শিক্ষক নামের নরপশুর ভয়ংকর কাণ্ড
প্রকাশিত:
৭ মে ২০১৮ ০২:০৩
আপডেট:
৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:০৮
ক্লাস সিক্স পার হলে দুই ভাগে ছাত্রীদের বাছাই করতেন শিক্ষক রবিউল। এক. সুন্দরী আর দুই. দরিদ্র। পরে নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী বাছাই করা ছাত্রীকে বাসায় নিয়ে যেতেন পড়ালেখায় সহযোগিতার নাম করে। অার্থিকভাবে যারা অসচ্ছল তাদের জন্য থাকতো বাসায় খাবারের ব্যবস্থা।
যখন ছাত্রীর মন জয় শেষ, তখনই নিজের আসল রূপে আবির্ভূত হতেন এ শিক্ষক। ছাত্রীকে ধর্ষণ এবং সেসব দৃশ্য ভিডিও করে রাখতেন তিনি। ধারণ করা ভিডিও ফাঁসের ভয় দেখিয়েই মাসের পর মাস চালানো হতো যৌন নির্যাতন। এ চিত্র মাদারীপুরের শিবচরের উমেদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের। যেখানে গত কয়েক বছর ধরে চলছিল শিক্ষক রবিউলের এমন ধর্ষণযজ্ঞ!
৬ মে, রবিবার যমুনা টিভি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি ভুক্তভোগী এক ছাত্রী মুখ খোলার পর পালিয়ে বেড়াচ্ছেন শিক্ষক রবিউল। জানাজানি হওয়ার দেড় মাস পার হলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেউই নাগাল পাচ্ছে না তার!
সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, রবিউল ইসলাম উমেদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, একই বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির এক দরিদ্র মেধাবী ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন। সেই দৃশ্য ভিডিও করে রাখেন তিনি। পরে সুযোগ পেলেই ছাত্রীটিকে বাসায় ডাকতেন এ শিক্ষক। রাজি না হলে ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখাতেন রবিউল।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিযোগ, শারীরিক সম্পর্ক শুরুর পর থেকে একাধিকবার গর্ভপাতের ঘটনাও ঘটানো হয়। কয়েক মাস তার সাথে এভাবে চলার পর অন্য ছাত্রীদের বাসায় আনতে দেখে আপত্তি করে মেয়েটি। এক পর্যায়ে সে জানতে পারে স্কুলের আরও কয়েকজন ছাত্রীকে রবিউল একই কায়দায় সম্পর্কে জড়াতে বাধ্য করেছে।
ছাত্রীটি এ বছরের ১৩ মার্চ স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে বের হয়ে আসতে থাকে রবিউলের নানা অপকর্মর তথ্য। একাধিক মেয়ের সাথে আপত্তিকর ছবি, অডিও রেকর্ড পাওয়া যায় তার কাছে। পাওয়া গেছে ভুক্তভোগী মেয়ের সাথে ‘বরের বেশে’ তোলা ছবিও।
যমুনা টিভি অনলাইনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, একই বিদ্যালয়ের ৯ম ও দশম শ্রেণি পড়ুয়া দুই ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকেও রবিউলের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ করা হয়েছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের কাছে স্বীকারোক্তিও দিয়েছে রবিউল। পরিস্থিতি প্রতিকূলে চলে যাচ্ছে দেখে ছুটি না নিয়েই বর্তমানে পালিয়ে আছেন রবিউল।
অজ্ঞাতস্থান থেকে ফোন করে ওই ছাত্রীকে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।
ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বলেন, ‘রবিউল স্যার আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রথমে লেখাপড়ার খোঁজ-খবর নিতেন। পরে অন্য কয়েকজনের সাথে আমাকেও বাসায় নিয়ে পড়াত। আমার মতো আরও কয়েকজন সিনিয়র আপাকেও সে একই কায়দায় ফাঁসিয়েছে।
স্কুলের সুন্দরী মেয়েদের সে ৭ম বা ৮ম শ্রেণি থেকেই টার্গেট করে বিভিন্নভাবে ফুসলিয়ে এই জঘন্য কাজ করে আসছিল। ওর বিচার চাই, যাতে আর কারো ক্ষতি করতে না পারে।’
দুই বছর ধরে নির্যাতনের শিকার হওয়া ছাত্রীর অভিভাবক বলেন, ‘রবিউল শিক্ষক নামের কলঙ্ক। আমাদের সদা হাসি-খুশি মেয়েটির জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। আমরা ওর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
উমেদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোকনুজ্জামান বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে রবিউল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই পালিয়ে গিয়ে এখন ফোনে ওই ছাত্রীকে হুমকি দিচ্ছে। আমরা শিক্ষকরা পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের সাথে আলোচনা করেছি। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পারভীন বেগম বলেন, ‘ওই ছাত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্কের বিষয়টি আমরা যখন জানতে পারি তখন রবিউলকে জিজ্ঞাসা করলে আমাদের কাছে সে বিষয়টি স্বীকার করেছে। এটার সঠিক বিচার হওয়া উচিত।’
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কাদির খালাসী বলেন, ‘আমরা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। দ্রুতই অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ ব্যাপারে রবিউলের সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
মাদারীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ ব্যাপারে ছাত্রীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেব।’
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: