সাহরী গ্রহণ একটি ফজিলত ও বরকতপূর্ণ ইবাদাত : আনোয়ার আল ফারুক


প্রকাশিত:
২৮ এপ্রিল ২০২১ ২১:০৩

আপডেট:
১৬ মার্চ ২০২৫ ১০:২৭

 

মহান আল্লাহ বলেন ‘রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা হ’তে তোমাদের নিষেধ করেন তা হ’তে বিরত থাকো’ (হাশর৭) ইসলামী শরিয়াতের বিধানানুযায়ী শরিয়াত নির্দেশিত সকল কাজ স্বতস্ফুর্তভাবে গ্রহণ করা যেমন ইবাদত ঠিক তেমনি নিষেধ কাজগুলো আন্তরিকতার সাথে বর্জন করাও ইবাদত। মুমিনের চলা ফেরা ওঠা বসা খাওয়া ঘুম সবই ইবাদত হিসেবেই গণ্য হবে যদি সেটা শরিয়াত নির্ধারিত পন্থা ও যথাযথ নিয়মের অধিনে হয়। সিয়ামের উদ্দেশ্যে সাহরী গ্রহণ করা একটি ফজিলত ও বরকতপূর্ণ ইবাদত।সাহরী গ্রহণে ইসলামী শরিয়াত উদ্ধুদ্ধ করেছেন।


সাহরীর পরিচয়ঃ

সিয়াম পালনের উদ্দেশ্যে ভোর রাতে ওঠে (সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত) যে খাবার গ্রহণ করা হয় তাকে ইসলামী শরিয়াতের পরিভাষায় সাহরী বলে।বিশিষ্ট মুজতাহিদ মোল্লা আলী কারী (র.) বলেন, ‘অর্ধরাত্রি হতে সাহ্‌রির সময় শুরু হয়।’ (মিরকাত, মিশকাত)। ইমাম যামাখ্শারী (র.) ও ফকিহ আবুল লাঈস ছমরকন্দী (রহ.) বলেন, সাহরির সময় হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। সাহ্‌রি বিলম্বে খাওয়া সুন্নাত। তবে সন্দেহের সময় পর্যন্ত বিলম্ব করা যাবে না, তার আগেই সাহ্‌রির নিরাপদ সময়সীমার মধ্যে পানাহার শেষ করতে হবে।

সাহরীর গুরুত্ব ও ফজিলতঃ

একজন মুমিন শেষ রাতের আরামের শয্যা ত্যাগ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সিয়াম পালনের প্রস্তুতি স্বরূপ সাহরী গ্রহণ করবে আর এই সাহরী গ্রহণে রয়েছে বিশাল ফজিলত ও বরকত। এই সময়ে ঘুম থেকে ওঠার মাধ্যমে ব্যক্তির মাঝে তাহাজ্জুদ সালাত আদায়ের মানসিকতায়ও সৃষ্টি হয় তাহাজ্জুদের মাধ্যমে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নৈকট্য হাসিল করা যায়। এই সময়ের ইবাদত আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় ও গ্রহণযোগ্য। এই দিক থেকে সাহরী গ্রহণ করা যেমন ফজিলতপূর্ণ তেমনি বান্দাহ আল্লাহর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নেও কার্যকর ভুমিকা রাখে। নিন্মে সাহরীর ফজিলত ও গুরুত্ব আলোচনা করা হল-


. সাহরী বরকতপূর্ণ ইবাদতঃ

সাহরী গ্রহণ করা একটি বরকতপুর্ণ ইবাদত।সাহরী গ্রহণের মাধ্যমে মুমিন আল্লাহর অফুরন্ত নৈকট্য হাসিলের সুযোগ পায়। এই প্রসঙ্গে  হযরত আনাস (রা.) এর বর্ণনায় রাসুল (সা.) বলেছেন, তিনটি জিনিসে বরকত রয়েছে। জামাআতে, সারিদ এবং সাহরিতে। (তাবারানী শরীফ)। রাসুল (সা.) সাহরী গ্রহণে আদেশ করেছেন। হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা সাহরি খাও, কারণ সাহরিতে বরকত রয়েছে। (বুখারী, মুসলিম) সাহরীতে বরকত এবং ফজিলত রয়েছে। আর তাই রাসুল (সা.) কখনো সাহরী থেকে বিরত থাকতেন না।
সাহাবায়ে কেরামকেও সাহরীর ব্যাপারে তাগিদ দিতেন এবং নিজের সঙ্গে শরিক করতেন।রাসুল (সা.) এর কাছে একজন সাহাবী এলেন যখন তিনি সাহরী খাচ্ছিলেন।
রাসুল (সা.) তাকে দেখে বললেন, এ খাবার বরকতের। আল্লাহ পাক বিশেষভাবে তোমাদের তা দান করেছেন। কাজেই তোমরা সাহরী খাওয়া ছেড়ে দিও না। (নাসাঈ)
অন্য এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে-আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সাহরী খাও। কেননা সাহরীতে বরকত রয়েছে। (সহিহ বুখারী ১৯২৩)

. সাহরী মুমিন এবং আহলে কিতাবের মধ্যে পার্থক্যকারী ইবাদতঃ


আহলে কিতাব তথায় ইহুদী খৃষ্টানরাও সিয়াম পালন করে তবে সেই সিয়াম আমাদের মত নয়। তারা সাহরী গ্রহণ ব্যতিত সিয়াম পালন করে থাকে।আমাদের ইবাদত যেন তাদের অনুরূপ না হয় তাই সাহরী গ্রহণে অত্যধিক তাগিদ দেয়া হয়েছে।হযরত আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, আমাদের এ সিয়াম ও আহলে কিতাবদের (ইহুদী ও খৃষ্টান) সিয়ামের মধ্যে পার্থক্য হল সাহরি খাওয়া। (সহিহ মুসলিম ২৪৪০)

. সাহরীর সময়ের দোয়া কবুল হয়ঃ


যে কয়টি সময়ের দোয়া আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য তার একটি হচ্ছে সাহরীর সময়ের দোয়া। বান্দার আবেদন নিবেদন এই সময় আল্লাহ পছন্দ করেন এবং কবুল করে নেন। তাই আমাদের উচিত সাহরীর সময় একটু আগে ওঠে তাহাজ্জুদ ও জিকির আসকার করা এবং কায়মনোবাক্যে মহান আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের সিয়ামের সকল বরকতদান করুক আর আমাদের যাবতীয় গুনারাশি ক্ষমা করে তাঁর মাহবুব বান্দাহদের কাতারে শামিল করুক, আমীন।

 

আনোয়ার আল ফারুক
কবি ও প্রাবন্ধিক



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top