সিডনী শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন ১৪৩১

কেন মানুষ ভুয়া খবর ছড়ায়?


প্রকাশিত:
১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৫:৪৩

আপডেট:
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৩০

কেন মানুষ ভুয়া খবর ছড়ায়?

ফেক নিউজ, বাংলায় এর প্রতিশব্দ ভুয়া বা বানোয়াট খবর। ভুয়া খবরের ছড়াছড়ি পৃথিবীজুড়ে এক মহাবিপত্তির সৃষ্টি করেছে। এই যুগে ভুয়া খবর ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে একটি ‘বিকল্প সত্য’ সৃষ্টি হয়, যা দিয়ে সহজেই অপপ্রচারমূলক কর্মকাণ্ড চালানো যায়।বর্তমানের সত্যোত্তর যুগে আমরা যেটা দেখছি, তা আরও ভয়ানক। 



কারণ, এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে বহুমুখী যোগাযোগমাধ্যম বহুগুণে বেড়েছে। উন্মুক্তভাবে যাচাই-বাছাই ছাড়াই ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে। 



বস্তুত, প্রকৃত খবরের চেয়ে ভুয়া খবর বেশি ছড়ানো হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা থাকায় ভুয়া খবর ছড়ানো আরও সহজতর হয়েছে।



মানুষ কেন ভুয়া খবর ছড়ায়। তা নিয়ে একটি জরিপ চালিয়েছে বিবিসি। জরিপটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:



বিবিসির এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতে জাতীয়তাবাদের উত্থানের কারণে সাধারণ লোকজন ফেক নিউজ বা ভুয়া খবর ছড়িয়ে দিচ্ছে।



গবেষণা বলছে, অনেক ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদ চাঙ্গা করতে পারে এরকম আবেগকে প্রকৃত খবরের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।



সোশাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভুয়া খবর ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে বামপন্থিদের চেয়ে ডানপন্থি নেটওয়ার্কগুলো অনেক বেশি সংগঠিত।



এমনও দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমর্থনে সোশাল মিডিয়াতে যেসব নেটওয়ার্ক কাজ করছে তারা যেসব ভুয়া খবর প্রচার করছে, সেই একই খবর প্রচার করছে ফেইক নিউজের অন্যান্য উৎসগুলোও।



ভারত, কেনিয়া এবং নাইজেরিয়াতে ভুয়া খবরের ওপর বড় ধরনের গবেষণা চালিয়ে এসব জানা গেছে।



এই গবেষণায় যারা অংশ নিয়েছেন, তারা এক সপ্তাহ ধরে তাদের ফোন বিবিসিকে দেখতে দিয়েছেন। তারা কী ধরনের খবর শেয়ার করছেন, কাদের সাথে শেয়ার করছেন এবং কতোবার শেয়ার করছেন বিবিসির গবেষকরা সেসব পর্যালোচনা করে দেখেছেন।



এই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল বিকৃত তথ্য এবং ভুয়া খবর সারা বিশ্বে মানুষের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলছে সেটা অনুসন্ধান করে দেখা।



এই তিনটি দেশেই দেখা গেছে, মূলধারার সংবাদ মাধ্যমের ওপর জনগণের অনাস্থার কারণে তারা বিকল্প জায়গা থেকে তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।



এসব তথ্য যাচাই বাছাই করার কথা তারা ভেবেও দেখেনি। তার আগেই তারা এসব খবর শেয়ার করেছে।



তারা মনে করেছে, এই খবরটি যতো বেশি ছড়িয়ে দেওয়া যাবে ততোই হয়তো তার ভেতর থেকে প্রকৃত খবরটি বেরিয়ে আসতে পারে।



পাশাপাশি এসব মানুষের মধ্যে এই আত্মবিশ্বাস খুব তীব্র যে কোনটা আসল খবর আর কোনটা ভুয়া খবর সেটা তারা চিহ্নিত করতে পারে।



২০১৮ সালে যেভাবে ডিজিটাল তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে তাতে এই সমস্যার আরো অবনতি হয়েছে।



বিবিসির গবেষণায় যারা অংশ নিয়েছেন, দেখা গেছে, কোনটা আসল খবর আর কোনটা ভুয়া খবর সেসব যাচাই করার ব্যাপারে তারা খুব কমই সচেষ্ট ছিলেন। এসব ভুয়া খবরের উৎস কী- সে বিষয়েও তাদের তেমন একটা মাথাব্যথা ছিল না।



বরং খবরটি কতোখানি সঠিক সেটা যাচাই করতে গিয়ে তারা অন্য কিছু বিবেচনা করেন।



এসবের মধ্যে রয়েছে ফেসবুকের কোন একটি পোস্টে কত মন্তব্য পড়েছে, কী ধরনের ছবি পোস্ট করা হয়েছে অথবা কে এই খবরটি দিয়েছে ইত্যাদি।



তারা মনে করেন, নিজেদের পরিবারের সদস্য, আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধবরা হোয়াটসঅ্যাপে যেসব খবর শেয়ার করছেন, সেগুলো যাচাই না করেই সরাসরি বিশ্বাস করার মতো।



হোয়াটসঅ্যাপে এরকম ভুয়া গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর ভারতে সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। ছেলেধরার ভুয়া ভিডিও তারা তাদের আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করেছে এগুলো যাচাই না করেই।



তারা মনে করেছেন, পরিবার ও সমাজকে রক্ষা করার জন্যে এসব খবর শেয়ার করা তার দায়িত্ব ছিল।



বিবিসির অন্য একটি জরিপে দেখা গেছে, সোশাল মিডিয়া ও বার্তা আদান প্রদানের অ্যাপগুলো থেকে গুজব ছড়িয়ে পড়ার কারণে গত বছর অন্তত ৩২ জন নিহত হয়েছে।



কিন্তু আফ্রিকায় চালানো গবেষণায় দেখা গেছে, সেখানে ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ার পেছনে জাতীয়তার পরিচয় অতোটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।



কেনিয়াতে দেখা গেছে, এর পেছনে বড় কারণ ছিল অর্থ কিম্বা প্রযুক্তি। সেখানে হোয়াটসঅ্যাপে যতো খবর শেয়ার করা হয়েছে তার এক তৃতীয়াংশ ছিল এসংক্রান্ত খবর।



কিন্তু নাইজেরিয়াতে সেনাবাহিনী এবং সন্ত্রাস সম্পর্কিত খবরাখবর প্রচুর পরিমাণে শেয়ার করা হয়েছে। এই দুটো দেশেই বেশি শেয়ার হয়েছে স্বাস্থ্য সম্পর্কে আতঙ্কিত হওয়ার ভুয়া খবর।



গবেষকরা এই তিনটি দেশে চালানো জরিপে অংশগ্রহণকারী ৮০ জন ব্যক্তির সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটিয়েছেন। সোশাল মিডিয়াতে তারা কীভাবে খবর শেয়ার করেন, এই খবরগুলোকে কতোটা গুরুত্বের সাথে নেন- এসব বিষয়ে তাদের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।



ভারতে টুইটারে ও ফেসবুকে যেসব ভুয়া খবর ছড়িয়েছে, সেগুলোর পেছনে রাজনৈতিক কোন উদ্দেশ্য ছিল কিনা সেটাও বিশ্লেষণ করে দেখেছেন গবেষকরা।



এজন্যে ভারতে ১৬ হাজার টুইটার এবং ৩ হাজার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করে দেখা হয়েছে।



দেখা গেছে, সেখানে উগ্র-ডানপন্থি খবরাখবর অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top