সিডনী মঙ্গলবার, ১৬ই এপ্রিল ২০২৪, ৩রা বৈশাখ ১৪৩১


আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে বিনম্রতা


প্রকাশিত:
১৭ জুলাই ২০২০ ২১:১০

আপডেট:
১৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:০৫

 

প্রভাত ফেরী: বিনয় ও বিনম্রতার অর্থ হচ্ছে নিজেকে অন্যের চাইতে তুচ্ছ মনে করা। নিজেকে অন্যের চেয়ে ছোট বলাটা মূলত বিনয় নয়। যেমন বর্তমানে অনেকেই নিজেকে ‘নিচ’ ‘ক্ষুদ্র’ ‘পাপী’ ‘অধম’ বলে থাকেন, আর এতেই মনে করেন যে, বিনয়ের প্রকাশ হয়ে গেছে। অথচ মুখে বলাটা মূলত বিনয় নয়, বরং নিজেকে তুচ্ছ মনে করা হলো বিনয়। আমি যদি কোনো কাজ করে থাকি, তাহলে সেটা তো একান্তই আল্লাহর দয়া ও তারই তাওফিক মাত্র।

এখানে আমার কোনো ক্ষমতা নেই। এটা আমার কোনো যোগ্যতার বহিঃপ্রকাশ নয়। অন্তরের এই অনুভূতিকে বিনয় বলা হয়। যখন কারও অন্তরে এমন অনুভূতি জাগে এবং তার ব্যবহারে এমনটাই প্রকাশ পায়, তবে সে বিনয়ী। যে ব্যক্তি এই মহান গুণ আয়ত্ব করতে পেরেছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করেন। রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার জন্য বিনয় অবলম্বন করে আল্লাহতায়ালা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৫২)।

এ হাদিস থেকে বুঝে আসে, ইসলামে বিনয়ের গুরুত্ব অনেক। যদি কারও অন্তরে বিনয়ের গুণ না থাকে তবে তার অন্তরে অহংকার জন্ম নেয়। অন্তরে আপন বড়ত্ব অনুভূত হতে থাকে। আর অন্তরে জন্ম নেওয়া সেই অহংকার ধীরে ধীরে তার দ্বারা প্রকাশ পেতে থাকে। অথচ অহংকার অনেক মারাত্মক গোনাহ। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন কোরআনুল কারিমে এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা কোনো উদ্ধৃত, অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৮)। আয়াতে কারিমা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম অহংকার কত জঘন্যতম কাজ। আর এ জঘন্যতম কাজ মানুষের থেকে তখনই প্রকাশ পায় যখন তার মাঝে বিনয়ের গুণ না থাকে।

রাসুলে আকরাম (সা.)-এর বিনয় সম্পর্কে হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘যখন কোনো ব্যক্তি নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় মুসাফাহা করতেন, তখন তিনি নিজের হাত ওই সময় পর্যন্ত সরিয়ে নিতেন না, যতক্ষণ ওই ব্যক্তি টেনে না নিতেন। অনুরূপ আগন্তুক নিজের চেহারা ফিরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত রাসুল (সা.) নিজের চেহারা ফিরিয়ে নিতেন না। যখন তিনি বসতেন, তখন নিজের হাঁটুও অন্যদের চেয়ে আগে করতেন না।’ (শোয়াবুল ঈমান, হাদিস : ৮১৩২)।

অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.)-কে কখনও হেলান দিয়ে খানা খেতে কেউ দেখেনি কিংবা কখনও তার পেছনে পেছনে মানুষকে চলতে দেখা যায়নি।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩২৭৮)। এসব হাদিস থেকে রাসুল (সা.)-এর উঠা বসা ও চলাফেরার ক্ষেত্রে বিনয় প্রকাশ পায়। রাসুল (সা.) প্রত্যেক ওই পদ্ধতি পছন্দ করতেন, যাতে দাসত্ব আছে, বন্দেগি আছে, বিনয় ও বিনম্রতা আছে।

হাদিসে এসেছে, যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘আপনি যদি চান তাহলে আপনার জন্য এই উহুদ পাহাড়কে স্বর্ণে পরিণত করে দেওয়া হবে, যেন আপনার জীবনযাপনের এ কষ্ট দূরীভূত হয়ে যায়। তখন রাসূল (সা.) বললেন না। আমার পছন্দ হলো, এক দিন খাব এবং এক দিন ক্ষুধার্ত থাকব। যে দিন খাব আপনার শুকরিয়া আদায় করব আর যে দিন ক্ষুধার্ত থাকব সেদিন ধৈর্য ধারণ করব এবং আপনার কাছে চেয়ে খাব।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২২৭০)। আমরা স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারলাম বিনয় ও বিনম্রতা রাসুলে আকরাম (সা.)-এর অন্যতম গুণ। সুতরাং আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে বিনয় অবলম্বন করে উভয় জাহানের সফলতা হাসিল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top