বিশ্ব পরিবেশ দিবস আজ, করোনায় প্রকৃতি ফিরে পাচ্ছে তার প্রাণ
প্রকাশিত:
৬ জুন ২০২০ ০২:২০
আপডেট:
৬ জুন ২০২০ ০২:২৪

প্রভাত ফেরী: গত জানুয়ারি মাসের প্রকৃতি আর বর্তমান প্রকৃতির মধ্যে বিস্তর তফাৎ পরিলক্ষন করেছেন পরিবেশবিদরা। কিছুদিন আগেও মানুষের কাছে প্রকৃতি ছিলো অবহেলিত। কিন্তু কোভিড-১৯ এর তাণ্ডবে সারাবিশ্বের মানুষ যখন বিপর্যস্ত তখন প্রকৃতিতে ফিরেছে প্রাণ। গত চার মাস ধরে পৃথিবীর মানুষ একপ্রকার ঘরবন্দি। প্রকৃতির ওপর চালানোর অবিচার কমে আসায় প্রকৃতি যেন নিজেকে মেলে ধরেছে। ফিরেছে স্বমহিমায়। এই বাস্তবতা থেকে নতুন করে শিখতে শুরু করেছে মানুষ। তবে সেই শিক্ষা করোনার পরও থাকবে কিনা এখন সেটিই দেখার বিষয়। আর এই বিষয়কে মাথায় নিয়েই সারাবিশ্বে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষার যে তাগিদ দুনিয়াব্যাপি আলোচিত হচ্ছিলো মানুষের অতিপ্রয়োজনীয়তা তাতে বাঁধ সাধছিল। করোনা মানুষের সেই অতিপ্রয়োজনীতা কমিয়ে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করছে। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে ঢাকার বাতাসে যেমন কমেছে সিসার বিষ, তেমনি শব্দের দূষণও কমেছে।
এবার পরিবেশ দিবসের আয়োজক দেশ কলম্বিয়া। জার্মানির সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে তারা। গত বছর ছিল চীন। সারা বিশ্বের জীববৈচিত্র্যের ১০ শতাংশই রয়েছে কলম্বিয়াতে। অ্যামাজন এর একটি বড় অংশ রয়েছেই কলম্বিয়াতে। এই অ্যামাজনেই বছরের পর বছর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকার বনভূমিতেও গত বছর বড় রকমের আগুনের সূত্রপাত হয়।
জাতিসংঘ বলছে, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ না করাতে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্যই শুধু নষ্ট হচ্ছে না আমরা এর মাধ্যমে আমাদের জীবনকে ধ্বংস করছি। কোভিড আমাদের সেই শিক্ষা দিচ্ছে উল্লেখ করে জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে আমরা জীববৈচিত্র্য রক্ষা করলে শুধু খাদ্যেরই যোগান পাব না বরং ওষুধসহ নির্মল পানি এবং বাতাস পাব। যা মানুষের সুস্থতার বড় অনুষঙ্গ হতে পারে।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর রকিবুল আমিন বলেন, প্রাণীরা তার নিজস্ব পরিবেশে বাঁচতে চায়। এরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানুষের নানা উপকার করে থাকে। কিন্তু উন্নয়নের নামে অত্যাধিক হারে বন নিধনের কারণে বন্যরা মানুষের কাছাকাছি চলে আসছে, অনেক ক্ষেত্রে মানুষও বন্যদের সংস্পর্শে যাচ্ছে যার মাধ্যমে ছড়াচ্ছে এসব ভাইরাস।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, আমরা অনেক উন্নয়ন করেছি। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে তবে উন্নয়নের সময় আমরা পরিবেশকে সেভাবে গুরুত্ব দেয়নি। এখন আর গদবাধা উন্নয়ন নয়, পরিবেশ ও প্রকৃতি ঠিক রেখে টেকসই উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে। নয়লে আমাদের আগামী হবে অনেক ভয়ংকর। প্রকৃতি রক্ষা না করলে বছর বছর আসবে এমন অনেক করোনা ভাইরাস আর প্রাকৃতিক দুর্যোগতো আছেই।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’ এর বায়ুমান সূচকে (একিউআই) বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম স্থান থেকে সরে ৭৩ তমতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সূচকের মান জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাসে যেখানে ছিল ৩০০ এর উপরে। যা শুধু অস্বাস্থ্যকর নয়, দুর্যোগের পর্যায়ে বলে মনে করতেন বিশেষজ্ঞরা। সেখানে এখন সেই সূচক নেমে এসেছে ৫০ এর নিচে। গত দুইদিনের বৃষ্টিতে এখন তা নেমে দাঁড়িয়েছে ২৫ এ।
১৯৭৪ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ১৫০টি দেশে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয়। এবারে করোনা মহামারিতে ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘জীববৈচিত্র্য’। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি এ বারের পরিবেশ দিবসের স্লোগান দিয়েছে ‘ইটস টাইম ফর নেচার’ অর্থাৎ ‘সময় এখন প্রকৃতির’।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: