বৈরী সময়ের পংক্তিমালা : ডাঃ তরুণ কুমার দাস
প্রকাশিত:
৩১ জুলাই ২০২০ ২২:২০
আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ০৪:২৯

১
খুব একটা ঝগড়া হল। তারপর সব চুপচাপ, শান্ত। মনের মধ্যে কী যে হয় ; বাইরে থেকে কিছুই বোঝা যায় না। উঠোনে ঝরাপাতার জ্বালা একটা খাদে এসে জমে। গাছ কেবল পাতা ঝরিয়ে যায় ; তারপর তার নতুন জন্মের গর্ভযাতনা। মানুষই কেবল ঝরাপাতার শোক বইতে পারে না। আবার নতুন পাতাও তার চাই। ক্রমশ বেড়ে চলেছে মৃত্যুর দাবি। অদৃশ্য ঘাতক তার তূণে সাজিয়ে যাচ্ছে মারণ তীর।
অদৃশ্য ঘাতকের জন্য একাঘ্নি লুকনো আছে কোথাও --- খুঁজে পেতে হবে। খুঁজতে গিয়ে পাতার গাদায় পাওয়া গেল হীরের আংটি। সেই কবে হারিয়ে ফেলেছিল মা। পৃথিবীও কতটা নিষ্ঠুর। আঘাতে আঘাতে মায়ের বুকেও চিড় ধরে, বেদনার গরম লাভা পুড়িয়ে দেয় বিশ্ব। আমি দেখলাম, সেই চিড়ের নকশায় বিদ্যুৎ-বহ্নি খেলছে --- পোড়াবে। মানুষই নিজের ঘাতক যখন, বিপুল সর্বনাশ।
২
ভুত কালে সযত্নে সাজিয়ে রাখা মমি। বিপুল ঐশ্বর্য। সামনে পিছনে ঘাতক। তীরের ফলায়, তলোয়ারের তীক্ষ্ণতায় মৃত্যু। তবু ত স্বজন ছুঁয়েছে তার হিম শরীর। পরম যত্ন বয়েছে শেষ যাত্রা। সমাধিফলকে নশ্বর লিপিমালা ধরে আছে মহাকাল।
ভবিষ্যতের পথের বাঁকে আঁকা আছে শায়েরী, ছবির ক্যানভাসে --- সে ভাষা দুর্বোধ্য তবে অর্থহীন নয়। বোধের ফাটল গলে তবু কিছু আশার আলো এসে পড়ে ; বাঁচার জন্য খুব কম কিছু নয়।
বর্তমান গুলিয়ে যায় গলিত লাশের তেলজলে। এখন করোনাকাল। তোমার বাণীর ঘেরাটোপ ঝুলিয়ে রাখে সবকিছু। পলিথিন ব্যাগে সারি সারি মরদেহ। অদৃশ্য ঘাতকের নিপুণ নিশানা। অনস্পর্শ এই দেহ অজ্ঞাতবাসে চলে যাবে। দুর্মূল্য অশ্রু ছোঁবে না তাকে আর।
তুমিই কেবল ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাচ্ছ তোমার গন্তব্যে। তোমাকেও ছোঁয়া যাবে না সহজে। কেবল শৈল্পিক বাচিকতার দুর্ভেদ্য পর্দার এপাশে দাঁড়িয়ে থাকব আমরা, অসহায় আক্রোশে।
ডাঃ তরুণ কুমার দাস
বারাসাত, কলকাতা
বিষয়: ডাঃ তরুণ কুমার দাস
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: