মেলবোর্নে বাংলাদেশি পিঠা উৎসব
প্রকাশিত:
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:২৭
আপডেট:
৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:৩৯
শীতের সকাল, ঘন কুয়াশায় ঢাকা আকাশ, আর মায়ের হাতে গরম ধোঁয়া ওঠা পিঠার গন্ধ – এই দৃশ্যের কথা ভাবলেই যে কোনো বাঙালির মন কেমন করে ওঠে। শীতকাল আমাদের দেশের জন্য শুধু এক ঋতু নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আর শেকড়ের গভীরে প্রোথিত একটি স্মৃতিময় সময়। শীতের পিঠা তারই অংশ, যা আমাদের প্রতিটি বাঙালির জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে। বিদেশের মাটিতে বাংলার শীতের এই সুস্বাদু ঐতিহ্যগুলোকে তুলে ধরতে পিঠা উৎসব যেন আমাদের শিকড়ে ফিরে যাওয়ার এক মহামিলনস্থল হয়ে উঠেছে।
এবার মেলবোর্নে আয়োজন করা হয়েছে বাংলাদেশি শীতকালীন পিঠা উৎসবের, যেখানে প্রবাসী বাঙালিরা নিজেদের সংস্কৃতির এই বিশেষ অংশটিকে স্মরণ করতে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতে একত্রিত হয়েছেন। বিদেশের মাটিতে বাংলার শীতের এই সুস্বাদু ঐতিহ্যগুলোকে তুলে ধরতে পিঠা উৎসব যেন আমাদের শিকড়ে ফিরে যাওয়ার এক মহামিলনস্থল হয়ে উঠেছে।
প্রতিবছর শীত আসলেই ছোটবেলার স্মৃতিতে ভাসতে থাকেন প্রবাসী বাঙালিরা। গ্রামের বাড়ির উঠোনে পিঠা বানানোর সেই আনন্দময় মুহূর্তগুলো, মাটির চুলায় পোয়া পিঠার ঘ্রাণ, নারকেল আর খেজুরের গুড় মিশিয়ে তৈরি চিতই বা ভাপার স্বাদ— সব যেন জীবনের সোনালি দিনগুলোকে মনে করিয়ে দেয়। আজ (৯ সেপ্টেম্বর) মেলবোর্নের পিঠা উৎসবে সেই একই অনুভূতির ঝলক দেখা যায়। প্রতিটি স্টলে সাজানো বিভিন্ন ধরনের পিঠা, যেমন পুলি পিঠা, ভাপা পিঠা, পাটিসাপটা, চিতই পিঠা – সব যেন আমাদের ফেলে আসা গ্রামবাংলার সাথে যোগসূত্র স্থাপন করছে।
এই পিঠা উৎসব শুধু একটি মেলা নয়, এটি আমাদের শেকড়ের সাথে সংযোগের এক আবেগঘন মুহূর্ত। প্রবাসে থেকেও আমরা আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাই না। মেলবোর্নের এই পিঠা উৎসব তাই আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, দূরে থাকলেও, বাংলার মাটি আমাদের হৃদয়ে সবসময়ই বেঁচে থাকে।
অনেকেরই শৈশবে শীতের পিঠা উৎসবের স্মৃতিগুলো হারিয়ে যায়, কিন্তু এই উৎসব সেই স্মৃতিকে ফিরিয়ে আনে, তৈরি করে নতুন প্রজন্মের জন্যও। ছোট ছেলেমেয়েরা মেলার বিভিন্ন স্টলে পিঠার সাথে পরিচিত হচ্ছে, শিখছে কীভাবে আমাদের মা-দাদীরা শীতের সকালে এই পিঠা তৈরি করতেন। শুধু খাওয়া নয়, পিঠা তৈরির এই প্রক্রিয়াটিও আমাদের সংস্কৃতির অংশ, যেটি আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলমান। মেলবোর্নে শীতকালীন পিঠা উৎসব তাই আমাদের জন্য শুধু একটি খাবারের মেলা নয়, এটি আমাদের স্মৃতির আঙ্গিনায় একটি আবেগঘন ভ্রমণ। এটি আমাদের শেকড়ের প্রতি সম্মান, আমাদের সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে আমাদের ঐতিহ্যকে তুলে ধরার এক অনন্য প্রয়াস।
উৎসবে উল্লেখযোগ্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জুলিয়ান হিল, এমপি এবং ফেডারেল সহকারী মন্ত্রী (নাগরিকত্ব এবং বহুসাংস্কৃতিক বিষয়ক), এবং ব্র্যাড ব্যাটিন এমপি এবং ছায়া মন্ত্রী (পুলিশ ও ইয়ুথ জাষ্টিস)। তাঁদের উপস্থিতি উৎসবটিকে আরও বিশেষত্ব দেয়। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক খেলোয়াড় আমিনুল ইসলাম বুলবুল অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল, একটি জরুরি কারণে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি।
এই পিঠা উৎসবটি শুধু বাঙালি ঐতিহ্য উদযাপনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; এটি সাম্প্রতিক বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় তহবিল সংগ্রহের একটি উদ্যোগেও রূপান্তরিত হয়। অনুষ্ঠানে স্কুল এক্সিকিউটিভ সদস্য এবং বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সমাজকর্মী ড. আহমেদ শরীফ শুভ অস্ট্রেলিয়া সরকারের বাংলাদেশি বন্যা দুর্গতদের জন্য ১.৮ মিলিয়ন ডলারের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সকলকে ত্রাণ তহবিলে অবদান রাখার জন্য আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন আমরানুল হক ও সালমা জাহান, যাঁরা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: