সিডনী মঙ্গলবার, ১৯শে মার্চ ২০২৪, ৫ই চৈত্র ১৪৩০


নিউজিল্যান্ডে প্রবাসী বাংলাদেশিদের  ঈদ উল আজহা পরবর্তী মিলনমেলা পটলাক


প্রকাশিত:
৩ আগস্ট ২০২০ ২৩:২১

আপডেট:
৮ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:৪৫

ছবিঃ পামারস্টোন নর্থে প্রবাসী বাংলাদেশীরা

 

রিপোর্টঃ মু: মাহবুবুর রহমান, নিউজিল্যান্ড থেকে

পট লাক (Pot Luck), একটি ইংরেজি শব্দ। বাংলাদেশে যতদিন ছিলাম ততদিন এ শব্দের সঙ্গে পরিচিত ছিলাম না। বিদেশভূমে এসে প্রথমে পরিচিত হলাম এ শব্দের সঙ্গে, আর ২রা আগস্ট ২০২০ খ্রি: তারিখে যোগদান করলাম পট লাক ডিনার এ। বাংলাদেশে পড়াশুনা শেষ করে সরকারি চাকুরিই করলাম ১৯ বছর আর আর এ দীর্ঘ সময়ে যেহেতু পট লাক শব্দটির সঙ্গে পরিচয় হয়নি তাই এর ইতিহাস নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে দেখলাম আমি না জানলে কী হবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এ শব্দটির সঙ্গে বেশ পরিচিত।

আর প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাথে আলোচনা করে যেটুকু বুঝলাম, পট লাক মানে হলো আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় দলবেঁধে খেতে গেলে কোনো কোনো খাবার পার্টি ছিল হিজ হিজ হুজ হুজ (His His Whose Whose) অর্থাৎ যার যার বিল সে সে দেবে, আর তেমনই একধরণের পার্টি হলো পট লাক। পার্থক্য হলো হিজ হিজ হুজ হুজ পার্টিতে খাবার কিনে খেতে হয় আর পট লাক পার্টিতে সবাই বাসা থেকে খাবার নিয়ে আসেন।

তবে একটু ঝামেলা আছে আমার মতো যারা মেরিড ব্যাচেলর (Married Bachelor) কিংবা যারা আসলেই ব্যাচেলর তাদের তো রান্না করে খাবার আনা কষ্টের, কিংবা তাদের রান্না করা খাবার খাওয়ার উপযোগী কিনা সে প্রশ্ন থেকেই যায়, তাদের কী হবে? তাদের জন্য পট লাক পার্টিতে যোগদানের শর্ত হলো খাবার খাওয়ার সামগ্রী যেমন প্লেট, গ্লাস, কিংবা কোক, স্প্রাইট, জুস নিয়ে পার্টিতে যোগদান করা। যেমন এবারের পট লাক পার্টিতে আমার ওপর বর্তে ছিলো কোক, স্প্রাইট, জুস সরবরাহ।

পট লাক শব্দের ইতিহাস ঘেটে যেটুকু জানলাম তা হলো ১৫৯২ সালে থমাস নাস (শেক্সপিয়র এর আমলের লেখক) তাঁর একটি নাটকে (নাটকের নাম “Summer’s Last Will and Testament,”)  সর্বপ্রথম পট লাক শব্দটি ব্যবহার করেন। আবার অনেকের মতে, পট (Pot) অর্থাৎ পাত্র বা পাতিলে আনা খাবারের স্বাদ অজানা বলে অনেকটা লাক (Luck) বা ভাগ্যের ওপর নির্ভর করছে আপনার প্লেটের খাবারের স্বাদ কী রকম হবে। আর তাই এ আয়োজনকে পট লাক বলা হয়ে থাকে। অনেকে এটাকে আবার ‘ওয়ান ডিশ পার্টি'ও বলে থাকেন। কারণ পট লাক পার্টিতে  প্রতি পরিবার থেকে একটা খাবার বানিয়ে এনে একজনের বাসায়, কমিউনিটি হল কিংবা মোটেল ভাড়া করে সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করা হয়।

এবার আসি আমাদের এবারের করোনা পরবর্তী পট লাক পার্টির আলোচনায়। করোনা চলে যাবার পর নিউজিল্যান্ডে এখন সব কিছুই আগের মতো, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিকমতো ক্লাস চলছে, অর্থনীতির চাকা ঠিকমতো ঘুরছে, শুধুমাত্র বন্ধ আছে বিদেশিদের জন্য নিউজিল্যান্ডে প্রবেশ। এদিক থেকে লেখক নিজেকে ভাগ্যবানই মনে করেন কারণ তিনি নিউজিল্যান্ডে আসার মাত্র এক সপ্তাহ পরে নিউজিল্যান্ড বর্ডার বন্ধ করে দেয়া হয় যা এখনো অব্যাহত আছে।

ছবিঃ পামারস্টোন নর্থে প্রবাসী বাংলাদেশীরা

নিউজিল্যান্ডে ঈদ উল আজহা অনুষ্ঠিত হয় ১লা আগস্ট আর পট লাক পার্টির আয়োজন করা হয় ঈদের পরের দিন, ২রা আগস্ট। স্থানীয় একটি কমিউনিটি হলে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে সবাই তাদের বাসায় তৈরি পছন্দের খাবার নিয়ে হাজির হন। টেবিলে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয় খাবার। নানান সব্জী, নানান ভর্তা, বিভিন্ন সালাত, মাছ, গরুর মাংস, মুরগীর মাংস ছিলো, আর ভেড়ার মাংসের জন্যতো নিউজিল্যান্ড বিখ্যাত। আয়োজনে ডেসার্ট আইটেমের কথা আর নাইবা বললাম। পিঠা-পায়েস এবং দেশী খাবারের সুঘ্রানে মনে হচ্ছিল আমরা বাংলাদেশের কোনো বাড়ির আঙ্গিনায়  কিংবা ছাদে ফিরে গিয়েছি আবার। যার যেটা পছন্দ, সেটা নিজে নিজে নিয়ে খাওয়া হলো এ পার্টির বৈশিষ্ট্য। আর খাবারের স্বাদ নেয়ার সাথে সাথে নিজ ভাষা, বাংলায় কথা বলার স্বাদ, আড্ডাবাজি তো ছিলোই। আর সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো ছিল ছোট ছোট বাচ্চাদের হৈ হুল্লোড়।

সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিয়ে এসেও বাংলাদেশের খাবার সংস্কৃতির সফল আয়োজন এ পট লাক। যাকে শুধু খাবার আয়োজন বললে ভুল হবে এটা ছিলো নিউজিল্যান্ডের পামারস্টোন নর্থে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের গেট টুগেদার বা মিলনমেলা। দূর পরবাসে জীবিকা কিংবা পড়াশোনার প্রয়োজনে আমাদের ছুটে চলা। সেখানে পট লাকের মাধ্যমে একত্রিত হবার আনন্দ যেন সব কিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলো এদিন। জয় হোক ঈদ উল আজহা পরবর্তী পট লাক বা মিলন মেলার, অটুট থাকুক এ বন্ধন। ঈদ মোবারক।

 

মু: মাহবুবুর রহমান
পি এইচ ডি গবেষক,  মেসি ইউনিভার্সিটি, নিউজিল্যান্ড

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top