সিডনী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১


সিডনিতে 'বাঙালির পার্বণ' শীর্ষক উৎসব : মোঃ ইয়াকুব আলী


প্রকাশিত:
৩ আগস্ট ২০২২ ০০:৫৭

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৫৮

 

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বাংলাদেশীদের বর্ধিঞ্চু অঞ্চল এখন বৃহত্তর ক্যাম্বেলটাউন এলাকা। পূর্বে গ্লেনফিল্ড থেকে শুরু করে ম্যাকুয়ারিফিল্ড, ঈংগেলবার্ণ, মিন্টো, লুমিয়া, ক্যাম্বেলটাউন এবং ম্যাকার্থার অঞ্চলে এখন অনেক বাংলাদেশী বসবাস করেন। যার ফলে অত্র অঞ্চলে এখন বহু বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তার মধ্যে একদিকে যেমন আছে বাংলাদেশী মুদির দোকান এবং রেস্তোরাঁ তেমনি অপরদিকে আছে রিয়েল এস্টেট এবং কনস্ট্রাকশন ফার্ম। এমনকি গড়ে উঠেছে বাংলাদেশী মালিকানাধীন বহু শ্যাডো এডুকেশন প্রতিষ্ঠান যাদেরকে আমরা সহজ ভাষায় বলি কোচিং সেন্টার। এইসব সুবিধার কথা মাথায় রেখে অন্যান্য অঞ্চল থেকে বহু বাংলাদেশী অত্র এলাকার বিভিন্ন সাবার্বে বাড়ি কিনে স্থায়ী হয়েছেন।

এসব এলাকায় এখন সপ্তাহান্তের দিনগুলোতে বাংলাদেশী রেস্তোরাঁগুলো মুখরিত হয়ে ওঠে বাঙালিদের পদচারণায়। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস শুক্রবার বিকেল থেকেই রেস্তোরাঁগুলোতে ভীড় বাড়তে থাকে। যারা রেস্তোরাঁয় আসতে পারেন না তারাও টেক-এওয়ে নিয়ে বাসায় ফিরে সবাই একসাথে বসে খাবারের স্বাদ একটু বদলে নেন। এছাড়াও সারাবছর ব্যাপি চলে বিভিন্ন উৎসব। বাংলাদেশের জাতীয় দিবসগুলো ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাক্তি বা সংগঠনের পাশাপাশি রেস্তোরাঁগুলোও বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করে থাকে। বিশেষ করে রোজার সময় রেস্তোরাঁগুলোতে গেলে মনেহয় যেন আমরা পুরনো ঢাকার চকবাজারে চলে এসেছি। এছাড়াও বাংলাদেশের পঞ্জিকা অনুযায়ী যেসব উৎসব চলে সেগুলোও আয়োজন করা হয়। বর্তমানে এখানে চলছে শীতকাল।

আর এই শীতকালকে সামনে রেখে আয়োজন করা হচ্ছে পিঠা উৎসবের বা পিঠা মেলার। নাম যেটাই হোক বিভিন্ন প্রকারের বাহারি পিঠার স্বাদ নিতে পারা যায় এই উৎসবগুলোতে। গত ২৪শে জুলাই ২০২২ রোজ রবিবার মিন্টোর খাদেম ডাইন এবং ক্যাটারিঙে আয়োজন করা হয় 'বাঙালির পার্বন' নামে এমনই একটি উৎসবের। এই উৎসবটা অন্য আর দশটা উৎসবকে ছাড়িয়ে যায় এর নান্দনিক সজ্জা এবং মুখরোচক বিভিন্ন পদের উপস্থানের মাধ্যমে। এখানে খাবার হিসাবে এমন অনেক পদের অবতারণা করা হয় যেটা এখন প্রবাসে তো বটেই দেশেও হারিয়ে যেতে বসেছে। প্রচলিত খাবারের পাশাপাশি এসব ঐতিহ্যবাহী অপরিচিত খাবার প্রবাসের বাংলাদেশীদের তাদের শেকড়ের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল নিঃসন্দেহে।

তবে সবার নজর কারে এই উৎসবের দৃষ্টিনন্দন সজ্জা। সেখানে অবধারিতভাবে স্থান করে নেয় বাংলাদেশের পতাকা এবং বাংলাদেশের কৃষ্টির সব উপকরণ। কিছুই যেন বাদ যায়নি সেখানে। একেবারে বাংলাদেশের রঙিন কাগজের ফুলেল সজ্জা এবং পাখিগুলো মনেকরিয়ে দিচ্ছিল বাংলাদেশের দোকানগুলোর হালখাতার সাজ সজ্জাকে। এছাড়াও ছিলো বিভিন্ন রকমের নামাবলী অঙ্কিত চাদর। তিনটা বিভিন্ন রঙের চাদরে ছিলো শুধু খনার বচন, আর তিনটাতে ছিলো বাংলাদেশের বিভিন্ন কবির লেখা কবিতা। আরও ছিলো বাংলাদেশের বিভিন্ন পটের চিত্রায়িত কাপড়৷ ছিলো বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নক্সীকাথা। এতো গেলো কাপড়। এছাড়াও ছিলো বাংলাদেশের কুলা, ছিলো মাটির জগ থেকে শুরু করে কাপ, প্লেট এবং গ্লাস।

তবে কয়েকটা বিষয় এই আয়োজনকে পরিপূর্ণতা ও স্বকীয়তা দিয়েছিল। তার মধ্যে বাংলাদেশের টং দোকানের আদলে খাবারের ভ্যান। আর সেই ভ্যানে শোভা পাচ্ছিল বাহারি রঙের ও স্বাদের চকোলেট। আর সেগুলো বিকিকিনির দায়িত্বে ছিলো প্রবাসী দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধি। আর ছিলো হারিয়ে যেতে বসা মাটির ডুগডুগি গাড়ি। এই গাড়ির সামনে সুতো দিয়ে বেঁধে টানলে চাকা ঘুরে আর সেটার চাপে কাঠি দুটো মাটির বাটির উপরের কাগজের উপর পড়ে ঠিক ঢাকের মতো করে আর বেজে উঠে। যে যত জোরে দৌড়াতে পারে তারটা বেজে উঠে ততদ্রুত৷ এসব তো এখন বাংলাদেশের শিশুদের কাছেই স্বপ্নের সেখানে প্রবাসে এই ডুগডুগির দেখা পাওয়া নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।

আর পুরো উঠসবের সময়টা বাংলা গান ছাড়া অন্য কোন ভাষার গান বাজানো হয়নি। ব্যাকগ্রাউন্ডে বেজে চলছিল হাল আমলের জনপ্রিয় সংগীত শো কোক স্টুডিওর সব গান। এক কথায় এই আয়োজন যেন ছিলো আবহমান গ্রাম বাংলার চিরায়ত কোন উৎসব। তাই 'বাঙালির পার্বন' নামকরণ যেন স্বার্থক হয়ে উঠেছিল।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top