সিডনী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১

পর্যটন খাতে বিশেষ প্রণোদনার দাবী বাংলাদেশ ট্যুরিজম এক্সপ্লোরারস অ্যাসোসিয়েশনের


প্রকাশিত:
৩১ মার্চ ২০২০ ০৪:৪৯

আপডেট:
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:২৪

ফাইল ছবি

প্রভাত ফেরী: করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় অন্যান্যদের মতই প্রণোদনা চায় বাংলাদেশ ট্যুরিজম এক্সপ্লোরারস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিইএ)। সংগঠনের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সাগর পর্যটন খাতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বেতনভাতাদি প্রদান করে এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তার জন্য ৬ প্রণোদনার প্রস্তাব করেন।

এগুলো হচ্ছে- ট্যুর অপারেটরদের তিন মাসের অফিস ভাড়া ও কর্মচারীর বেতনের ব্যবস্থা করা, পর্যটন স্পট নির্ভর প্রান্তিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের এককালীন আর্থিক সহায়তা প্রদান, পর্যটন শিল্পে যেসব লোন আছে ছয় মাসের কিস্তি মওকুফ, স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে নতুন লোন প্রদান করা, যুব উন্নয়ন অধিদফতরের মাধ্যমে অনলাইন ট্যুর অপারেটরদের বিনা সুদে লোন প্রদান ও প্রশিক্ষণের সুবিধা প্রদান এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ইভেন্ট ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং করানো।

গোটা বিশ্ব আজ করোনাভাইরাস সমস্যার সম্মুখীন। স্থবির হয়ে গেছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। শিথিল হয়ে গেছে বিশ্ব অর্থনীতি। ক্ষমতাশালী দেশগুলোও হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে এই সংকট মোকাবেলায়। দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। এই মহা-দুর্যোগ দিনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সংকট মোকাবেলার জন্য যে অসীম ধৈর্য, সাহস ও দৃঢ়তার সাথে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে শুনিয়েছেন আশার বাণী, দিয়েছেন দিকনির্দেশনা ও করণীয়।

ঘোষণা করেছেন দুর্যোগ মোকাবেলায় সাধারণ জনগণ ও ব্যবসায়ীদের জন্য সুবিধা প্যাকেজ। পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ৫ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ ঘোষণা করেছেন। কিন্তু করোনা যুদ্ধ প্রথম যেই ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে আঘাত হেনেছে তাহলো পর্যটন। সারা বিশ্বে প্রথমত বন্ধ করা হয়েছে এয়ারলাইন্স, তার প্রভাবে বন্ধ হয়ে পড়েছে হোটেল, রিসোর্ট, ক্রুজ লাইন, রেস্টুরেন্ট ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ট্যুর অপারেটর ও ট্রাভেল এজেন্সি। বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে পর্যটন শিল্প।

‘দ্যা ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল’ ধারণা করছে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পরায় ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পে বিশ্বব্যাপী ৫ কোটি লোক তাদের চাকরি হারাবে। এশিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শেষ হয়ে গেলেও, শিল্পটি পুনরুদ্ধারে ১০ মাস পর্যন্ত সময় নিতে পারে।

দ্যা ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম ফোরাম ইনস্টিউটের প্রধান বুলেট বাগসি বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বব্যাপী পর্যটন শিল্প ১ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, জিডিপিতে পর্যটনের অবদান ১০শতাংশ। বিশ্বব্যাপী পর্যটন বাজার বছরে গড়ে ১ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার আয় করে এবং ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষতি ৬০০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে যা বছর শেষ হতে হতে ১ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশও এই ক্ষতির বাইরে নয়। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রথমেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বিমান চলাচল ও দেশের সকল পর্যটন কেন্দ্র। যেখানে শুধুমাত্র রিসোর্ট মালিকগণেরই এই শিল্পে বিনিয়োগ প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা।

এছাড়াও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ও পর্যটন নির্ভর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিনিয়োগের যোগফল হবে আরো বেশি। শুধুমাত্র রিসোর্ট সমূহেই প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ লোক প্রত্যক্ষভাবে কর্মরত এছাড়াও পর্যটন শিল্পের অন্যান্য শাখায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মরত প্রায় ৪০ লাখ লোক। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবন জীবিকা হুমকির মুখে।

অন্যান্য শিল্প দুর্যোগ কেটে যাওয়ার পরপরই উৎপাদন শুরু করতে অথবা গতিশীলতায় আসতে পারলেও তেমনটির সম্ভাবনা নেই পর্যটন শিল্পে। পুনরায় পর্যটন শিল্পের গতি ফিরতে সময় লাগবে বছর খানেকেরও বেশি। এখনই পরিকল্পনা না করলে, সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী এই আপদকালীন সময় সরকারি প্রণোদনা না পেলে, বন্ধ হবে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, চাকরি হারাবে অনেক কর্মচারী। দেশে বেকারত্ব বাড়বে।

আর তাই এই খাতটিকে টিকিয়ে রাখতে হলে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি প্রয়োজন এবং এ খাতে প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা করা জরুরি বলে মনে করছে বিটিইএ।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top