বৃষ্টি সেলাই করি : শাহনাজ পারভীন
প্রকাশিত:
৩১ জুলাই ২০২০ ১৪:৩৯
আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ০৮:৩৪

যখন এ বাড়িতে প্রথম এসেছিলাম
তখন তার ছাউনিটা ছিল এক কাব্যিক ছুতোরের তৈরি
বৃষ্টির শব্দে গরম ভাতে ঘুম ভর্তা খেতে খেতে চোখ লেগে যেতো
তখন দখিনা জানালায় দুলতো ঝুমকো জবা
পুব জানালার বারান্দায় ঝুলতো ভেজা সালোয়ার
জ্যোৎস্নার প্লাবনে ভেসে যেতো উঠোনের গল্প ফুল
পশ্চিমে কোন জানালা ছিলো না,
ছিলো না পাখির কলকাকলী, প্রশান্ত বাতাস আর
শুভ বিকেলের স্বপ্ন মাখা সান্ধ্যকালীন পশ্চিমারাগ।
পাড়ার এলিট মুরব্বিরা বলতেন
এ গুদোমে থাকো কী করে?
আর বিড়বিড় করে বলতো 'বানরের গলায় মুক্তোর মালা!'
আমি শুনে ফেলতাম আমার পঞ্চ ইন্দ্রীয় দিয়ে
তাই আর প্রথম প্রশ্নের উত্তরের দায় থাকতো না আমার।
একসময় বেড়ি কেটে বেরিয়ে এলাম সামনের লিচু বাগানের স্বপ্নময় অলিন্দে
সে দু দশক আগের কথা
আমি ঘরের চারপাশ সাজালাম জানালার সৌন্দর্যে
দেওয়াল থাকলো না কোন
বাতাসের, আলোর, মেঘের, কল্লোলের যুদ্ধ আর প্রেম, আনন্দের ঝাড়বাতি হুড়োহুড়ি করে
মানিপ্লান্ট আর লজ্জা লতার সাথে দিন রাত
সুখ স্বপ্নের সুই সুতো আমার হাতে
ইচ্ছে মাফিক রিপু করি, সেলাই করি দুঃখ সুখের পদাবলী!
দেওয়াল বিহীন সে ঘরে স্বপ্ন সাজাই থরে থরে
দুঃখ গুলো আটকে রাখি সিন্দুকে
আর ইচ্ছের জানালা খুলে রাখি পশ্চিমের
উত্তর দক্ষিনে আমার খোলা আকাশ
তার সব আলো হাওয়া ঢুকে পড়ে যখন তখন
তাদের হট্টগোলে আমার ঘুমিয়ে থাকা সুখগুলো জেগে ওঠে
আজ তিন
দশক পর আমার উত্তরের জানালায় ঝুলে আছে হাইরাইজড বিল্ডিং
তার প্রতিটি দেওয়ালে ঝুলছে উদ্দেশ্যহীন শব্দের চরিত্র,
মুহূর্মুহু আলোকবার্তা, ডিজে ড্যান্সের ফাঁদে রাত্রির আল্পনা।
দক্ষিণের জানালায় মিশে আছে পাঁচ তারকা ভবন, সেখান থেকে অনবরত ভেসে আসছে টুংটাং বরফের জগত,
অলৌকিক আলোর কুচি, দিবাস্বপ্নের কালোতীর্ণ উপন্যাসের ফাঁদ।
আমি যতই নান রুটির সাথে ঘুম ভর্তাকে ডাকি
ওরা আমায় নির্ঘুম কফির পেয়ালা হাতে ধরায়
আমি মাঝরাতে জেগে জেগে বৃষ্টি সেলাই করি রংহীন ব্লাক কফির কাপে!
ড. শাহনাজ পারভীন
কবি, কথাসাহিত্যিক, উপাধ্যক্ষ, উপশহর মহিলা কলেজ, যশোর।
বিষয়: শাহনাজ পারভীন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: