সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুনঃ লাশের সংখ্যা ৪৯
প্রকাশিত:
৬ জুন ২০২২ ২০:১৯
আপডেট:
৭ জুন ২০২২ ০১:১৬

'আগুন আর কতোটুকু পোড়ে?/ সীমাবদ্ধ ক্ষয় তার সীমিত বিনাশ,/ মানুষের মতো আর অতো নয় আগুনের সোনালি সন্ত্রাস।'- লিখেছেন কবি হেলাল হাফিজ। আগুনের চেয়ে তিনি ভয়ংকররূপে দেখেছেন মানুষকে। 'মানুষে পোড়ালে আর কিছুই রাখে না/ কিচ্ছু থাকে না...।' চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে আগুন ও বিস্ম্ফোরণের ঘটনায় কবির কথাটিই সত্য হয়ে উঠেছে। দুর্ঘটনার আগুন এখানে যতটা না পুড়িয়েছে, তার চেয়ে বেশি মানুষ পুড়েছে গাফিলতি ও ভুলের কারণে। আগুন নেভাতে আসা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের কনটেইনারভর্তি রাসায়নিক থাকার তথ্যটি জানায়নি কর্তৃপক্ষ। আবার রাসায়নিকের এমন আগুন নেভাতে সক্ষম করা হয়নি ফায়ার সার্ভিসকে। আশপাশের চারটি জেলা থেকে সদস্যদের এনেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দীর্ঘ সময় লেগে যায় ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিটের। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী যুক্ত হয়েও কমাতে পারেনি ক্ষয়ক্ষতি। আমদানি ও রপ্তানি পণ্যবোঝাই সহস্রাধিক কনটেইনার পড়ে আছে বিধ্বস্ত অবস্থায়। সেই কনটেইনারের ফাঁকে পুড়ে অঙ্গার হয়ে আছে মানুষ।
শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। নেভাতে যায় ফায়ার সার্ভিস। একপর্যায়ে ভয়াবহ বিস্ম্ফোরণ হয়। গতকাল রোববার রাত ১২ টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লাশের সংখ্যা হয়েছে ৪৯। এর মধ্যে আছে ফায়ার সার্ভিসের সাত কর্মীর মরদেহও। এ ছাড়া এখনও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ১৫ জন। গতকাল রাত ১০টার পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস।
পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে কনটেইনারে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড থাকায়। ৩৩টি কনটেইনারে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ছিল প্রায় ৮০০ টন। আগুনের সংস্পর্শে এলে এসব রাসায়নিক তীব্র দাহ্য হয়ে ওঠে। এর সঙ্গে পানি যোগ হলে ভয়াবহ বিস্ম্ফোরকে পরিণত হয়।
ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন করতে এরই মধ্যে ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের সাত কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। লাশগুলো এতটা পুড়েছে যে স্বজনরাও তাঁদের চিনতে পারছেন না। মাত্র ১৫ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান। বাকিদের পরিচয় শনাক্ত করতে ফরেনসিক রিপোর্ট নেবে কর্তৃপক্ষ। এ জন্য ঢাকা থেকে আনা হচ্ছে বিশেষজ্ঞ দল।
আহতদের মধ্যে চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন দুই শতাধিক ব্যক্তি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছেন ৯৯ জন। কয়েকজন সংকটাপন্ন হওয়ায় তাঁদের ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
পরিচয় মিলেছে যে ১৫ জনের: নোয়াখালীর চাটখিল থানার আবদুর রশিদের ছেলে আলাউদ্দিন, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানার শামসুল হকের ছেলে মনিরুজ্জামান, ভোলা জেলার সদর থানার সিহাব উদ্দিনের ছেলে হাবিবুর রহমান, চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানার আবদুল মজিদের ছেলে রবিউল আলম, একই থানা এলাকার ফরিদুল আলমের ছেলে মো. মোমিনুল হক, মাহমুদুল ইসলামের ছেলে মহিউদ্দিন, হাসান আলীর ছেলে তোফায়েল আহমেদ, সীতাকুণ্ডের সোলাইমানের ছেলে আফজাল হোসেন, নোয়াখালীর সুধারাম থানার নিজাম উদ্দিনের ছেলে মো. সুমন, যশোরের বাঘারপাড়া থানার আবুল কাসেমের ছেলে ইব্রাহিম, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানার মৃত ছত্তার জমাদ্দারের ছেলে ফারুক জমাদ্দার, চট্টগ্রাম নগরের দক্ষিণ হালিশহরের মৃত আবদুচ সবুরের ছেলে হারুনুর রশিদ, মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানার মো. আজিজের ছেলে মো. নয়ন, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের শাহ আলমের ছেলে শাহাদাত হোসেন ও ফেনীর ফুলগাজী থানার আমিনুল্লাহ জমাদ্দারের ছেলে শাহাদাত উল্লাহ জমাদ্দার। এঁদের মধ্যে মনিরুজ্জামান ও আলাউদ্দিন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী।
আহতদের মধ্যে চমেকের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৪ জন, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৫ জন, ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ১৩ জন, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ২০ জন চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতাল, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, মেট্রোপলিটন হাসপাতাল ও সীতাকুণ্ডের কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে।
কেন রাসায়নিক আনা হয়েছিল ডিপোতে: চট্টগ্রামের স্মার্ট গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আল রাজী কেমিক্যাল লিমিটেড। চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার ফতেয়াবাদ ঠাণ্ডাছড়ি এলাকায় অবস্থিত কারখানাটিতে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড উৎপাদন করা হয়, যা বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। কারখানা থেকে রপ্তানির জন্য এ দাহ্য পদার্থ তাদের আরেকটি প্রতিষ্ঠান বিএম ডিপোতে এনে রাখা হয়। এ ছাড়া কারখানাটি সোডিয়াম সালফেট, সরবিটল, কস্টিক সোডা প্রিলসও উৎপাদন করে থাকে। এসব রাসায়নিক দ্রব্যও বিএম ডিপোতে মজুত থাকতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা। রপ্তানির জন্য এসব রাসায়নিক কনটেইনারে ভর্তি করে আনা হয়েছিল ডিপোতে। বিএম ডিপোর একটি অংশে ৫০০ মিটারের টিনশেড করে রাখা হতো রাসায়নিকভর্তি কনটেইনার। শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শেষে এখান থেকে রপ্তানির জন্য রাসায়নিকবোঝাই কনটেইনার তুলে দেওয়া হতো চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজে।
তবে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরক এনে রাখা হলেও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের কোনো লাইসেন্স ছিল না। লাইসেন্স ছাড়া কীভাবে বিস্ম্ফোরক মজুত করে রাখলেন- তার কোনো সদুত্তর নেই প্রতিষ্ঠানটির কাছে। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের বিস্ফোরক পরিদর্শক মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, 'ডিপোর কাজ কনটেইনার লোড-আনলোড করা। কোনো রাসায়নিক মজুতের সুযোগ নেই। তারা রাসায়নিক মজুত করেছে, সেটা আমাদের জানায়নি। আমাদের কাছ থেকে কোনো লাইসেন্সও নেয়নি। এ ধরনের জনবহুল এলাকায় রাসায়নিক মজুত করার কোনো সুযোগ নেই।'
স্মার্ট গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বলেন, 'আমি ঢাকা থেকে এসেছি। লাইসেন্স আছে কি নেই, তা জেনে জানাতে হবে।'
রাসায়নিক থাকার তথ্য জানায়নি: আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ডিপোতে এলেও রাসায়নিকভর্তি কনটেইনার থাকার তথ্য তাঁদের জানানো হয়নি বলে দাবি করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। আগুন নেভাতে আসা ফায়ার সার্ভিস কুমিল্লার সহকারী পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, 'হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের সঙ্গে পানি মেশায় বিস্ফোরণ হয়েছে। প্রথমে ডিপোতে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড থাকার কথা আমাদের জানানো হয়নি। তাঁরা সঠিক তথ্য না দেওয়ায় ক্ষতি বেশি হয়েছে।'
ফেসবুকে একজনের লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়, কনটেইনার ডিপোতে আগুন জ্বলছে। পানি ছিটিয়ে নেভানোর চেষ্টা করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এর মধ্যে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ম্ফোরণ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিস্ফোরণে ছিটকে পড়ে ফায়ার সার্ভিস ও আশপাশে থাকা লোকজন। কারও হাত ছিটকে পড়ে, কারও পা। মো. তুহিন নামে সীতাকুণ্ড থানার এক কনস্টেবলের পা উড়ে যায়। বিএম কনটেইনার ডিপোতে ২০ ফুট দীর্ঘ মোট ৪ হাজার ৩১৮টি কনটেইনার ছিল।
এর মধ্যে আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে এক হাজার ৪৩৪ কনটেইনারভর্তি পণ্য। এসব কনটেইনারে ছিল আমদানি ও রপ্তানি পণ্য। রপ্তানি পণ্য ছিল ৮৬৭ কনটেইনার। আর আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার আছে ৫৫৭টি। শতাধিক ব্যবসায়ীর এসব কনটেইনারে কত হাজার কোটি টাকার পণ্য ছিল তা এখনও নির্ণয় করা যায়নি।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন বলেন, 'রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কনটেইনার ডিপোর মালিকপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। এখানে কী ধরনের কেমিক্যাল আছে, তা কেউ বলতে পারছেন না। আগেও আমাদের তা জানানো হয়নি। পানি দিয়ে সব কেমিক্যালের আগুন নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে সময় বেশি লাগছে।'
চমেক হাসপাতালে এক রাত: চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দূরত্ব রাস্তা থেকে প্রায় ১০০ গজ। দূর থেকে সাইরেনের শব্দ ভেসে আসতেই দু'পাশে মানব দেয়াল তৈরি করছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। উৎসুক জনতার ভিড় এড়িয়ে অ্যাম্বুলেন্স ভেতরে ঢুকতেই কেউ নিয়ে আসছে ট্রলি, কেউ নিয়ে আসছে স্যালাইন। স্বজনের দেহ ভেবে কেউ ছুটে আসছে মুখ দেখতে। কেউ ছুটে আসছে পানি নিয়ে। চমেক হাসপাতালের চারপাশে স্বজনদের এমন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শুরু শনিবার মধ্যরাতে। গতকাল রোববার দিনভর এমন চিত্র পেয়েছে নতুন মাত্রা।
অর্ধশত অ্যাম্বুলেন্স দিনভর এসেছে আহত ও নিহত শতাধিক রোগী নিয়ে। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সৈয়দ আকমল হোসেন বলেন, 'গতকাল রাত থেকে এক হয়নি দুই চোখের পাতা। চিকিৎসক ও নার্সদের কেউই এমন বিভীষিকা দেখেননি কখনোই। হাসপাতালের মেঝেতে ঠাঁই নেই। হাসপাতালে খালি কোনো কক্ষ নেই। চারদিকে শুধু আগুনে পোড়া মানুষের আর্তনাদ।'
ছুটি বাতিল করে রাতেই হাসপাতালে ছুটে আসেন অর্ধশত চিকিৎসক ও নার্স। যে যেভাবে পেরেছেন, সেভাবে রোগীর সেবায় নিয়োজিত হয়েছেন। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, 'ছুটি বাতিল করে শহরের ডাক্তার ও নার্স যে যেখানে আছেন, সেখান থেকে হাসপাতালে চলে আসতে বলেছিলাম। অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছেন সবাই। রাতভর দায়িত্ব পালন করার পরও অনেকে রোববার দিনভরও ছিলেন হাসপাতালে। রোগী, নার্স ও ওয়ার্ডবয়দের স্যালুট জানাই আমি।'
বিস্ফোরণের বিষ তিন কিলোমিটার দূরেও: বিএম কনটেইনার ডিপোর ভয়াবহ বিস্ম্ফোরণে ঘটনাস্থলের আশপাশের অন্তত চার বর্গকিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। আগুন লাগার পর থেকে সারারাত এবং রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত থেমে থেমে বিস্ম্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। তবে বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে আগুন লাগার মূল জায়গায় দুপুর পর্যন্ত ঢুকতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের পর থেকে কালো ধোঁয়া আর গন্ধে টিকতে পারছেন না আশপাশের লোকালয়ের মানুষ। শিশুরা কান্না করছে। বৃদ্ধদের শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, বিস্ম্ফোরণের পর ঘরে থাকা টিভি, ফ্রিজ ও বৈদ্যুতিক পাখা নষ্ট হয়ে গেছে। লোহার টুকরা উড়ে এসে পড়েছে ঘরের চালায়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আর্থ জুমের স্যাটেলাইট ইমেজ বা ছবি বিশ্নেষণ করে স্কটল্যান্ডের ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নন্দন মুখার্জি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুন, উত্তাপ ও ধোঁয়া প্রত্যক্ষভাবে ছড়িয়েছে আড়াই বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে। আর এর দূরবর্তী প্রভাব পড়েছে ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায়।
রুদ্ধশ্বাস অভিযানে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও সেনাবাহিনী: আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর টিম। আগুন নেভাতে চট্টগ্রামের চারটি উপজেলা, ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা থেকে আসা ফায়ার সার্ভিসের ২৩টি ইউনিটের ১৮৩ সদস্য কাজ করছেন। এ ছাড়া উদ্ধারকাজে নানাভাবে সহায়তা করেছেন পুলিশ, র্যাব ও নৌবাহিনীর সদস্যরা। আগুন নেভাতে গিয়ে পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এক পুলিশের সদস্যের।
আইএসপিআর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ম্ফোরণের ঘটনায় উদ্ধার অভিযানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৫০ জন সদস্য কাজ করেন। উদ্ধার অভিযান ও আগুন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য তৎপর রয়েছে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষজ্ঞ দল। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ও নিরাপত্তা দলও কাজ করছে। বিস্ফোরণের কারণে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত রাসায়নিকসামগ্রী যাতে সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্য এই দল কাজ করছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর মিলিটারি পুলিশও সহায়তা করছে। সেনাবাহিনীর মেডিকেল টিম শনিবার রাত থেকেই কাজ করছে। আহত ব্যক্তিদের চট্টগ্রাম মেডিকেল ও সিএমএইচে স্থানান্তরে সেনাবাহিনীর অ্যাম্বুলেন্স সহায়তা করেছে। ফায়ার সার্ভিসের ১৪ সদস্যসহ আহত ১৫ জন চট্টগ্রাম সিএমএইচে চিকিৎসাধীন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য দিদারুল আলম ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, 'লোকালয়ে এভাবে রাসায়নিকের ডিপো কীভাবে গড়ে উঠল, তার অনুমতি ছিল কিনা- সে বিষয়ে দ্রুত তদন্ত দরকার।' রোববার দুপুরে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন করতে গিয়ে দিদারুল আলম এসব কথা বলেন।
ডিপোর মালিক বললেন 'আমার সব শেষ': অগ্নিকাণ্ডে হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে ডিপোর মালিকপক্ষ। রোববার বিকেলে ডিপোর পরিচালক মজিবুর রহমান বলেন, 'অগ্নিকাণ্ডে আমার ক্ষতি হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। আমার সব শেষ। তবে আমি আহত ও নিহতদের পরিবারের পাশে আছি।'
এ ডিপোটি চট্টগ্রামভিত্তিক প্রতিষ্ঠান স্মার্ট গ্রুপের মালিকানাধীন। মজিবুর রহমান স্মার্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিএম কনটেইনার ডিপোর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি চট্টগ্রাম জেলা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এবং দৈনিক পূর্বদেশের সম্পাদক।
ডিপোতে শতাধিক শ্রমিক ও কর্মকর্তা ছিলেন উল্লেখ করে মজিবুর বলেন, 'হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ছিল ডিপোতে। ফলে অতিরিক্ত হিটে আগুন ধরে বিস্টেম্ফারিত হয়েছে। রাসায়নিক পদার্থ ও গার্মেন্টস পণ্য থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। এ জন্য হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে।'
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: