সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১


রমজানের সৌন্দর্য ও শিক্ষা ছড়িয়ে পড়ুক সবার মাঝে : মো: শামসুল আলম


প্রকাশিত:
১৭ এপ্রিল ২০২৩ ২১:৫৭

আপডেট:
১৭ এপ্রিল ২০২৩ ২১:৫৮

 

রমজানের আগমনে মুমিনের হৃদয় যেমন আনন্দের বন্যা বয়ে যায়; তদ্রূপ রমজান বিদায়লগ্নেও মুমিনদেরকে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে যায়! তাই সবাই বাঁধভাঙা চোখের পানি দিয়ে তাকে বিদায় জানায়! ‘আল বিদা ইয়া মাহে রমাদান আল বিদা’ বিদায় হে মাহে রমজান বিদায় তোমায়।
রমজান শেষ হওয়ার সাথে সাথে একজন প্রকৃত রোজাদার নিষ্পাপ শিশুর মতো নতুন এক জীবন লাভ করেন। রমজানে ধৈর্যধারণের কষ্ট অপরের কষ্টকে উপলব্ধি করতে শেখায়, একইসঙ্গে অসহায়কে সহযোগিতা করার মনোভাব তৈরি করে। দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার মাধ্যমে যে আত্মশুদ্ধি অর্জিত হয়, এর প্রভাবে মুমিন জীবনে আচার-আচরণ ও চাল-চলনে সৌন্দর্য ফিরে আসে, নিয়ন্ত্রণবোধ জাগ্রত হায় রূঢ় ব্যবহার ও বেহায়াপনার ওপর। বস্তুত এসবই রোজার মাহাত্ম্য এবং ইসলামের বিশেষ সৌন্দর্যের প্রভাব।
আমাদের মাঝে রমজান আসে তাকওয়ার উৎকর্ষে মুমিনকে পূর্ণতা দিতে। মাসব্যাপী রোজা, তারাবি, ইফতার, সাহরি, তাহাজ্জুদ, তিলাওয়াত ও ইতিকাফের মাধ্যমে আমরা যে সংযম, লোভ সংবরণ ও আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকি তা বাকি ১১ মাস কাজে লাগাতে হবে। যেমন রমজানে আমরা রোজা অবস্থায় হালাল খাবারও গ্রহণ করিনি, অনুরূপ রমজানের বাইরে আমরা হারাম খাদ্য, হারাম সম্পদ, হারাম উপার্জন পরিহার করব; অবৈধ সম্ভোগ থেকে বিরত থাকব। সব ধরনের অন্যায় অপরাধ ও হারাম কাজ থেকে দূরে থাকব; বেশি বেশি নেক আমল করার চেষ্টা করব; তবেই আমাদের রমজানের প্রশিক্ষণ যথার্থ ও সফল হয়েছে বলে মনে করা যাবে।
মুমিন মুসলমান রমজানের যে শিক্ষাগুলো ধারণ করে জীবনকে আলোকিত করবেন, সেরকম কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নিচে আলোকপাত করা হলো—
উত্তম ব্যবহারঃ রমজান মাস সংযমের মাস, এমাসে মুমিনের চারিত্রিক গুনাবলির বিকাশ ঘটে। মানুষের কথা-কাজ ও ব্যবহারে সৌন্দর্যতা ফুটে উঠে, আর এই সৌন্দর্যতা সারা জীবন ধরে রাখতে হবে। মানুষ তার উত্তম ব্যবহার ও চরিত্র দ্বারা পরিবারসহ সমাজকে অলোকিত করে থাকে।
চারিত্রিক সৌন্দর্য দ্বারা মানুষের ভালোবাসা ও সম্মান হাসিল করা যায়। গোমরামুখী হওয়া কোনো তাকওয়ার পরিচয় বহন করে না। ব্যক্তিগত জীবনে দেখা যায় অনেক সৎ চরিত্রের অধিকারীদের চরিত্রে কোমলতা কম থাকে, মেজাজ থাকে কিছুটা কর্কশ। মুমিনের এমন চরিত্র হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। কিয়ামতের দিন এমন লোককেও আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে- যার আমলনামার মধ্যে নামাজ, রোজা, জাকাত প্রভৃতি নেক আমল থাকবে। কিন্তু বিভিন্ন ব্যক্তি তার মন্দ আচরণের জন্য আল্লাহর কাছে নালিশ করবে। তাই মিষ্টি হাসি, মধুর আচরণ ও কোমল চিত্তের অধিকারী হওয়া পরিবার প্রধান ও সমাজ সংস্কারকদের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন এমন সব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
মধুর চরিত্রের অধিকারী ও মিষ্টভাষীদের জন্য জান্নাতের সুখবর রয়েছে পবিত্র হাদিসে। এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে কথাটি প্রকৃতই মিথ্যা এবং অসঙ্গত, যে ব্যক্তি তা বলা এবং আলোচনা করা পরিত্যাগ করে- তার জন্য জান্নাতের কিনারায় স্থাপনা নির্মিত হয়। যে ব্যক্তি সঙ্গত কারণ থাকা সত্ত্বেও ঝগড়া-বিবাদ পরিত্যাগ করে, তার জন্য জান্নাতের মধ্যে বাসস্থান নির্মিত হয়। যে ব্যক্তি বাক সংযম, মিষ্টভাষণ এবং সত্য কথা প্রভৃতি গুণ দ্বারা নিজের চরিত্র সৌন্দর্যমন্ডিত করে, তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে বাসস্থান নির্মিত হয়।’ –মিশকাত
দান-খয়রাতঃ রমজান মাসে মুমিন- মুসলমানদের মধ্যে ছোট ছোট দান-খয়রাতের অভ্যাস গড়ে উঠে। এই অভ্যাস যদি আমরা সারা জীবন ধরে রাখতে পারি তাহলে ইনশাআল্লাহ আমরা কামিয়াবি অর্জন করতে সক্কম হব। “দান-ছাদকা গুনাহ মিটিয়ে ফেলে যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে ফেলে।” (সহীহুল জামে/৫১৩৬)
ধন-সম্পদের প্রকৃত মালিক আল্লাহ তা’আলা। অধিকাংশ মানুষ দান-খয়রাত করতে চায় না। মনে করে এতে সম্পদ কমে যাবে। তাই সম্পদ সঞ্চিত করে রাখতেই সর্বদা সচেষ্ট থাকে, এমনকি নিজের প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রেও খরচ করতে কৃপণতা করে।
রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেন-
“মানুষ বলে আমার সম্পদ আমার সম্পদ অথচ তিনটি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সম্পদই শুধু তার। যা খেয়ে শেষ করেছে, যা পরিধান করে নষ্ট করেছে এবং যা দান করে জমা করেছে- তাই শুধু তার। আর অবশিষ্ট সম্পদ সে ছেড়ে যাবে, মানুষ তা নিয়ে যাবে।” (মুসলিম)
সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে একজন রোজাদার আরো যেসব উন্নত গুনাবলি গড়ে তোলার সুযোগ লাভ করেন। যেমন-একই সময় সাহরি গ্রহণ, একই সময় ইফতার করা, একসঙ্গে ঈদ আনন্দ করা, একে অন্যকে সাহায্য-সহযোগিতা করা, প্রচণ্ড পেটের ক্ষুধা ও জৈবিক চাহিদা পূরণের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও একমাত্র আল্লাহর ভয়ে এগুলো থেকে বিরত থাকা, মিথ্যা কথা না বলা, সুদ না খাওয়া, ঘুষ না নেয়া ও না দেয়া, মদ-জুয়াবাজি না করা, হত্যা-রাহাজানি না করা, যেনা-ব্যাভিচার না করা। সেই রোজাদার রোজার পরও যদি এ ভাল কাজগুলা ধরে রাখতে পারেন, তবে ইনশাআল্লাহ শান্তির জান্নাত হবে আমাদের এই জনপদ।
অতএব, আসুন রমজানের এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমাদের বাকি জীবনকে পরিচালিত করি সত্য ও সুন্দরের পথে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন। আমিন।

 

মোঃ শামছুল আলম
লেখক ও গবেষক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top