৯৫ রানের হার দিয়ে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি শেষ করল বাংলাদেশ
প্রকাশিত:
২৯ মে ২০১৯ ১৮:২২
আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ০৪:২৯

বিশ্বকাপের মূল লড়াইয়ের আগে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে নিজেদের ঝালিয়ে নেয়ার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে টাইগারদের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচটি বৃষ্টিতে পণ্ড হয়ে যায়। ভারতের বিপক্ষে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচটি ভরসা ছিল মাশরাফিদের। তবে সেটি সুখকর হয়নি। মুশফিকুর রহিমের অসাধারন ব্যাটিং সত্বেও বিরাট কোহিদের কাছে বড় ব্যবধানে হেরে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি শেষ করেছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।
ভারতের দেয়া ৩৬০ রানের পাহাড় টপকাতে নেমে ইনিংসের তিন বল বাকি থাকতেই ২৬৪ রানে অলঅউট হয় লাল সবুজ জার্সিধারীরা।
এদিন বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবালকে বিশ্রামে রেখে ভারতের বিপক্ষে ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে নামেন লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। শুরুটা ভালই করেচেন তারা। কিন্তু পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে বুমরাহর বলে বোকা বনে যান সৌম্য। দশম ওভারের চতুর্থ বলে বুমরাহর বল সৌম্যর ব্যাটের কানায় লেগে দিনেশ কার্তিকের গ্লাভসে ধরা পড়ে। ২৯ বলে ৩ চার ও ১ ছয়ে ২৫ রান করেন তিনি। ভাঙে ৪৯ রানের জুটি। পরের বলেই সাকিব আল হাসানকে বোল্ড করেন ভারতীয় পেসার।
৪৯ রানে ২ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়া বাংলাদেশকে খেলায় ফেরান লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম। তৃতীয় উইকেটে তারা ১১০ রানের জুটি গড়েন। এই জুটিতে জোড়া ফিফটি গড়েন লিটন ও মুশফিক।
ওপেনিংয়ে নেমে শুরু থেকেই অসাধারণ ব্যাটিং করেন লিটন। ফিফটির পর সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন এ ওপেনার। কিন্তু যুজবেন্দ্র চাহালের লেগ স্পিনে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন লিটন। তার আগে ৯০ বলে ১০টি চারের সাহায্যে ৭৩ রান করেন।
লিটন আউট হওয়ার পর উইকেটের পরিস্থিতি বুঝে ওঠার আগেই বিপদে পড়েন মোহাম্মদ মিঠুন। ঠিক পরের বলেই এলবিডব্লিউ হন এ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। যুজবেন্দ্র চাহালের কারণে রানের খাতা খোলা হয়নি মিঠুনের। এরপর ছয় নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে সুবিধা করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কুলদীপ যাদবের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন রিয়াদ।
৫ উইকেটে ২১৬ রান করা বাংলাদেশ এরপর শূন্য রানের ব্যবধানে হারায় ৩ ব্যাটসম্যানকে। দুর্ভাগ্যই বলতে হয়। ইনিংসের শুরু থেকে অসাধারণ ব্যাটিং করেও সেঞ্চুরি মিস করেন মুশফিকুর রহিম। মাত্র ১০ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন তিনি। কুলদীপ যাদবের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন মুশফিক। সাজঘরে ফেরার আগে ৯৪ বলে ৮টি চার ও দুটি ছক্কায় ৯০ রান করেন মুশফিক।
মুশফিক আউটের পর দ্রুত বিদায় নেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও সাব্বির হোসেন রুম্মন। ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গেয়ে আউট হন সৈকত। রবিন্দ্র জাদেজার বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন সাব্বির।
ইনিংসের শেষ দিকে ২৫ বলে ১৮ রান করে আউট হন সাইফউদ্দিন। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে রান আউট হয়ে মেহেদী হাসান মিরাজের বিদায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেমে যায় ২৬৪ রানে।
মঙ্গলবার (২৮ মে) ইংল্যান্ডের কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন্সে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। বেশ কিছুদিন কাভারে ঢেকে থাকায় কিছু বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে বলে ধারণা বাংলাদেশ অধিনায়কের। ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলিও টস জিতলে বোলিং নিতেন বলে জানিয়েছেন।
এদিন বৃষ্টির শঙ্কা নিয়েই বিশ্বকাপের মূল পর্ব শুরুর আগে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে মাঠে নামে টাইগাররা। মাত্র দুই বল মাঠে গড়াতেই শুরু হয় বৃষ্টি। বৃষ্টি থামার পরে আবারও খেলা শুরু হলে ভারতীয় ওপেনার শেখর ধাওয়ানকে শিকার করেন মোস্তাফিজ। নিজের দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে শেখর ধাওয়ানকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন বাংলাদেশের এই কাটার মাস্টার।
শুরুর ধাক্কা সামলাতে তৎপর হন অধিনায়ক বিরাট কোহলি আর রোহিত শর্মা। ধীরে ধীরে উইকেটে সেট হয়ে আক্রমণাত্মক হচ্ছিলেন তারা। এই পরিস্থিতিতে রুবেল হোসেনের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক মাশরাফি। আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন এই পেসার। নিজের প্রথম ওভারেই ৪২ বলে ১৯ রান করা রোহিত শর্মাকে শিকার করে টাইগারদের দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন রুবেল।
দুই উইকেট হারানো ভারতকে পথ দেখাচ্ছিলেন অধিনায়ক কোহলি। সতর্কতার সাথে ব্যাট চালিয়ে আস্তে আস্তে ব্যাক্তিগত অর্ধশতকের দিকে এগোচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু মাত্র ৩ রান দুরে থাকতে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের শিকার বনে সাজঘরে ফিরতে বাধ্য হন কোহলি। বোল্ড হয়ে ফেরার আগে ৪৬ বলে ৪৭ রান করে ভারত অধিনায়ক।
দলীয় ১০২ রানে ভারতের চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটান রুবেল হোসেন। এই পেসারের বলে উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে ক্যাচ তুলে দিয় ফেরেন বিজয় শঙ্কর। এরপর লোকেশ রাহুলের সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। সেঞ্চুরি তুলে নেন রাহুল। ধোনির সাথে ১৬৪ রানের জুটি গড়ে সাব্বির রহমানের শিকার হয়ে বিদায় নেয়ার আগে ৯৯ বলে ১০৮ রান করেন রাহুল।
সাত নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকান হার্দিক পান্ডিয়া। ১১ বলে ২১ রান করা পান্ডিয়াকে সাব্বিরের ক্যাচে পরিনত করেন সাকিব আল হাসান। তবে পান্ডিয়া বিদায় নিলেও ব্যাটিং তাণ্ডব অব্যাহত রাখেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। আবু জায়েদ রাহীকে ছক্কা হাঁকানোর মধ্য দিয়ে ৭৩ বলে শতরানের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছান ধোনি। ইনিংস শেষ হওয়ার চার বল আগে সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন ধোনি। তার আগে ৭৮ বলে ৮টি চার ও ৭টি ছক্কায় ১১৩ রান করেন ধোনি।
শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩৫৯ রান সংগ্রহ করে ভারত। বাংলাদেশের পক্ষে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন রুবেল আর সাকিব। একটি করে উইকেট মোস্তাফিজ, সাইফউদ্দিন আর সাব্বির রহমানের।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: