দেশে গ্রেপ্তার-ক্রসফায়ারেও থামছে না ধর্ষণ


প্রকাশিত:
৪ জুলাই ২০১৯ ১৭:২৮

আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ০৮:৩৬

দেশে গ্রেপ্তার-ক্রসফায়ারেও থামছে না ধর্ষণ

চট্টগ্রামে বন্দুকযুদ্ধে মরছে ধর্ষণ মামলার আসামি। গ্রেপ্তার ও আদালতের সাজা পাওয়ার ঘটনাও কম নয়। তবুও যেন থামছে না ধর্ষণ। প্রতিদিন চট্টগ্রাম নগরবাসীর কানে পৌঁছাচ্ছে কোনো না কোনো ধর্ষিতার করুণ চিৎকার। কোনো না কোনো শিশু ও নারী কাতরাচ্ছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে। যা নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা পুলিশ। 



পুলিশের তথ্যমতে, বিয়ের প্রলোভনে পড়ে উঠতি বয়সের কিশোরী ও তরুণীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে বেশি। কোনো রকম প্রলোভন ছাড়াই জোরপূর্বক ধর্ষণের ঘটনাও ঘটছে।



এরমধ্যে বাবা-চাচা’র হাতে মেয়ে ধর্ষণের ঘটনাও রয়েছে। যা বিস্ময়কর। 



চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরেআলম মিনা বলেন, জুন মাসের শেষ সপ্তাহে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় চাচার হাতে নয় মাসের শিশু ধর্ষণ এবং হাটহাজারী উপজেলায় বাবার ধর্ষণে ১৩ বছরের কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। 



এ ছাড়া ১২ই জুন কর্ণফুলী থানাধীন জুলধা ইউনিয়নের শুক্কুর ব্রিক ফিল্ডের পরিত্যক্ত ঘরে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ করে ৫ যুবক। কর্ণফুলি থানার ওসি আলমগীর মাহমুদের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম টানা ১৬ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে ১৪ই জুন অভিযুক্ত ৫ যুবককে গ্রেপ্তার করে। 



বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রেমিকাকে চট্টগ্রাম থেকে ডেকে নারায়ণগঞ্জ এনে ধর্ষণের ঘটনায় পলাতক আসামি রবিউল হাসান সানিকে গত ১১ই জুন গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত ৭ই জুন রাতে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে রবিউল হাসান। 



গত ২৩শে মে রাউজান বাগোয়ান ইউনিয়নে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণ মামলার আসামি সবুজ বৈদ্য (২৫)কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১৪ই মে বাঁশখালীতে ১২ বছর বয়সী এক মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে আসামি মাদ্রাসা শিক্ষক মো. ফয়জুল্লাহকে আটক করে র‌্যাব। 



বাঁশখালী উপজেলার ডাকাতিয়া ঘোনা গ্রামের দুই ভাই ফাহিম ও তৌহিন এক মাদ্রাসাছাত্রীকে অপহরণ করে। গত ৭ই মে সন্ধ্যায় তাদের বাড়ি থেকে ঐ ছাত্রীকে উদ্ধার করে পিবিআই। তাদের বিরুদ্ধে থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন মেয়েটির মা।



গত ১লা মে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন। মামলার পর অভিযুক্ত শিক্ষার্থী মো. কায়কোবাদ (২২)কে ক্যামপাস থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১২ই এপ্রিল লোহাগাড়া উপজেলার উত্তর আমিরাবাদ এলাকায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মামলার আসামি সাইফুল ইসলাম নিহত হয়েছে। 



একই দিনে নগরীর ডবলমুরিংয়ে ১০ বছরের এক শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা থেকে পুলিশ অভিযুক্ত মো. জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করে। ৫ই ফেব্রুয়ারি বাঁশখালীতে এক শিশু (১২)কে ধর্ষণের অভিযোগে মো. মেজবাহ (২৫) নামের এক যুবককে আসামি করে বাঁশখালী থানায় মামলা করেন শিশুটির বাবা। 



গত ৩০শে জানুয়ারি নগরীতে এক শিক্ষার্থীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে চলন্ত প্রাইভেট কারে ধর্ষণ করে তিন চালক। এ সময় ধর্ষণের ভিডিওচিত্রও ধারণ করে তারা। পরে এদের একজন পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত এবং দুইজন গ্রেপ্তার হয়। নিহত প্রাইভেট কার চালকের নাম মো. সাহাবুদ্দিন।



এভাবে বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যু এবং গ্রেপ্তারের পর কারাগারে অথবা আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার ঘটনা ঘটলেও থামছে না ধর্ষণ। প্রতিদিন ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনে চরম উদ্বেগ বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মাহবুবুর রহমান। 



তিনি বলেন, থানায় হওয়া মামলা এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে নারী ও শিশু নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে না। এর চেয়েও বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। যা আমাদের গোচরে আসছে না। কারণ অধিকাংশ ধর্ষণের ঘটনাই নির্যাতিতের পরিবার গোপনের চেষ্টা করে। পরিস্থিতির উন্নতিতে কৌশল নির্ধারণ ও সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর উপর জোর দেন তিনি। 



এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেন, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা একটি সামাজিক সমস্যা। মানুষের মধ্যে যে আদিম প্রবৃত্তি তা দমিয়ে রাখতে হলে শৈশব থেকে বা পরবর্তীতে স্কুল-কলেজে যথাযথ জ্ঞানচর্চা ও নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। যখন কেউ ধর্ষণ করে বা হত্যা করে তখন সে আনকনশাস থাকে। অবদমিত প্রবৃত্তি তখন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এ ধরনের ঘটনা বাড়তে দিলে সামাজিকীকরণ থাকবে না। 



মানবাধিকারকর্মী আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমাদের পুরো সিস্টেমটা নারী ও শিশুবান্ধব না। মেডিকেলে গেলে কখনো বলে পুলিশ নেই, কখনো বলে ডাক্তার নেই। ধর্ষণের শিকাররা ওসিসিতে যাওয়ার পর নানাভাবে হয়রানির শিকার হন। আর নির্যাতিতা যদি গরিব হন, তাহলে তো কথাই নেই।



তিনি বলেন, ধর্ষণ মামলাগুলো খুব সপর্শকাতর। ধর্ষণের আলামতগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয় না। রেপ কেসের ক্ষেত্রে ভিকটিমের পরিধেয় কাপড় গুরুত্বপূর্ণ আলামত। অবিবাহিত হলে ভিকটিমের পরিধেয় কাপড় এক সপ্তাহের মধ্যেই পরীক্ষা করতে হয়। আর বিবাহিতের ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টা পেরোলেই আলামত নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় দেখা যায় সবকিছু শেষ, সার্টিফিকেট দিতেও গড়িমসি করে।



উৎসঃ   মানবজমিন


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top