হবে। কিন্তু ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট এর পর আওয়ামী লীগ যখন পুনর্গঠিত হয় এবং ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে তখন বাস্তবতা বিবেচনা করে দল এবং সরকারকে আলাদা করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এখন টানা তিন মেয়াদে যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেছে এবং তিনবারই আওয়ামী লীগ দুই তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করেছে কাজেই এখন দল এবং সরকারকে আলাদা করার প্রয়োজন রয়েছে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতারা মনে করছেন। দলের সভাপতি দলের বিভিন্ন ফোরামে স্পষ্ট বলেছেন যে, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। দলের নেতারা যারা মন্ত্রী হয়েছেন তারা সংগঠনে অনিবার্যভাবেই সময় দিতে পারে না। কাজেই দলকে শক্তিশালী করার জন্য ফুল টাইম নেতৃত্বের প্রয়োজন। তবে দলের সাধারণ সম্পাদক ফুল টাইম হবেন না তিনি মন্ত্রী হবেন এটা নিয়ে এখন পর্যন্ত অনিশ্চয়তা রয়েছে। একটি সূত্র বলছে যে, শেষ পর্যন্ত যদি ওবায়দুল কাদের পুরোপুরি সুস্থ না হন তাহলে পরে হয়তো দলে দীর্ঘদিন পর একটি পূর্ণকালীন সাধারণ সম্পাদক দেয়া হতে পারে। তবে সাধারণ সম্পাদক বাদ দিয়ে অন্য পদগুলোর ক্ষেত্রে এবার কঠোরভাবে যে নীতিটি অনুসরণ করা হবে তা হলো যদি তিনি মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী হন তাহলে তিনি দলের কার্যনির্বাহী কমিটি থেকে বাদ পড়বেন। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের তৃনমূলে এবং বিভিন্ন পর্যায়ে দক্ষ মেধাবী এবং বিচক্ষণ নেতৃত্ব আছে যারা আসলে জায়গা পাচ্ছেন না। যার ফলে নেতৃত্বের বিকাশ হচ্ছে না। এ কারণেই আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা এরকম সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন বলে আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: