সম্মেলন ঘিরে আওয়ামী লীগের ব্যাপক তৎপরতা
প্রকাশিত:
৩ জুলাই ২০১৯ ১৯:৪৭
আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ০৮:৩৬

অক্টোবরে জাতীয় সম্মেলন করার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আর এ সম্মেলন ঘিরে বেড়েছে সাংগঠনিক তৎপরতা। নানামুখী কর্মসূচি আর কর্মব্যস্ততায় কাটছে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দিনরাত। রমজান, ঈদ ও বাজেট অধিবেশনের কারণে প্রস্তুতির কাজ অনেকটা থমকে ছিল। তবে ওইসময় পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। এখন জেলায় জেলায় সাংগঠনিক সফর শুরু করতে যাচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩শে অক্টোবর দলটির সর্বশেষ সম্মেলন হয়। সে হিসাবে আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরের ২৩শে অক্টোবর।
একারণে অক্টোবরেই আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় দলটির কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, কাউন্সিল ঘিরে আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি শুরু করেছে। এজন্য সাংগঠনিক সফর গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সম্মেলন নিয়ে যেনো কোন ধরণের বিভেদ না থাকে সে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। তিনি বলেন, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা সম্মেলন নিয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট কিছু পরামর্শ ও দায়িত্ব দিয়েছেন। আমরা সেগুলো নিয়ে নিরলস কাজ করছি। আশা করি এবারের সম্মেলন হবে সবচেয়ে ভালো এবং সাংগঠনিকভাবে গোছালো। আবদুর রহমান বলেন, এ লক্ষ্যে কাউন্সিলের আগে দলের মধ্যে বড় ধরনের বিভেদ কমাতে ওই টিম উদ্যোগ নেবে। পাশাপাশি কাউন্সিলকে উৎসবমূখর করতে কাজ করবে তারা। এদিকে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা দল নিয়ে কি ভাবছেন তাও খতিয়ে দেখবেন টিমের সদস্যরা। তৃণমূলের মতামত ও অভিপ্রায়ের কথা শুনবেন তারা। নেতারা জানিয়েছেন, দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে। উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা জানান, দলে নতুন নেতৃত্ব তৈরি করতে সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটিতে তরুণদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এতে বেশ কিছু নতুন মুখ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে স্থান পাবেন। পাশাপাশি বর্তমান কমিটি থেকে বাদ পড়বেন অনেকে। তারা জানান, ছাত্রলীগের সাবেক কিছু নেতা বিশেষ করে যারা সংগঠনটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বা শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বে ছিলেন এবং বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন তাদের একটি অংশ এবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে পারেন। দলকে শক্তিশালী রাখতে সাংগঠনিক ভিত্তিকে শক্ত করার উপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা যাতে সার্বক্ষণিক দলে সময় দিতে পারেন সে বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা একজন নেতা একই সময় মন্ত্রী হলে তাকে দল এবং সরকারে দায়িত্ব পালন করতে হয়। এ অবস্থায় দুই দিকে সময় দিতে গিয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এ বিষয়টিও আলোচনায় আসছে জোরালোভাবে। দলীয় নেতারা বলেন,বিভিন্ন সময় বঙ্গবন্ধুর উদাহরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, মন্ত্রীত্ব ছেড়ে বঙ্গবন্ধু দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। দলের সভাপতির এই বক্তব্যের মধ্যেও বিষয়টি স্পষ্ট। সর্বশেষ দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ওই উদাহরণ সামনে আনেন। এবারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১০ জন রয়েছেন। আগামী সম্মেলনে এটা আরও কমে আসবে। দল ও সরকারকে আলাদা করার দীর্ঘদিনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই এটা করা হতে পারে। দলের অপর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আওয়ামী লীগের মতো বড় ও জনপ্রিয় দলের কাউন্সিল ঘিরে নানা ধরনের হিসাব-নিকাষ হবে, আলোচনা হবে এটাই তো স্বাভাবিক। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে তৃণমূলে (মহানগর,জেলা, উপজেলা) ও সহযোগী সংগঠনকে সম্মেলন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এভাবে সারাদেশে সংগঠনকে গুছিয়ে এনে কেন্দ্রের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা মানবজমিনকে জানান,প্রাথমিকভাবে ৭৭টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে যেসব জেলা ও উপজেলার কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে, সেগুলোর তালিকা তৈরি করা হয়েছে। গত ১১ মে খুলনা বিভাগ থেকে এই সফর শুরু হয়। কিন্তু রমজান মাসের কারণে পরে সম্মেলন স্থগিত করা হয়। এরইমধ্যে নীলফামারী ও রংপুর জেলার পাঁচটি উপজেলার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই ওইসব উপজেলার সম্মেলন অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে। তবে আগস্ট মাসজুড়ে শোকের কর্মসূচি থাকায় ওই মাসে কোনও সম্মেলন হবে না। ফলে এর আগে চলতি জুলাই মাসের মধ্যেই বেশির ভাগ জেলা সম্মেলন শেষ করা হবে। কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, যেসব জেলা-উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন হয়নি, কোন্দল বিদ্যমান, সংগঠন দুর্বল, পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই, নেতারা বয়স্ক ও অসুস্থ সেসব জেলা ও উপজেলায় সম্মেলন করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া, যেসব এলাকায় সংগঠনে বিএনপি-জামায়াত বা অন্য সংগঠন থেকে অনুপ্রবেশ ঘটেছে, তাদেরসহ যারা বিতর্কিত কাজের কারণে সমালোচিত, তাদের বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। দলের শুদ্ধি অভিযানে বিতর্কিতদের বাদ দেয়া হবে বলেও জানা গেছে। যোগ্য ও অযোগ্য নেতাদের তালিকাও করা হচ্ছে। সাংগঠনিক সম্পাদকদের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে কেন্দ্র ব্যবস্থা নেবে।
উৎসঃ mzamin
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: