দুই বাংলার স্বর্ণযুগের কিন্নর কন্ঠী শিল্পী: রুনা লায়লা : ডঃ সুবীর মণ্ডল


প্রকাশিত:
২ আগস্ট ২০২১ ১৯:১১

আপডেট:
২ আগস্ট ২০২১ ২২:৫৮

ছবিঃ রুনা লায়লা

 

দুই দেশের অসাধারণ জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী রুনালায়লা, সঙ্গীতকে শৈশব থেকে যে ভাবে লালন করেছেন, তার তুলনা নেই। এই কণ্ঠশিল্পীকে নিয়ে বাঙালির আত্মশ্লাঘা স্বাভাবিক। এমন একটা সময়ে তিনি গান গেয়েছেন, যে সময়ে বিনোদন-শিল্প ছিল খানিকটা নিঃসঙ্গ। বর্তমান যুগের মতো এত জাঁকজমক এবং ঠমক কোনওটাই ছিল না। নানান ঘরানার সঙ্গীতের ভাবাময় মূর্ছনাকে তিনি উপমহাদেশে ও বিশ্ব-দরবারে উপস্থাপিত করেছিলেন, রুনালায়লা তখন ছিলেন দুই বাংলার আইকনিক ইমেজ। তাঁর অনন্য গায়কির বিপুল সংখ্যক শ্রোতার কাছে আইকনিক ইমেজ পরিণত করে তোলে। সঙ্গীতের নানান শাখায় ছিল অনায়াস বিচরণ। দীর্ঘ সঙ্গীত জীবন পেরিয়ে গেলেও তাঁর কন্ঠমাধুর্য আজও অমলিন, শুধু তাই নয়, তাঁর বহু গান জনচিওকে জয় করে কালজয়ী হয়েছে। প্রজন্মের পর প্রজন্মের মুখে সেই সব গানের কলি ঘুরেফিরেই, বারেবারে এসেছে। সেসব গানের আবেদন এতটাই যে পরবর্তী সময়ে অন্য শিল্পীদের কণ্ঠে গানগুলি অজস্রবার গাওয়া হলেও, মূলের মর্যাদা এতটুকুও ক্ষুন্ন হয়নি। স্রষ্টার এমন স্বীকৃতি ক'জনের ভাগ্যে থাকে? তাঁর কষ্টের সঙ্গীত দেশকালের সীমান্তরেখা অতিক্রম করেছে। তাঁর বেশকিছু গান মধ্যবিত্তের জীবনসমুদ্রে অবিরাম সন্তরণের মাঝে যেন ক্ষণিকের শ্বাস নেওয়ার ক্ষুদ্র অথচ সম্ভাবনাময় একটুকরো বিরতি। 

রুনা লায়লা তাঁর আজীবন সঙ্গীত সাধনায় নানান ধরনের গানে বিশেষ করে পল্লীগীতি, আধুনিক, গজল, পপ, ছায়াছবি, হিন্দি গানে বিশিষ্টতার স্বাক্ষর রেখেছেন। নানা ধরনের বাংলা গান তাঁর কন্ঠে ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। তাঁর গান দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে দু'বাংলার মানুষকে মুগ্ধ ও আপ্লুত করেছে। জীবনের গানে, জীবনকে ছোঁয়ার স্বাদ তিনি এনেছেন সহজ কথায়, সহজ সুরে, নতুন প্রজন্মকেও বাংলা গানে আকৃষ্ট করে রেখেছেন পাঁচ দশকের ওপর। দিনযাপনের সুখ-দুঃখের ব্যথা গানের কথা হয়ে উঠেছে বর্ণিল এই শিল্পীর অসাধারণ গায়কী আর কন্ঠস্বরে। "বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িতে দেখা পেলাম না,” "আল্লাহ মেঘ দে পানি দে," "একা একা ভালোলাগে না",  "ইস্টিশনে রেল গাড়িটা",  "সাধের লাউ,"  "খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়," আরও বহু কালজয়ী-জনপ্রিয় গানের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে স্বর্ণযুগের বাংলাগানের কিংবদন্তি শিল্পী রুনা লায়লা, যিনি এই উপমহাদেশের কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী। গঙ্গা-পদ্মা-মেঘনা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে, সময়-রুচি-মানসিকতা পালটে গেছে, তবুও তাঁর গানগুলোর মুগ্ধ করার ক্ষমতা আজোও কমেনি বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে।                         

১৯৬৪ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ করার পর দেখতে দেখতে ৫৪ বছর পূর্ণ করলেন এই চিরসবুজ গানের পাখিটি। তাঁর গায়কী প্রতিভা অনন্য। তাঁর সেরা বাংলা গান ও হারানো দিনের গান দর্শকদের দশকের পর দশক ধরে আপ্লুত করে রেখেছিল। এটাই ইতিহাস। বেশকিছু কালজয়ী গান আজো শুনতে পাই (১) তুমি আমার জীবন, তোকেই দেব মন, (২) সুজন মাঝিরে, (৩) বেদের মেয়ে জোছনা, (৪) আগে জানলে তোর, (৫) আমায় ভাসাইলিরে, (৬) লোকে বলে ও বলেরে (৭) গানেরই খাতায় স্বরলিপি, (৮) যখন আমি থাকবো নাকো, (৯) পান খাইয়া ঠোঁট লাল, (১০) ও বন্ধুরে প্রাণের বন্ধুরে (১১) জানে মান ইতনা বাতা দো, (১২) দিন ওয়া  দিনওয়া ম্যা (১৩) কাটেনা  কাটেনা রাতয়া।

রুনা লায়লার জন্ম ১৭ই নভেম্বর, ১৯৫২। তিনি একজন খ্যাতনামা বাংলাদেশী কন্ঠশিল্পী। তিনি বাংলাদেশে চলচ্চিত্র, পপ ,পল্লীগীতি ও  আধুনিক সঙ্গীতের জন্য বিখ্যাত; তবে বাংলাদেশের বাইরে গজল শিল্পী হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে তার সুনাম আছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই তিনি চলচ্চিত্রের গায়িকা হিসাবে কাজ শুরু করেন। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতীয় এবং পাকিস্তানী চলচ্চিত্রের অনেক গানে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন। রুনা লায়লা বাংলা, উর্দু, পাঞ্জাবি, হিন্দি, সিন্ধি, গুজরাটি, বেলুচি, পশতু, ফার্সি, আরবি, মালয়, নেপালি, জাপানি, স্পেনীয়, ফরাসি, লাতিন ও ইংরেজি  ভাষাসহ মোট ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারেরও বেশি গান করেছেন। তার গান 'দমাদম মস্ত কালান্দার' অত্যন্ত জনপ্রিয়।

ছবিঃ আঁখি আলমগীর, রুনা লায়লা, আলমগীর

রুনা লায়লা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ এমদাদ আলী ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা এবং মা অনিতা সেন ওরফে আমেনা লায়লা ছিলেন সঙ্গীত শিল্পী। তার মামা সুবীর সেন ভারতের বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী। রক্তে ছিল গানের স্বর্ণরেণু। তাঁর যখন আড়াই বছর বয়স তার বাবা রাজশাহী থেকে বদলী হয়ে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের মুলতানে যান। সেই সূত্রে তার শৈশব কাটে পাকিস্তানের লাহোরে। করাচির সঙ্গীত জহুরি ওস্তাদ আব্দুল কাদের তাকে চিনতে পেরেছিলেন। অবশেষে তিনিই তাঁর সঙ্গীত গুরু হলেন। তাকে বিশেষ ভাবে তালিম দিতে শুরু করলেন। পরে ওস্তাদ হাবীব আহমেদের সান্নিধ্য লাভের সুযোগ পেয়েছিলেন। ১২ বছর পর্যন্ত তাঁর অসাধারণ সঙ্গীত প্রতিভা শুধুই পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। হঠাৎ বড়দিদি'র গলায় ব্যথার থাকার জন্য রুনা লায়লা তাঁর পরিবর্তে প্রথম ফাংশানে গান গাইতে সুযোগ পায়। এই সুযোগে সঙ্গীতপ্রেমিক মানুষের কাছে প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে তাঁর। এই সম্পর্কে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন "সেদিন আমি আমার চেয়েও দ্বিগুন বড় সেতার নিয়ে শাস্ত্রীয় সংগীত গেয়েছিলাম। আম্মা  বলেছিলেন, ঐ দিন নাকি আমি সবাইকে মাৎ করে দিয়়েছিলাম।"

ছবিঃ রুনা লায়লা, লতা মংগেশকর, আঁখি আলমগীর

পরবর্তীকালে মনজুর হোসেন প্লে - ব্যাকের জন্য ঘষে- মেজে পালিশ করেছিলেন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানি চলচ্চিত্র- "জুগনু"তে একটি বার বছরের ছেলের কন্ঠে গান গাওয়ার প্রস্তাব আসে, এই কারণে এই গানের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন গুরুজী মনজুর হোসেনের কাছে। এক মাস ধরে তিনি রুনা লায়লাকে রেওয়াজ করান। রুনা লায়লার সঙ্গীতশিল্পী হয়ে ওঠার পিছনে করাচি ও লাহোরের ভূমিকাকে কোন মতেই অস্বীকার করা যায় না। তাঁর সঙ্গীত জীবনের আঁতুর ঘর ছিল করাচি ও লাহোর। এরপর আর তাঁকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শুধু ওঠা আর ওঠা। সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে গেছেন। সে-এক বর্ণময় ইতিবৃত্ত। পরতে পরতে বনেদিয়ানার ছাপ। গায়কী ভঙ্গিমায় ছিল আভিজাত্যের ছোঁয়া।

১৯৬৬ সালে লায়লা উর্দু ভাষার 'হামদোন' চলচ্চিত্রে "উনকি নাজরোঁ সে মোহাব্বত কা জো পয়গম মিলা" গান দিয়ে সঙ্গীতাঙ্গনে আলোচনায় আসেন। ১৯৬০-এর দশকে তিনি নিয়মিত পাকিস্তান টেলিভিশনে সঙ্গীত পরিবেশনা করতে থাকেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সালে তিনি জিয়া মহিউদ্দিন শো-তে গান পরিবেশন করতেন এবং ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দেওয়া শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি কলকাতায় "সাধের লাউ" গানের রেকর্ড করেন। একই বছর মুম্বইয়ে তিনি প্রথমবারের মত কনসার্টে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এসময়ে দিল্লিতে তার পরিচালক জয়দেবের সাথে পরিচয় হয়, যিনি তাকে বলিউড চলচ্চিত্রে এবং দূরদর্শনের উদ্বোধনী আয়োজনে গান পরিবেশনের সুযোগ করে দেন।

"এক সে বাড়কার এক "চলচ্চিত্রের শীর্ষ গানের মাধ্যমে তিনি সঙ্গীত পরিচালক কল্যাণজি-আনন্দজির সাথে প্রথম কাজ করেন। এই গানের রেকর্ডিংয়ের সময় প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী লতা মুঙ্গেশকর তাকে আশীর্বাদ করেন। তিনি "ও মেরা বাবু ছেল ছাবিলা" ও "দমা দম মস্ত কালান্দার" গান দিয়ে ভারত জুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ভারত জুড়ে দমদমা  গার্ল হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। উর্দু ফিল্ম হাম দোনো চলচ্চিত্রে--'উনকি নজরোঁ মোহাব্বত কা জো পয়গম মিলা।' গান গেয়ে জয় করে নেন আপামর পাকিস্তানিদের হৃদয়। ১৯৮২ সালে বাপ্পি লাহিড়ি তাকে নিয়ে লণ্ডনে পপ আ্যলবাম তৈরি করেন যার নাম-"সুপারুনা"। অসামান্য জনপ্রিয়তা  পেয়েছিল এই আ্যলবাম। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এক লাখ কপি বিক্রি হয়। উপমহাদেশের খুব কম সঙ্গীতশিল্পীর জীবনে এই ধরনের সম্মান নগন্য। এই আ্যলবামের জন্য গোল্ডেন ডিস্ক অ্যওয়ার্ড লাভ ছিল সেই সময়ে দুর্লভ সম্মান। রুনা লায়লা চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত 'শিল্পী' নামক চলচ্চিত্রে চিত্রনায়ক আলমগীরের বিপরীতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন। 'শিল্পী' চলচ্চিত্রটি ইংরেজি চলচ্চিত্র 'দ্য বডিগার্ড-'এর ছায়া অবলম্বনে চিত্রিত হয়েছিল।
ব্যক্তিগত জীবনেও এসেছে টানাপোড়েন। তিন বার বিবাহবন্ধনে বাঁধাপড়েন রুনা লায়লা। প্রথমবার তিনি খাজা জাভেদ কায়সারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সেই বন্ধন বেশি দিন টেকেনি। দ্বিতীয়বার তিনি সুইস নাগরিক রন ড্যানিয়েলকে বিয়ে করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি বাংলাদেশী অভিনেতা আলমগীরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার এক কন্যা - তানি লায়লা। তার দুই নাতি জাইন এবং অ্যারন।         

 

তাঁর বর্ণময়  কর্মজীবনের সৃষ্টি সম্ভার  বৈচিত্র্যময়-

আই লাভ টু সিং ফর ইউ
সিনসিয়ারলি ইয়োরস রুনা লায়লা
গীত/গজলস (১৯৭৬)
রুনা ইন পাকিস্তান (গীত) (১৯৮০)
রুনা ইন পাকিস্তান (গজল) (১৯৮০)
রুনা গোজ ডিসকো (১৯৮২)
রুনা সিংস শাহবাজ কালান্দার (১৯৮২)
সুপার রুনা (১৯৮২)
গঙ্গা আমার মা পদ্মা আমার মা
দ্য লাভারস অব রুনা লায়লা
বাজম-এ-লায়লা
রুনা লায়লা-মুডস অ্যান্ড ইমোশনস (২০০৮)
রুনা লায়লা-কালা শাহ কালা (২০১০)
একক সঙ্গীত সম্পাদনা
বছর গান সঙ্গীত পরিচালক গীতিকার সহশিল্পী টীকা
২০১৬ "আই লাভ মাই বাংলাদেশ" রাজা কাশেফ দীপক কুমার দ্বীপ রুবায়েত জাহান স্বাধীনতা দিবসে গানটি বাজারে আসে।

টেলিভিশন :

১৯৯৯ সারেগামাপা (হিন্দী) বিচারক জিটিভি ভারত
সারেগামাপা বিশ্বসেরা বিচারক জি বাংলা ভারত
২০১২ সুরক্ষেত্র বিচারক দুবাই
সেরাকণ্ঠ বিচারক চ্যানেল আই বাংলাদেশ
২০১৩ পাওয়ার ভয়েস বিচারক চ্যানেল নাইন বাংলাদেশ
মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার ৭ অতিথি জি বাংলা ভারত
২০১৪ আমাদের কিংবদন্তি অতিথি বাংলাভিশন বাংলাদেশ
২০১৫ ক্ষুদে গানরাজ অতিথি বিচারক চ্যানেল আই বাংলাদেশ
গ্রেট মিউজিক গুরুকুল অতিথি বিচারক কালারস বাংলা ভারত
২০১৬ দাদাগিরি অতিথি জি বাংলা  ভারত

পুরস্কার ও সম্মাননা :

বাংলাদেশ:

স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী - দি রেইন  (১৯৭৬)
বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী - যাদুর বাঁশি  (১৯৭৭)
বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী - অ্যাক্সিডেন্ট  (১৯৮৯)
বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী - অন্তরে অন্তরে  (১৯৯৪)
বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী - তুমি আসবে বলে (২০১২)
বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী - দেবদাস  (২০১৩)
বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী - প্রিয়া তুমি সুখী হও (২০১৪)
জয়া আলকিত নারী সম্মাননা (২০১৬)
দ্য ডেইলি স্টার-স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড জীবনের জয়গান-আজীবন সম্মাননা (২০১৮)

ভারত:

(১) সায়গল পুরস্কার
(২) সঙ্গীত মহাসম্মান পুরস্কার - ২০১৩

(৩) তুমি অনন্যা সম্মাননা - ২০১৩

 

শেষকথা- এই বর্ণাঢ্য জীবন পার করার পরও একেবারে মাটির কাছাকাছি মানুষ রুনা লায়লা সঙ্গীতকে ভালোবাসেন মনের টানে। এখনো চলেছে তাঁর সঙ্গীতজীবনের সাধনা। ২০১৮ সালে "একটি সিনেমার গল্প নামে"একটি গান কম্পোজ করেছেন। "বন্ধু তোমার দেখা পেলাম না" জনপ্রিয় পল্লীগীতি বলতেই আমাদের মাথায় চলে আসে উপমহাদেশের কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী রুনা লায়লার কথা। সিলেটি ভাষায় গাওয়া এই গানটি উপমহাদেশের মানুষের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। রিমিক করে বহুভাবে গাওয়া হয়েছে এই গানটি। আর যে গানের জন্য তিনি পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে আজো জনপ্রিয় - "সাধের লাউ" জন মানসে এই গানের জন্য উন্মাদনা ঈর্ষণীয়। তিনিই একমাত্র গায়িকা যিনি বাংলা ছাড়া স্পেনিস, ফার্সী, নেপালি, লাতিন, ফারসি এবং ইংরেজী সহ ১৮টি ভাষায় দশ হাজারেরও বেশি গান গেছে ফেলেছেন। এ-এক বড় প্রাপ্তি বাঙালির। সেই সময়ে তাঁর গায়কী ভঙ্গিমা ও পারফর্মের পদ্ধতি নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও তিনি তা গায়ে মাখতে চাইতেন না। বরং দ্বিধা-দ্বন্দ্বহীন ভাবে নিজস্ব বিশ্বাস ও ভাবনার কথা খোলাখুলিভাবে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেনঃ

"দিস ইজ মাই ইমেজ, দিস ইজ পার্সোনালিটি, দিস ইজ মিঃ। আমি এভাবেই নিজেকে উপস্থাপন করতে চাই। আমি যা-নই, সেভাবে আসতে চাইনা।" বাবার পরামর্শেই তিনি নিজের দেশে চলে আসেন ১৯৭৪ সালে। এরফলে পাকিস্তানি চলচ্চিত্র জগৎ ও উর্দু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে একটা শূন্যতা সৃষ্টি হয়। "ডন" পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়- 'পাকিস্হানের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলে রুনা লায়লার শূন্যতা দূর করা সম্ভব?' বাংলা সঙ্গীতের ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে আজো তিনি বিরাজমান। সেই যুগে তার পারফর্ম

পদ্ধতি ছিল অনন্য। পরবর্তীকালে ঊষা উথুপ, জোজোর মধ্যেও এই ঘরোনা আমরা দেখতে পাই। শিল্পী জীবনের এত ডালপালা মেলে যে জীবন, তা আজো বহমান নদীর মতন। তাঁর কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন

"আর্টিস্টরা হচ্ছেন বাতাসের মতো। আমাদের নির্দিষ্ট কোন বাসসৃষ্টি বা শেকড় নেই। কোন গণ্ডির মধ্যে আমাদের আবদ্ধ করা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়--আমি নিজেকে ছিন্নমূল ভাবি না, আমি বরং পুরো বিশ্বেরই অন্তর্গত।'যতদিন গান বেঁচে থাকবে, যতদিন বাঙালির গান বেঁচে থাকবে, যতদিন সুর বেঁচে থাকবে, যতদিন বাঙালির সুর বেঁচে থাকবে, যতদিন ধানক্ষেত, মাঠ, নদী বেঁচে থাকবে, উঠোনে জ্যোৎস্নার ঢল নামবে, ভিখিরিও গান গাইবে, ততদিন রুনা লায়লা থাকবেন। সময়ের মালিন্যে তিনি আজো অমলিন সঙ্গীতপ্রেমী মানুষের হৃদয়ে। তিনি ভাবিকাল দ্বারা প্রসংশিত এবং সমকাল দ্বারা বন্দিত জীবনশিল্পী।

 

দু' বাংলার সঙ্গীত জগৎকে এখনো তিনি সমৃদ্ধ করে চলেছেন। নতুন প্রজন্মের কাছে তাঁর গান যথেষ্ট আকর্ষণীয়। ‌এটাই ইতিহাস। কিছু দিন আগে তাঁর ৬৮ তম জন্মদিন উদযাপিত হলো।

তথ্যসূত্র:  বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ধরনের পত্রিকা।

 

ডঃ সুবীর মণ্ডল
লোকগবেষক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প ও অণুগল্প, রম্যরচনা, চিত্রনাট্য এবং ভ্রমণকাহিনীর লেখক
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top