বাংলাদেশে তিন বাহিনীতে করোনায় আক্রান্ত প্রায় ৭ হাজার


প্রকাশিত:
৮ জুন ২০২০ ২৩:০০

আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ১৫:১৪

 

প্রভাত ফেরী: সারা দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে আইন-শৃঙ্খলায় নিয়োজিত তিন বহিনীর সদস্যদের মধ্যে। নানা প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে ‘সম্মুখ যোদ্ধা’ হিসেবে মাঠে কাজ করতে হচ্ছে। সারা দেশে রোববার পর্যন্ত তিন বাহিনীর ৬ হাজার ৭৩১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আবার তিন বাহিনীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। এরপরে যথাক্রমে আনসার ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া তিন বাহিনীতেই আক্রান্তের সংখ্যার প্রায় সমান সংখ্যক সদস্য কোয়ারাইন্টানে রয়েছেন। তিন বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, একক পেশা হিসেবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। রোববার পর্যন্ত পুলিশের ৬ হাজার ২০৬ জন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আনসারে আক্রান্ত হয়েছে ৩৯৭ জন। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিসের ১০ কর্মকর্তাসহ ১২৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এই তিন সংস্থার প্রায় আক্রান্তের সংখ্যার সমান সংখ্যক সদস্য কোয়ারাইন্টানে রয়েছেন। তবে, বর্তমানে বাহিনীগুলোতে আক্রান্তের চেয়ে সুস্থতার হার কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশ পুলিশের ২০৭ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত পুলিশের মোট ৬ হাজার ২০৬ জন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। শনিবার এ সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৯৯৯। এখন পর্যন্ত মোট ১৭ সদস্য মারা গেছেন। যার মধ্যে ১৬ পুলিশের সদস্য এবং বাকি একজন সিভিল কর্মকর্তা যিনি পুলিশে সংযুক্ত ছিলেন।

সূত্র আরও জানায়, করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ১ হাজার ৮২৮ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। সুচিকিৎসা ও সুনিবিড় পরিচর্যায় গতকাল পর্যন্ত ২ হাজার ৭৬৭ পুলিশ সদস্য করোনা জয় করে বাড়ি ফিরেছেন। পাশাপাশি পুলিশের মোট ২ হাজার ৭ সদস্য করোনার উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন। আক্রান্তদের সংস্পর্শে এসে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৬ হাজার ৪৫১ পুলিশ সদস্য।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা জানান, মাঠে নিয়োজিত সদস্যরা যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সুরতি থাকতে পারেন, সে জন্য সচেতনতার পাশাপাশি সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি জানানো হচ্ছে। সিনিয়র অফিসাররাও বিভিন্ন ইউনিটে গিয়ে তাদের সঙ্গে এসব নিয়ে কথা বলছেন। সুরাসামগ্রী ও পর্যাপ্ত জীবাণুনাশক সরবরাহে এবং ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা মো. রায়হান জানান, ফায়ার সার্ভিসের ১০ কর্মকর্তাসহ ১২৮ জন সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৯ জনকে হোম কোয়ারেনটাইনে রয়েছেন। সুস্থ হয়ে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদান করেছেন ৩২ জন। বাকি ৮৬ জনকে পূর্বাচল মাল্টিপারপাস ফায়ার সার্ভিস সেন্টারসহ বিভিন্ন স্থানে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেনটাইনে রাখা হয়েছে এবং ১ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

তিনি আরও জানান, করোনা আক্রান্তদের সকলেই ভালো আছেন। সুস্থ ৩২ জনের পর পর দুবার নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ হওয়ায় তাদের সুস্থ ঘোষণা করা হয়েছে। আক্রান্ত অন্যদের ওপর নিবিড়ভাবে নজর রাখা হচ্ছে এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি না হলে বা অবনতি হলে প্রয়োজনে তাদের আইসোলেশনে রাখা হবে বা হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হবে।

আনসার ও ভিডিপি সদর দফতরের উপ-পরিচালক (যোগাযোগ) মেহেনাজ তাবাসসুম রেবিন জানান, রোববার পর্যন্ত বাহিনীর দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ৩৯৭ জন সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ১১ জন। মোট আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩১০ জন। ঢাকার বাইরে ৮৭ জন। আক্রান্তদের মধ্যে হোম কোয়ারান্টাইনে আছেন ৩৪ জন। প্রাতিষ্ঠানিক ও বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে কোয়ারান্টাইনে আছেন ৯৬ জন। করোনা উপসর্গ নিয়ে ঢাকা মেডিকেল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৯৬ জন সদস্য। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত বাহিনীর এক সদস্য মারা গেছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ৫২ শতাংশ তথা মোট ২০৪ জন সুস্থ হয়েছেন।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top