অর্থাভাবে থমকে আছে ফারদিনের ‘ফারবোট’ বানানোর স্বপ্ন


প্রকাশিত:
১৬ আগস্ট ২০১৮ ১২:১৩

আপডেট:
১৩ মার্চ ২০২৫ ১৪:০১

অর্থাভাবে থমকে আছে ফারদিনের ‘ফারবোট’ বানানোর স্বপ্ন

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজেক্টের জন্য তৈরি করা হয়েছিল ‘ফারবোট’ নামের একটি রোবট। হিউমানয়েড বা প্রায় মানুষের মতো একটি রোবট তৈরির লক্ষ্য নিয়ে প্রথমে বানানো হয় এই প্রোটোটাইপটি। মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে দেওয়া ভয়েস কমান্ড শুনে কাজ করতে পারে রোবটটি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো অর্থ সাহায্য না পাওয়ায় থমকে আছে রোবটটির অগ্রগতির কাজ। সেই সঙ্গে থমকে গেছে উদ্ভাবক এ এস ফারদিন আহমেদের স্বপ্নও।



সম্প্রতি ফারদিন তার ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট করেন। অর্থাভাবে রোবট তৈরির কাজ থমকে থাকায় অনেকটা আবেগী হয়েই ফারদিন পোস্টে বলেন যে, রোবোটিক্সে কাজ করা ছেড়ে দেবেন তিনি। এরপরই বিষয়টি নিয়ে বিষদ তথ্য সংগ্রহে মাঠে নামে ইটিভি অনলাইন।



রাজধানীর ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) থেকে  স্নাতক সম্পন্ন করেছেন ফারদিন আহমেদ। শেষ বর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজেক্টের জন্য একটি রোবটিক হাত তৈরি করতে গিয়ে বানিয়ে ফেলেন গোটা একটি রোবট। অ্যান্ড্রয়েড ভিত্তিক স্মার্টফোন এর অ্যাপ দিয়ে ভয়েস কমান্ড দেওয়া যাবে রোবটটিকে। রোবটটির ডিজাইন ও প্রোগ্রামিং করেন ফারদিন আহমেদ নিজেই।



রোবটটির বিষয়ে বিস্তারিত বলেন ফারদিন আহমেদ। তিনি বলেন, প্রথমে আমার উদ্দেশ্য ছিলো যে, একটি রোবটিক হাত বানানোর। পরে পরিকল্পনা করলাম পুরো রোবটটি বানানোর। একটি হিউম্যানয়েড রোবট যা কার্যত মানুষের মতোই হবে। শুরুতে আমার সঙ্গে একজনের কাজ করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আমাকে একাই কাজ করতে হয়েছে।



রোবটটির পারদর্শীতা সম্পর্কে ফারদিন বলেন, এখন পর্যন্ত আমি যে কাজ করতে পেরেছি সেই হিসেবে ফারবোট ভয়েস কমান্ড শুনে কাজ করতে সক্ষম। মোবাইল অ্যাপস থেকে একটি ভয়েস কমান্ড দেওয়া হলে সেটি ইন্টারনেটের সাহায্যে গুগল ট্রান্সলেটরে অনুবাদ হয়। অনুবাদ হওয়া কমান্ড একটি ডাটা আকারে মোবাইলে আসে। সেটি ব্লু-টুথের সঙ্গে সংযুক্ত ফারবোটে গেলে, ফারবোট তা যাচাই বাছাই করে কমান্ড অনুযায়ী কাজ করে।



 



ফারদিন বলেন, ফারবোটের আরেকটি দারুণ ফিচার আছে। সেটি হচ্ছে, এটি এমন এক রোবট যা সাধারণ গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম। এছাড়া কিছু ডিফারেনশিয়েট সমস্যারও সমাধান করতে সক্ষম আমার ফারবোট। আর নড়াচড়া তো আছেই। ভয়েস কমান্ড দিলে এটি কোনো কিছু মুষ্ঠিবদ্ধ করতে পারে, কোনো ব্যক্তিকে অনুসরণ করে চলাফেরা করতে পারে। এমনকি ভয়েস কমান্ড দিলে নিজে নিজেকে বন্ধও করে দিতে পারে ফারবোট।



রোবটটির আশপাশে কোনো নাড়াচড়া হলে ফারবোট সেই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দিতেও সক্ষম বলে জানান এর উদ্ভাবক ফারদিন। তবে এর জন্য কোনো ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়নি। ফারদিন জানান, ক্যামেরা ছাড়াই আশপাশে নড়াচড়া শনাক্ত করে সেই অনুযায়ী দিক পরিবর্তন করে প্রতিক্রিয়া দিতে পারে রোবটটি।



ফারদিন জানান, সম্পূর্ণ নিজের অর্থায়নে এখন পর্যন্ত ডেভেলপ করেছেন রোবটটিকে। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। যার পুরোটাই যোগান দিয়েছেন নিজেই। তবে অর্থাভাবে থমকে আছে প্রজেক্টের ডেভেলপমেন্ট। এরইমধ্যে একটি প্রদর্শনীতে ফারবোটকে নিয়ে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনায় কিছু ত্রুটি হয় রোবটটির। সেগুলো সারিয়ে ওঠার খরচও আর যোগান দিতে পারছেন না ফারদিন।



ফারদিনের দাবি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিত ‘রিবো’ রোবট অনুদান পাওয়ার আগ পর্যন্ত ফারবোটের পারফরমেন্স ছিলো রিবো’র থেকেও ভালো। ‘রিবো’র থেকেও আমার ফারবোট একদিক থেকে এগিয়ে আছে। ফারবোট কিন্তু সাধারণ গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারে। কিছু ফর্মুলা বা লজিক আমি এটিতে দিয়েছি। আরও কাজের জন্য টাকা দরকার যা পাচ্ছি না’-যোগ করেন ফারদিন।



কথা বলে জানা গেছে, রোবটটির উন্নয়নের জন্য তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগে আবেদন করেছিলেন ফারদিন। ফারবোটসহ দিয়েছিলেন ভাইভাও। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উদ্ভাবনী প্রকল্পে অনুদান পাওয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের সর্বশেষ তালিকায়ও ছিলো না ফারদিন বা ফারবোটের নাম। তবে ফারদিন বলেন, সম্প্রতি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এই প্রজেক্টে সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা করবেন বলে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।





অনুদান পেলে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তাসহ ফারবোটের আরও উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ দেখছেন ফারদিন আহমেদ। তিনি ইতোমধ্যে হিউম্যানয়েড রোবট ছাড়াও দুইটি অ্যানিমেল রোবট নিয়ে কাজ করছিলেন। ফারমেল-১ এবং ফারমেল-২ নামে প্রাণীর আদলে ছিলো ওই দু’টি রোবট। তবে অর্থাভাবে সেগুলোর কাজও মাঝপথেই বন্ধ রাখতে হয়েছে ফারদিনকে।



এতকিছুর মাঝেও ফারদিন এবার স্বপ্ন দেখছেন ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা পেলে ‘সোফিয়া’র মতো বিশ্বমানের রোবট বাংলাদেশেই তৈরি করার। স্বপ্ন দেখেন ফারবোটকে ‘অ্যাডভান্স লেভেল’-এ নিয়ে যাওয়ার। সরকারি-বেসরকারি অনুদান পেলে দেশের স্কুল-কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝেও ছড়িয়ে দিতে চান রোবটিক্সকে। লক্ষ্য আছে, দেশে প্রথমবারের মতো রোবোটিক্স ল্যাব প্রতিষ্ঠা করার।     



এ বিষয়ে তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, ফারদিনকে আমরা জাপান বাংলাদেশ ইনোভেশন ডিজাইন এন্ট্রাপ্রেনারশিপ একাডেমি থেকে একটি বরাদ্দ দিচ্ছি। প্রাথমিকভাবে ১০লাখ টাকা অনুদান দিচ্ছি আমরা। ভবিষ্যতেও এই প্রজেক্টের উন্নয়নে যা যা করা লাগে সব করব আমরা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এই ইনোভেশন প্রোগ্রাম উদ্বোধন করেন। ফারদিন সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ছেলেটা খুবই ভালো কাজ করতে। আইসিটি ডিভিশন তার পাশে আছে।



ভিডিও এই লিংকেঃ



https://www.facebook.com/Ekushey24online/videos/2056441398002996/?t=76


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top