সিডনী সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১


কম বয়সে উচ্চ রক্তচাপের কারণ ও প্রতিরোধের উপায়


প্রকাশিত:
৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৬:৪৬

আপডেট:
২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০০:৪০

ফাইল ছবি

প্রভাত ফেরী: অনেকের ধারণা, উচ্চ রক্তচাপ শুধু বয়স্ক এবং উচ্চবিত্তের রোগ। ব্যাপারটি আংশিক সত্যি হলেও পুরোপুরি সত্য নয়। অল্প বয়সেও যে কারোর উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। কেন এ উচ্চ রক্তচাপ, তা নির্ণয় করে চিকিৎসা দেওয়া জরুরি।

কেস হিস্ট্রি
সজীবের বয়স কুড়িতে পড়ল। ‘এ’ লেভেল পাস করে আমেরিকার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য দরখাস্ত দিচ্ছে। মধ্যবিত্ত মা-বাবার সামর্থ্যরে সঙ্গে তাল মেলাতে বেশি স্কলারশিপ দরকার। কিন্তু হচ্ছে না বলে সবাই টেনশনে আছে। রাতে সজীবের ঘুমও ঠিকমতো হচ্ছে না; মাথাব্যথাও আছে এবং তা ঘুম থেকে উঠার পর বেশি হচ্ছে। মাথার পেছনের দিকে ব্যথাটা যেন একটু বেশি। সবার ধারণা, টেনশন থেকে এরকম হতে পারে। কিছুদিন প্যারাসিটামল, ঘুমের ওষুধ খেয়েও পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য তেমন উন্নতি হয়নি। রক্তচাপ পরীক্ষা করে দেখা গেল ডান বাহুতে ১৮০-১১০, বাম বাহুতে ১৭৫-১০৮ মিলিমিটার মারকারি। বারবার পরীক্ষা করে একই রকম পাওয়া গেল।

এটা খুব নিয়মিত ঘটনা না হলেও ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিসে অচিন্তনীয় কোনো ঘটনা নয়। দেখা গেল, সজীবের পা দুটি অপেক্ষাকৃত কম পেশিবহুল। পায়ের পালসও অপেক্ষাকৃত দুর্বল। সতর্কতার সঙ্গে হাতের পালস এবং পায়ের পালস পরীক্ষা করে দেখা গেল পায়ের পালস শুধু দুর্বলই নয়, তা হাতের পালসের তুলনায় কিছুটা বিলম্বে অনুভূত হচ্ছে। বুকে স্টেথোস্কোপ লাগাতেই এক ধরনের মারমার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।

জন্মগত ত্রুটি
সজীবের শারীরিক এ সমস্যা মহাধমনির একটি জন্মগত ত্রুটি। বুকের ভেতরে মহাধমনির একটি স্থান মারাত্মকভাবে সংকুচিত হলে ওই স্থানের ওপরিভাগের চাপ হার্টের নিকটবর্তী হওয়ায় অত্যধিক মাত্রায় বেড়ে যায়। শুধু তা-ই নয়, শরীরের ঊর্ধ্বাঙ্গে রক্তপ্রবাহ বেশি থাকায় স্বভাবতই তার পুষ্টি নিম্নাংশের চেয়ে বেশি হয়। তাই নিম্নাংশ অপেক্ষাকৃত কম পেশিবহুল বলে দৃশ্যমান হয়।

অন্যান্য কারণ
কম বয়সে উচ্চ রক্তচাপের অন্যান্য কারণের মধ্যে রেনাল আর্টারি চিকন হয়ে যাওয়া, ক্রনিক পাইলোনেফ্রাইটিস, কিডনি পাথর দিয়ে ইউরেটার বন্ধ হয়ে যাওয়া, থাইরয়েড হরমোনের অস্বাভাবিক কমবেশি হওয়া, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দীর্ঘদিন গ্রহণ, জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি সেবন ইত্যাদি দায়ী। সঠিক রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা নিলে নিরসন হয়, না হলে জটিলতা বাড়ে।

জটিলতা
মহাধমনির জন্মগত এই ত্রুটি যদি চিকিৎসাবিহীন চলতে থাকে, তবে দেহের ঊর্ধ্বাঙ্গের চাপ বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে ওষুধ প্রয়োগ করেও তখন আর নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না। ফলে পরে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, রেটিনোপ্যাথি হয়ে অন্ধত্ববরণ, নাক-মুখ দিয়ে ঘন ঘন রক্তক্ষরণ, হার্টের মাংসপেশি মোটা হয়ে হার্ট ফেইলিওর হওয়া এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।

চিকিৎসা
মহাধমনির জন্মগত এ ত্রুটির উপযুক্ত চিকিৎসা রয়েছে অর্থাৎ এটি একটি নিরাময়যোগ্য ব্যাধি। আশার কথা, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটি ধরা পড়লে চিকিৎসায় রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে

যায়। তবে চিকিৎসা না করালে অতিরিক্ত রক্তচাপের প্রভাবে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর অপরিবর্তনীয় ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।
প্রথমে প্রচলিত ওষুধ প্রয়োগ করে দেহের ঊর্ধ্বাঙ্গের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে হয়। এরপর সাধারণ এনজিওগ্রামের মতো পায়ের ধমনি দিয়ে একটি বিশেষ বেলুন ঢুকিয়ে তা মহাধমনির সংকুচিত অংশে স্থির করে উচ্চ চাপে সেটিকে প্রসারিত করে চিকিৎসা দিতে হয়। সেটি যাতে আবার সংকুচিত না হতে পারে সে জন্য সেখানে একটি ধাতব জাল স্থাপন করে দিতে হয়। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ২০ মিনিটের মতো সময় লাগতে পারে। এক দিন পর রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া যায়।

তবে এ চিকিৎসায় কাজ না হলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপারেশন করে এ সমস্যার সমাধান করতে হয়। চিকিৎসার পরবর্তী ফলোআপে দেখা যাবে দেহের ঊর্ধ্বাঙ্গ ও নিম্নাঙ্গের রক্তচাপের পার্থক্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। এতে মাথাব্যথাসহ অন্য উপসর্গও দ্রুত কমে আসে।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top