স্বর্ণচাঁপা : পরমার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়


প্রকাশিত:
১৪ নভেম্বর ২০২০ ২১:৪১

আপডেট:
১৪ নভেম্বর ২০২০ ২২:৪৯

ছবিঃ পরমার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

 

একঃ 

নিরাপদ পাল নিজের নামের মতই সবসময় তার বউ চাঁপার থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে ভালোবাসে, যতটা সামনে না পড়লে চলে ততটাই সামলে সুমলে চলে। সকালে বাজারটা রান্না ঘরের দোর গোড়ায় ফেলে দিয়েই কলঘরে ঢুকে পড়ে, জলের তোড়ে চাঁপার কথার তোড় যদি চাপা দেওয়া যায় সেই চেষ্টায়। কিন্তু কিছুই নিরাপদর নিরাপদে হবার নয়, তার বাজারের থলিতেই শত্রুতা করে পোকা বেগুন, পচা উচ্ছে, নরম মাছেরা ঢুকে পড়বেই। গত কালই নরম বাসি মাছ এনেছে বলে চাঁপা তাকে কী হেনস্থাই না করলো, অথচ নিরাপদ বেশ কানকো তুলে  পেট টিপেটুপেই বাটা মাছগুলো কিনেছিল। সঙ্গে সঙ্গে নবাবপুত্তুর ছেলে সজল ফোড়ন কাটলো, মা তুমি জানো না! বাজারের যত সব্জিওলা, মাছওলা সকাল থেকে অপেক্ষা করে থাকে, কখন তালঢ্যাঙা লোকটা বাজারে আসবে আর ওরা রাজ্যের পচা জিনিসগুলো লোকটার থলিতে ঢুকিয়ে দিয়ে ঝাড়া হাত পা হবে। নিরাপদ একটু বেশি লম্বা বটে, তা বলে তালঢ্যাঙা বলাটা কি ঠিক ? যতই হোক তুই নিজের ছেলে। কেন, তুই তো সকালের বাজারটা করতে পারিস, সে বেলায় নেই, ওসব ডার্টি জায়গায় গন্ধে নাকি তার গা গোলায়। তা আজকে সকালে মাছওলা মদনকে নিরাপদ বলতে গেছিল কালকের পচা মাছের কথা, তাতে সে বলে কিনা, কে রে এলেন হরিদাস পাল! আপনি নিজে বেছে যদি পচা মাছ কেনেন তবে আমি কী করতে পারি ? নিরাপদকে অফিসে সবাই হরিদাস পাল বলে বটে, তবে বাজারের মদনা সেটা জানলো কি করে তা টের পেলেন না, ভাবলেন এটা নিশ্চয়ই তাদের অফিসের গোপাল দত্তর কাজ। গোপালও এই একই বাজারে বাজার করে কিনা।

 

দুইঃ

গোপাল আজ মদনাকে খুব করে কড়কাবে। ঢাকুরিয়া বাজারে গোপাল দত্ত শুধু বাজার করে না, এখানে তার খুব দাপট। চ্যাটার্জি পাড়ার মাঠে ঢাকুরিয়া বাজার বসে আর ক্লাব সেক্রেটারি হিসেবে গোপাল দত্তর এখানে আলাদা প্রভাব। নিরাপদকে অফিসে যদিও সবাই হরিদাস পাল বলে ডাকে, কিন্তু গোপাল ওসবের মধ্যে থাকে না, কারণ নিরাপদকে চটালে গোপালের চলে না। নিরাপদর বউ চাঁপার প্রতি গোপালের একটা প্রেম প্রেম ভাব আছে, তাই নানা ছল ছুতোয় তাকে নিরাপদর বাড়ি যেতেই হয়। নিরাপদ যখন বললো, মদনা নিরাপদকে হরিদাস পাল বলে সম্বোধন করার পেছনে, গোপালই কলকাঠি নেড়েছে বলে ওর বিশ্বাস, তখন গোপাল খুব চাপে পড়ে গেল। বললো, বিশ্বাস কর নিরাপদ, আমি কেন মদনাকে ও কথা বলতে যাব ? ওটা একটা বলার মতো কথা হল! না মদনা আমার ইয়ার দোস্ত ? হ্যাঁ, আমি মদনার থেকে মাছ কিনি বটে, সে তো রাখাল আর পটলার থেকেও কিনি। দাঁড়া কাল সকালে মদনার অবস্থা আমি ঢিলে করে দেব। সন্ধ্যাবেলায় বৌদিকে গিয়ে সব বুঝিয়ে বলে আসছি। যদিও এটা চাঁপাকে বলে বোঝানোর মতো ব্যাপার নয়, তবু গোপাল এই ফাঁক গলে চাঁপার ঘ্রাণ নিতে উৎসাহী হয়। গোপালের ধারণা চাঁপার প্রতি তার প্রেম একান্তই প্লেটোনিক, চাঁপার একটু হাসি, আঁচলের খসখস আওয়াজ, টেবিলে চা রেখে ঘুরে দাঁড়িয়ে চলে যাওয়ার দৃশ্যে অপলক চেয়ে থাকাতেই গোপাল খুশী, আর যদি চাঁপা কোনও কাজ দেয় তো মনে হয় হাতে স্বর্গ এল। নিরাপদর বাড়িতে জলের পাইপ ফেটে গেছে বা গ্যাস লিক করছে, চাঁপা একটু হেসে যদি বলে গোপালদা একটু দেখুন তো, আপনার বন্ধু তো নাটক নিয়ে ব্যস্ত, ওর এসবদিকে কোনও খেয়ালই থাকে না। ব্যস, অফিস কামাই করে হলেও গোপাল জান হাজির করে কাজটা করে দেবে, তারপর চাঁপার মুখের হাঁসি মেশানো একটা থ্যঙ্কয়্যু আর হাতের এক কাপ চায়ে গোপাল যেন আকাশের চাঁদ হাতে পায়।

নিরাপদ একদিন কোনও একটা নাটকের প্রসঙ্গ তুলে অবশ্য বলেছিল যে প্লেটোনিক লাভ বলে কিছু হয় না। সে নিরাপদ নাটুকে লোক, ওরকম বলতেই পারে, অফিস স্যোশালে সেবার ‘জয়দ্রথ বধ’ নাটকে অর্জুনের চরিত্রে অভিনয় করতে চাইলো নিরাপদ আর তাতে কালচারাল কমিটির সেক্রেটারি শশধর মুখুজ্জে চিবিয়ে চিবিয়ে বলেছিল, কে হে তুমি হরিদাস পাল যে অর্জুন হবে ? সেই থেকে অফিসে নিরাপদর নাম হয়ে গেল হরিদাস পাল। সে নাটকে জয়দ্রথরূপী নিরাপদ কিন্তু শশধরের স্নেহধন্য অর্জুনরূপী বিকাশকে ম্লান করে দিয়েছিল। তা যাইহোক, গোপাল জানে তার প্রেম প্লেটোনিক না হয়ে উপায় নেই। একে তো চাঁপা বৌদি অতীব সুন্দরী হলেও ততোধিক মুখরা, গোপাল ভয় পায়। কিন্তু গোপালের আসল ভয় তার শ্বশুর হাইকোর্টের দুঁদে আইনজীবী বলাই গুপ্তকে। গোপালের স্ত্রী অতসী বলাই গুপ্তর একমাত্র মেয়ে, বলাই একবার ঘুণাক্ষরেও যদি জামাই এর চাঁপা প্রেম টের পায় তবে তাকে ত্যাজ্য জামাই ঘোষণা করবে। গোপাল কোটি টাকার সম্পত্তি হাতছাড়া করবার অতট ঝুঁকি নিতে পারবে না। তাও যদি চাঁপা বৌদি গ্রীন সিগন্যাল দিত, কিন্তু সিগন্যালটা যে ঠিত কী সেটাই এতদিনে গোপাল বুঝতে পারেনি।

তাই কোনও উৎসব অনুষ্ঠানে অতসীকে নিয়ে নিরাপদর বাড়িতে গেলে বা নিরাপদ চাঁপাকে নিয়ে তাদের  বাড়ি এলে, গোপাল খুব সতর্ক থাকে, আপ্রাণ চেষ্টা করে অতসীর চোখে যাতে সন্দেহ করবার মতো কিছু না পড়ে।

 

তিনঃ

চাঁপার মাথাটা গরম হয়ে যায়। কুড়ি বছর বয়সে এই বাড়িতে এসে ঢুকেছিল, তারপর সতেরো বছর ধরে নিরাপদর সংসারে ঘানি টানছে, এখন শ্বশুর শাশুড়ি গত হয়েছেন, একসময় সবাইকে নিয়ে সংসার করেছে চাঁপা একার হাতে। এমনকি তার পিতৃদত্ত নাম যে মধুমিতা, সেটাও চাঁপা আজকাল ভুলতে বসেছে। বিয়ের পর শাশুড়ি ছেলের বউএর গায়ের রঙ দেখে নাম রেখেছিল্ন স্বর্ণচাঁপা, কালে কালে স্বর্ণ লোপ পেয়ে সে নাম শুধু চাঁপায় পরিণত হয়েছে। নামটা চাঁপার দুচক্ষের বিষ, কিন্তু সারা দুনিয়ায় তার এই নামটাই শাশুড়ির সৌজন্যে চালু হয়ে গেছে, নিজের ছেলেরই বা কি একটা এমন নাম রেখেছিলেন! ‘নিরাপদ’ একটা নাম হল, আজকাল এসব নাম চলে না। আর শুধু নামেই নিরাপদ, তার কোনোদিকে খেয়াল আছে ? সে খালি টাকাটা ফেলে দিয়ে খালাস, অফিসের পর নাটক নিয়ে মেতে থাকে, আজ এখানে তো কাল ওখানে রিহার্সাল দিয়ে বেড়াচ্ছেন। কাজের মধ্যে করে সকালবেলার বাজারটা, তাও সেটা না করলেই বোধহয় ভালো ছিল, রাজ্যের পচা ধচা জিনিস এনে হাজির করে, মুখ কি চাঁপার এমনি এমনি ছোটে! ছেলেটার পনেরো বছর বয়স হয়ে গেল, চাঁপাই বলতে গেলে একা হাতে তাকে বড় করে তুলেছে, বাপের কোন কর্তব্যটা নিরাপদ করেছে ? ছেলের ক্লাস নাইন হয়ে গেছে, যদি বলা হয় একটু ইংরীজিটা দেখো, তিনি বসবেন দুনিয়ার সাহিত্যের আলোচনা করতে, সিলেবাস রইলো চুলোর দোরে, উনি বার্নাড শ থেকে রাসকিন বন্ড সব বোঝাতে বসবেন। চাঁপা রেগে উঠে ক্ষমা দিতে বললে, খালি হাসবেন আর মাথা নেড়ে নেড়ে বলবেন, বুঝলে এটাই হচ্ছে আসল শিক্ষা। চাঁপা বলে, ওরকম শিক্ষার কাঁথায় আগুন, তুমি গিয়ে মঞ্চে নাটক করো, এখানে আর করতে হবে না। নিরাপদ সেই সুযোগে টুক করে কেটে পড়ে রিহার্সাল দিতে। এই যে চাঁপার সাঁইত্রিশ বছর বয়সে সংসারের সব হ্যাপা সামলেও মারকাটারি যৌবন, নিরাপদর সে খেয়াল আছে ? অন্য লোকে ঠিক খেয়াল করছে। তাই আজ যখন গোপাল দত্ত, বাজারে মদনার নিরাপদকে হরিদাস পাল বলার গল্পটা রসিয়ে রসিয়ে শোনাচ্ছিল, তখন চাঁপা ঠিক করলো হরিদাস পালকে শায়েস্তা না করলেই নয়।

চাঁপা গোপালকে বললো, গোপালদা কাল সন্ধ্যায় সিনেমায় যাবেন ? মনি স্কোয়ার তো আপনার অফিসের কাছাকাছি, ওখানে মাল্টিপ্লেক্সে কী কী সিনেমা চলছে ? গোপাল নিজের এই সৌভাগ্য বিশ্বাস করতে পারছিল না, কাঁপা কাঁপা হাতে খবরের কাগজের পাতা উল্টে বললো একটা আমির খানের ছবি চলছে আর একটা টম হ্যাঙ্কস, মর্গান ফ্রীম্যানের ছবি। কোনটার টিকিট কাটব ? চাঁপা বললো দুটো সিনেমারই দুটো করে টিকিট কাটবেন, যেটা ইচ্ছে হবে সেটা দেখব আর রাতে ডিনার করে ফিরব। গোপাল হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে বাড়ির পথ ধরলো। উফ, এতদিনে সিগন্যাল পাওয়া গেছে মনে হচ্ছে। কালকে জিনসের সঙ্গে লাল গেঞ্জি আর স্নিকার পরবে, সেলুনটা ঘুরে গেল, চুলে একটু কালার করা দরকার ছিল। অতসীকে বললো কাল ফিরতে রাত হবে আর বাড়িতে ডিনার করবে না, গোপালের মনে পড়লো না কাল অতসীর জন্মদিন, অতসীও অভিমানে সে কথা মনে করিয়ে দিল না।

 

চারঃ

নিরাপদর অফিসে আজ একদম মন বসছে না। সত্য সন্ধানীর বিমল ফোন করে জিগ্গেস করলো, নিরাপদদা রিহার্সালে আসছেন তো ? নিরাপদ শরীরটা ভালো নেই বলে কাটিয়ে দিলেন। কাল রাত থেকেই চাঁপাকে কার সঙ্গে ফোনে গুজগুজ করতে শুনেছেন, আজ সন্ধ্যায় মনি স্কোয়ারে কার সঙ্গে যেন সিনেমায় যাবে। কে সেটা ? কোনও ছেলে যে সন্দেহ নেই। আজ সকালে যখন অফিস বেরোনোর সময় জুতো পড়ছেন তখন চাঁপা চাপা গলায় ফোনে বলছিল, আপনাকে ডেনিম আর সানগ্লাসে দারুণ লাগে, আর ব্যাকব্রাশটা আপনার গোঁফের সঙ্গে দারুণ মানিয়ে যায়। হ্যাঁ হ্যাঁ আমি পাঁচটার সময় পৌঁছে যাব একদম মাল্টিপ্লেক্সের গেটেই দেখা হবে। সজলটাও গেছে মামারবাড়িতে, নিরাপদ বাড়িতে ফোন করে যে কায়দা করে চাঁপা কখন বেরিয়েছে জেনে নেবেন সে উপায়ও নেই। টিফিনের পর সময় আর কাটতে চাইছিল না, নিরাপদ কিছুতেই বুঝে উঠতে পারলেন না, লোকটা কে হতে পারে।

 

পাঁচঃ

যদিও তার অফিস থেকে মনি স্কোয়ার দশ মিনিটের রাস্তা, তবু গোপাল চারটে বাজার আগেই মনি স্কোয়ারের মাল্টিপ্লেক্সের সামনে পজিশন নিয়ে নিল, তারপর থেকে ঘন ঘন হাতের ঘড়ি আর এসক্যালেটরের মধ্যে তার দুচোখ পেন্ডুলামের মত ঘোরাফেরা করছে, ঘড়িটা এত আস্তে চলছে কেন তা গোপাল বুঝে পেল না। একবার ভাবল ফুড কোর্টে ঢুকে একটু চা খেয়ে আসবে, কিন্তু যদি চাঁপা বৌদি এসে যায়, তাই সে সম্ভাবনা বাতিল করে দিল। অবশেষে একসময় গোপালের হৃদয়ে ঢেউ তুলে এসক্যালেটরের সিঁড়িতে সোনালি শিফনে চাঁপা ফুটে উঠল, কিন্তু সঙ্গে কাকে দেখছে গোপাল! সী গ্রীন সি থ্রু শাড়িতে অতসীকেও দুরন্ত লাগছে সেকথা এই প্রবল বিপদের সময়ও গোপাল মনে মনে স্বীকার করলো। এখন, গোপাল অতসীর ব্যাঙ্গালোরে পাঠরতা তরুণী কন্যা নীলাঞ্জনা এখানে থাকলে অতসীকে তার বড়

 বোন বলে চালিয়ে দেওয়া যেত। মুহূর্তের মধ্যে অবশ্য গোপালের ঘোর কেটে গেল, সে বুঝল তার ঘোর বিপদ, চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিল বলাই গুপ্ত তাকে ত্যাজ্য জামাই ঘোষণা করছে, কিন্তু এখন পালানোর পথ নেই, চাঁপা আর অতসী দুজনেই তাকে দেখেছে, গোপাল একটা ঝড়ের অপেক্ষা করতে থাকে।

চাঁপা হেসে বললো, দ্যাখ অতসী গোপালদা তোর জন্মদিনে কি সারপ্রাইসের ব্যবস্থা করেছে, একদম বিয়ের আগের দিনগুলোর মত সিনেমার টিকিট কেটে তোর জন্য অপেক্ষা করছে। হ্যাঁ, এই প্ল্যানটায় আমার আর তোর নিরাপদদার একটু ভূমিকা আছে। এই নাটকে আমরাও দুজন কুশীলব। তিনি আবার কোথায় লুকিয়ে মজা দেখছেন ? লোকটা সবেতেই নাটক ভালোবাসে, তবে কাফে দ্য কফির ভেতরে তাল ঢ্যাঙা লোকটাকে দেখতে পাচ্ছি। গোপালদা আমিরের ছবিটা আপনারা দুজন দেখুন, আমার হরিদাস পাল আবার ইংরীজি সিনেমার ভক্ত, ঐ সিনেমার টিকিট দুটো আমাকে দিয়ে দিন। অতসী, জন্মদিনে চুটিয়ে প্রেম কর। আমরা কাবাব মে হাড্ডি হব না বলেই গোপালদাকে দুটো আলাদা সিনেমার টিকিট কাটতে বলেছিলাম। তবে হ্যাঁ, শো শেষে ডিনারটা চারজন একসাথে করছি। গোপালদা বউএর জন্মদিনে খাওয়াচ্ছে।

গোপাল আর অতসীকে পেছনে ফেলে চাঁপা এক হরিদাস পালকে হাতছানি দিয়ে ডাকে, নিরাপদর নিজেকে খুব নার্ভাস লাগতে থাকে, এক স্বর্ণচাঁপার আগুনে তার সব সাজানো সংলাপ ছাই হয়ে যায়।

 

পরমার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top