ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান বিএনপির, রাজধানীতে আজ সকাল সন্ধ্যা হরতাল


প্রকাশিত:
২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৮:৫০

আপডেট:
২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৯:১৪

ফাইল ছবি

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: তখনও ভোটের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ঘোষণা হয়নি। শনিবার রাত আটটা। দলের একাধিক সিনিয়র নেতাকে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আসেন সংবাদ সম্মেলনে। যথারীতি নগর ভোটের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন। জানান তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ। সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে  কিছুটা তাক লাগিয়ে নগর ভোটের অনিয়মের প্রতিবাদে ঢাকা মহানগরীতে রোববার সকাল সন্ধ্যা হরতালের কর্মসূচি দেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, কারচুপি, জালিয়াতি এবং জবরদস্তি করে জনগণের রায়কে পদদলিত করা হয়েছে। দলীয় দৃষ্টিকোন থেকে নির্বাচনকে প্রভাবিত করে ফলাফল নিজেদের করে নিয়েছে। এর প্রতিবাদে হরতাল আহ্বান করছি। আশা করি ঢাকাবাসী শান্তিপূর্ণভাবে এ হরতাল পালন করবেন, তাদের অধিকার আদায়ের জন্য। ওষুধ ও খাবারের দোকান, অ্যাম্বুলেন্স ও লাশবাহী গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত থাকবে।

বিএনপির আশঙ্কা সত্য হয়েছে জানিয়ে দলের মহাসচিব বলেন, পূর্বের ন্যায় নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে তাদের মতো করে ভোট কেন্দ্র দখল করেছে। সরকার অন্তত সচেতনভাবে গণতন্ত্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাদের মূল লক্ষ্য এক দলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করা। আমরা আগেও বলেছি এখনও বলছি- আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কোনোদিন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হতে পারে না।

তিনি বলেন, উত্তর ও দক্ষিণের ফলাফলে সরকারি মদদ স্পষ্ট। আমাদের আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। এই নির্বাচনেও সরকার আগের নির্বাচনের মতোই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেছে। নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে তাদের মতো করে দখল করেছে।

ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন কখনো সুষ্ঠু হতে পারে না। নির্বাচন কমিশন অযোগ্য একটি প্রতিষ্ঠান। জবরদস্তি করে নির্বাচন করে এবং জনগণের রায়কে পদদলিত করে, দলীয়করণ করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করে ভোট লুট করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ দিকে ভোটের দিনভর বিএনপির মেয়রপ্রার্থীসহ দলের নেতারা নানা অভিযোগ করেন। প্রার্থী ও দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনেও অভিযোগের ফিরিস্তি তুলে ধরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নিজের ভোট প্রয়োগের পর নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা জানান তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন। 

ঢাকার সিটি নির্বাচন এতটুকু সুষ্ঠু হয়নি দাবি করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নানান অভিযোগ তুলেন। নিজের ভোটের পর প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যকেও নির্বাচনে হস্তক্ষেপর শামিল বলে দাবি করেন তিনি।

গতকাল আরেক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ভোটের প্রথমেই বড় রকমের বিধি লঙ্ঘন করে। প্রধানমন্ত্রী সিটি কলেজে ভোট দিতে গিয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন, তা সরাসরিভাবে নির্বাচনে হস্তক্ষেপের শামিল। প্রধানমন্ত্রী ভোট দিয়ে গণমাধ্যমে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান, যা নির্বাচন বিধির মধ্যে পড়ে না।

সিটি নির্বাচনে নানান অনিয়ম তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল বলেন, প্রিসাইডিং কর্মকর্তার ১ শতাংশ ভোট দেওয়ার ক্ষমতা থাকলেও এর চেয়ে বেশি ভোট তাঁরা দিয়েছেন। বিএনপির এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি এবং ঢুকতে পারলেও মারধর করে বের করে দেওয়া হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নীরব ছিল।

এদিকে ভোটের দিনের পরিবেশ ভোটারদের পক্ষে ছিল না বলে অভিযোগ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন,ভোটাররা যে ভোট দেবে তেমন পরিবেশ নির্বাচন কমিশন ইতোপূর্বে নেয়নি। তাদের পূর্বের অপকর্মের কারণে ভোটাররা মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। তারা বলছে, আশঙ্কার কথা; বলছে ভোট দিতে গেলে তো ভোট দিতে পারি না।

আর ভোটগ্রহণ শেষ নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ জমা দিতে দেশের সর্বোচ্চ জায়গা থেকে নির্বাচনকে প্রভাবিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, এটি দেশের একটি খারাপ উদাহারণ তৈরি করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রার্থী পাশে নিয়ে যখন ভোট চান, এরপর তো আর কিছু করার থাকে না, এরপর আর কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে না কেউ। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনই কারোই ভূমিকা রাখার আর সুযোগ থাকে না।


বিষয়: হরতাল


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top